Ameen Qudir

Published:
2016-12-18 19:14:22 BdST

আম্মা, সালাম নেবেন, ইতি ডাক্তার বাবুল


 

ডা. উজ্জ্বল হোসেন
____________________________

ওঁরা হয়তো এখনো কাঁদে---

সকাল থেকেই বাইপোলার ডিসঅর্ডারে এ ভূগছি।
আমি খুব কল্পনাপ্রবণ একজন মানুষ। ঘুম ভাঙতেই কানে এসে পড়লো বঙ্গবন্ধুর ভাষণ।
অনেকবার শুনেছি কিন্তু সবসময়ই আমার কাছে নতুন মনে হয়।যখন শুনি তখন সেই সময়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলি। তারঁ বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তখনকার বাংলাদেশ।
হ্যা, এখন আমি স্বপ্নে।আমি সেই সময়ে।
চারিদিকে হাহাকার।অন্যায় অত্যাচার। আমাদের বাচাঁ মরার লড়াই এখন। সবার রক্ত স্পন্দনের ভাষা একটাই- আর না, অনেক হয়েছে।এবার ঘুরে দাড়ানোর পালা। সবাই একসাথে কাধে কাধ মিলিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে হবে শত্রুর মোকাবেলায়। স্বাধীন করতে হবে দেশ। বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে।
আর অবশেষে বিজয়।

হ্যাঁ আজকে মহান বিজয় দিবস। মনও হাসছে বিজয়ের হাসি। আমরা এই দিনটির মাধ্যমেই পেয়েছি বিজয়। এই স্বাধীণতার জন্য কত মহান মহান মানুষ প্রাণ দিয়েছেন তার কোন ইয়ত্তা নেই। অথচ তাদের কথা আমরা মনেই রাখিনা।
তাহলে কি আমরা অকৃতজ্ঞ?

যদি তাদের প্রাণের মূল্য বুঝতাম,স্বাধীণতার মূল্য বুঝতাম তাহলে আমরা কখনই নিজেদের বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করে একে অপরের সর্বণাশ করতাম না।
প্রত্যেক পেশার মানুষের অবদানেই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ।তেমনি আমাদের ডাক্তারী পেশার অনেক মহান মানুষ আছেন যাদের রক্তের বিনিময়ে এই প্রাণের দেশ।
এখন আপনাদের একাত্তর সালের একটি গা শিউরে উঠা চিঠি শেয়ার করবো। এটা আমার মেডিকেল কলেজের (রাজশাহী মেডিকেল কলেজ) শেষ বর্ষের ছাত্র মহান মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুন্নবীর নিজের হাতে লেখা চিঠি।
পড়ুন আর হারিয়ে যান সেই একাত্তর সালে যেখান একজন হবু ডাক্তার লিখছেন তাঁর মাকে, মনের অনেক কথা------

২৯শে মার্চ, রাজশাহী ১৯৭১
আম্মা, সালাম নেবেন।
আমি ভাল আছি এবং নিরাপদেই আছি। দুশ্চিন্তা করবেন না। আব্বাকেও বলবেন। দুশ্চিন্তা মনঃকষ্টের কারণ ছাড়া আর কোন কাজে আসে না। এখানে গতকাল ও পরশু পুলিশ বনাম আর্মির মধ্যে সাংঘাতিক সংঘর্ষ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত আমরা জিততে পারিনি।
রাজশাহী শহর ছেড়ে লোকজন সব পালাচ্ছে। শহর একদম খালি। মিলিটারি কামান ব্যবহার করছে। ২৫০ জনের মত পুলিশ মারা গিয়েছে। ৪ জন আর্মি মারা গিয়েছে মাত্র। রাজশাহীর পরিস্থিতি এখন আর্মি আওতাধীন রয়েছে। হাদী দুলাভাই ভালো আছেন। চিন্তার কারণ নেই। দুলি আপার খবর বোধহয় ভালোই। অন্য কোথায় যেন আছেন। আমি যাইনি সেখানে।
পুষ্প আপা সমানে কান্নাকাটি করে চলেছেন ঢাকার ভাবনায়। ক’দিন আগে গিয়েছিলাম। ধামকুড়িতে বোধহয় উনার মা আছেন। সম্ভব হলে খবর পৌছে দেবেন। আমার জন্য ব্যস্ত হবেন না। যেভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে সেখানে আমাদের বেঁচে থাকাটাই লজ্জার। আপণাদের দোয়ার জোরে হয়ত মরব না। কিন্তু মরলে গৌরবের মৃত্যুই হতো। ঘরে শুয়ে শুয়ে মরার মানে হয় কি?
এবার জিতলে যেমন করে হোক একবার নওগাঁ যেতাম। কিন্তু জিততেই পারলাম না। হেরে বাড়ি যাওয়া মানে তো পালিয়ে যাওয়া। পালাতে বড্ড অপমান বোধহয়। হয়ত তবু পালাতেই হবে। আব্বাকে ছালাম। দুলুরা যেন অকারণ কোন রকম রিস্ক না নেয়। আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বললাম কথাটা। তাতে শুধু শক্তি ক্ষয়ই হবে।
দোয়া করবেন

ইতি, বাবুল।

১লা অক্টোবর ১৯৭১ সালে এই মহান যোদ্ধাকে পাকিস্তানি বাহিনী আটক করে শহীদ জোহা হলে নিয়ে যায়। তারপর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
সূত্রঃ একাত্তরের চিঠি।

হ্যালো, আপনি কি শুনছেন? হ্যাঁ আপনাকে বলছি। আপনি কি ভাবতে পারছেন আমরা কেমন অদম্য জাতি!
তাহলে দেশকে এগিয়ে নিতে আপনি কি করছেন? আমরা তো পিছিয়ে পড়তে শিখিনি! তাহলে কেন ঘুষ নিয়ে মেধাবীদের ঠকাচ্ছেন? কেন অন্যায় চেয়ে চেয়ে দেখছেন? দেশের হাল ধরবে কে?
যারাঁ প্রান দিয়ে গেল আপনার স্বাধীণতার জন্য, তাদের কাছে আপনার কোন দায় নেই?
বড় বড় চেয়ারে বসে আছেন স্বাধীন দেশে,
আপনাকে তো প্রাণ দিতে বলা হয়নি!
শুধু ন্যায়ের সাথে থাকেন।
আপনি কি বুঝতে পারছেন ওঁরা কাদঁছে?
আমরা কি পারবো না, ওঁরা প্রান দিয়ে যে স্বপ্ন বুনে গেছে তার বাস্তবায়ন করতে?
সময় যে অনেক পেড়িয়েছে।
আসুন না অন্তত তাঁদের প্রাণের মূল্য দেই।
তাহলেই গড়ে উঠবে কাঙ্খিত সোনার দেশ।
দেখবেন স্টিকার মেরে, প্রো পিক পরিবর্তন করে তখন বুঝাতে হবে না আমরা বাঙালী।
পৃথিবী এমনিতেই চিনে নিবে- ওরা বাঙালী, ওরা সোনার বাংলার সন্তান ।

_____________________________

 

লেখক ডা. উজ্জ্বল হোসেন । Medical Officer, Ministry of Health and Family Welfare

আপনার মতামত দিন:


প্রিয় মুখ এর জনপ্রিয়