Ameen Qudir
Published:2018-02-09 19:32:12 BdST
ক্ষমা করো বাবা, তুমি বেঁচে থাকতে কখনও বলতে পারি নি তোমাকে কত ভালবাসি
ডা. কামরুল হাসান সোহেল
___________________________
আমাদের গ্রামের বাড়ি আখাউড়া উপজেলার বরিশল গ্রামে, মুক্তিযুদ্ধের সময় আখাউড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল ছিল,২ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। আব্বা তখন ময়মনসিংহ গণপূর্ত অধিদপ্তরে চাকুরিরত ছিলেন। সরকারী চাকরিতে জয়েন করেছিলেন খুব বেশি দিন হয়নি তবু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ ই মার্চ যখন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেন তখন কর্মস্থল ছেড়ে বাড়িতে চলে এসেছিলেন।
২৫ শে মার্চ পাক হানাদার বাহিনী যখন এই দেশের নিরীহ মানুষের উপর হামলে পরে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে তখন বঙ্গবন্ধু তাকে গ্রেফতারের পূর্বমুহুর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সারা দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদারদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন। কসবা-আখাউড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল বিশেষ করে আখাউড়া রেল জংশনের জন্য।পাকবাহিনী চলে আসে আখাউড়ায়, শুরু হয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের খোজ, তাদের খোজে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করা হতো আর এই কাজে সাহায্য করত স্থানীয় রাজাকার, শান্তি কমিটির লোকজন। কত বাড়ি যে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে,কত মেয়ের যে ইজ্জত হরণ করেছে তারা। কসবার দরুইনে সম্মুখ সমরে শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল।
আব্বা জীবনের মায়াই হোক বা ছেলে মেয়েদের মায়াই হোক সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি কিন্তু আমাদের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের খাইয়েছিলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকবাহিনীর অবস্থানের খবর মুক্তিবাহিনীর কাছে পৌঁছেছিলেন।মুক্তিযুদ্ধে আব্বার অবদান এতটুকুই ছিল।
যুদ্ধ শেষ হল দেশ স্বাধীন হল, মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাভুক্ত করতে বলা হল। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তাদের অনেকেই নাম তালিকাভুক্ত করেছেন,অনেকেই করেননি কিন্তু সুযোগসন্ধানীরা ঠিকই তাদের নাম লিখিয়েছিল। এম এ জি ওসমানীর স্বাক্ষর করা খালি ফরমে নাম,ঠিকানা লিখে জমা দিয়ে কতজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেল তখন।আব্বাকে বলা হল নাম তালিকাভুক্ত করতে আব্বা বলল আমি তো মুক্তিযুদ্ধ করিনি আমি তো শুধু সহযোগিতা করেছি মাত্র আমি কেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম লিখাব?এত সরল ছিলেন আমার আব্বা। আব্বাকে পরে "সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা" হিসেবে একটি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছিলেন মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত। "সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা" এই সনদ বাংলাদেশে আর কারো আছে কি না আমার জানা নেই।
আমার আব্বা গত ০৯/০১/১৮ ইং, মঙ্গলবার, রাত ৭:৩০ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন। আব্বা তোমাকে কখনো বলা হয়নি তোমাকে কতটা ভালোবাসি, কতটা শ্রদ্ধা করি। আজ তোমাকে খুব মিস করছি আব্বা, তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি। ওপারে ভাল থেক তুমি, অনেক অনেক ভাল।
_____________________________
ডা. কামরুল হাসান সোহেল
আজীবন সদস্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ , কুমিল্লা জেলা।
কার্যকরী সদস্য স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
আজীবন সদস্য,বিএমএ কুমিল্লা।
সেন্ট্রাল কাউন্সিলর, বিএমএ কুমিল্লা
আপনার মতামত দিন: