Ameen Qudir

Published:
2018-02-17 16:26:20 BdST

এমন মহিয়সী মা থাকলে তার সন্তান মানবসেবী ডাক্তার হয়ে সবার মুখ উজ্জ্বল করবেই 


 

 


আলতাফ হোসেন

_______________

এমন মা থাকলে তার সন্তান মানবসেবী ডাক্তার হয়ে সবার মুখ উজ্জ্বল করবেই । এই মাকে লাখো কোটি শ্রদ্ধা। সাধনা বড় ডাক্তার হতে চলেছে। সবই সম্ভব হয়েছে কামলা খাটা অক্লান্ত পরিশ্রমী মায়ের জন্য।
মায়ের শরীরের রক্ত জল করা পরিশ্রমে খুলনার আদ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন মেধাবী সাধনা বিশ্বাস। সাধনা জানান, চলতি বছরে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হওয়ার চান্স পান তিনি। তাকে মেডিকেলের দোরগোড়ায় টেনে নিয়ে এসেছেন তার মা জননী। তার জন্য কত পরিশ্রম করেছেন তিনি। শ্রমিকের কাজ করেছেন। শ্রম দিয়েছেন। সেই মায়ের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। অর্থের অভাবে তার স্বপ্ন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল। তার মা মায়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নে পাশে এসে দাঁড়ায় আদ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজও।

সাধনা বলেন, বাবার অকাল মৃত্যুর পর মা হাল ধরেন সংসারের। গ্রামে ঝিয়ের কাজ তেমন একটা না থাকায় মা পরের জমিতে কামলা খেটে সংসার চালান। আমার লেখা-পড়ার খরচ যোগার করেন। মায়ের অনেক কষ্টের ফসল আজকে আমি মেডিকেলের ছাত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমি চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। যেন কেউ আমার বাবার মতো বিনা চিকিৎসায় মারা না যান। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিলো, ডাক্তার হবো’।

এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া সাধনার মেডিকেলে মেধাক্রমে অবস্থান ছিল ৬৪৫৪। তিনি বলেন, মায়ের সর্বশক্তি দেয়া অদম্য পরিশ্রমে পাওয়া সব সাফল্য যখন মাটির সাথে মিশে যাচ্ছিল তখন আদ-দ্বীন আমাকে মেধাবী ও দারিদ্র কোঠায় পড়ার সুযোগ করে দেয়। আমি তাদের কি বলে কৃতজ্ঞতা জানাবো তার ভাষা আমার জানা নেই।

সাধনা বলেন, সরকারি মেডিকেলে চান্স না পেয়ে ভেবেছিলাম আমার মায়ের পক্ষে তো বেসরকারি মেডিকেলে পড়ার খরচ চালানো সম্ভব হবে না। আমার স্বপ্ন বুঝি আর পূরণ হল না।

 

সাধনার মা উল্লাসী বিশ্বাস জানান, ইন্টার মিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষার সময় সাধনার বাবা মারা যায়। ওর মাত্র তিনটি পরীক্ষা হয়েছিলো তখন। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। তারপরও মেয়েটি সেই শোক সামলে ভালো রেজাল্ট করে। কিন্তু অর্থের অভাবে মেয়ের ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা পূরণ হচ্ছিলনা। যারা তার মেয়েকে ডাক্তার হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে তাদের প্রতি তিনি চির কৃতজ্ঞ।

মহিয়সী মা উল্লাসী বিশ্বাস তার নিজ ভাষায় বলেন, ‘কষ্ট কইরে মমেয়েডারে মানুষ কইরেছি। তার একটা সুযোগ-সুবিধা অইছে, ভালো লাগছে। নিজের সামান্য জমি আছে। তাতি এক ফসল হয়। দুইডা গরু আছে। মেয়ের পড়া-লেহার খরচ চালাতি অন্যের জমিতে কামলার কাজ করি। মাঠে-ঘাটে কাজ কইরে টুকটাক দিন চইলে যায়’।

আদ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. পরিতোষ কুমার রায় বলেন, দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের আসনসংখ্যা সীমিত। একারণে অনেকেরই সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় না। সে স্বপ্ন পূরণ করছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো। কিন্তু বেসরকারি মেডিকেল কলেজের খরচ বেশি হওয়ায় অনেকের পক্ষে তা বহন করা সম্ভব নয়। আদ-দ্বীন অনেক কম খরচে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করছে। যাদের পক্ষে সে খরচ দেওয়াও সম্ভব নয় এমন দরিদ্র মেধাবীদের বিনামূল্যে পড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। তাদের মধ্যে একজন সাধনা বিশ্বাস।

আপনার মতামত দিন:


প্রিয় মুখ এর জনপ্রিয়