Ameen Qudir
Published:2016-12-27 17:40:01 BdST
চিকিৎসায় কুসংস্কারফুঁ মেডিসিন : পানি পড়ায় পুত্র সন্তানের টোপ
ডাঃ মোবাশ্বের আহমেদ নোমান
___________________________________
পরিচিত এক ভাই কে একদিন বললাম ভাবির তো প্রেগন্যান্সির শেষের দিকে মনে হচ্ছে। বাচ্চার পজিশন আর গ্রোথ কেমন আছে দেখার জন্য একটা আল্ট্রাসনোগ্রাম করাও।
ভাই বলল....
না ভাই আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে সমস্যা আছে।
কি সমস্যা?
তুই বুঝবি না।
ভাইয়ের দুই টা মেয়ে এবার তৃতীয় বাচ্চা। দুই মেয়েই আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
মায়ের কাছে এসে সমস্যাটা শুনলাম। কোন পীর এর পানিপড়া খেলে নাকি ছেলে হয়। ভাবি সেই পানি পড়া খেয়েছে। তবে ছেলে হওয়ার দুইটা শর্ত আছে
১. তার কেরামতির উপর সন্দেহজনক কোন কাজ করা যাবেনা! সেটা আল্ট্রাসনোগ্রাম বা যে কোন ধরনের পরীক্ষা হোক।
২. ৫০০১ টাকা দান করতে হবে তার দরগাহে।
ভাই ভাবি মন প্রাণ দিয়ে দুইটাই পালন করেছিল। এমনকি বাচ্চা জন্মের সময় প্রচণ্ড কষ্ট এবং রক্তপাত হওয়ার পরেও ভাবিকে হাসপাতালে নেওয়া যায় নি। সে এত কষ্টের মধ্যেও আশা নিয়ে ছিল ছেলেকে দেখবে।
সৌভাগ্যবশত পরিস্থিতি খারাপ হয়নি। ভাবি এবং বাচ্চা দুইজনই সুস্থ্য। কিন্তু এবারও ভাতিজি হয়েছিল।
২
আমার পাশের বাসায় একজন পরিচিত পীর সাহেব আসে। তার ভক্তকুল অনেক।
তার ঝাড়ফুঁক তাবিজ কবজ বেশ প্রসিদ্ধ।
একদিন বাজার করছিলাম। সাবেক মেম্বার সাহেব আমাকে দেখে বললেন
বাবা একটু দাঁড়াও তো।
খুউব কোমরে ব্যথা ইদানিং। ভালোই ভোগাচ্ছে।
এই সমস্যাটা এখন প্রায়ই হয়.... কারো দেখা হলে এই রোগ হয়েছে কি খাব বা করা যায় আর অনেক দিন পর কারো কল এসেছে খুশি হয়ে কল রিসিভ করলেই অনেক দিন পর কল দিলাম বাবা/দোস্ত / ভাই কেমন আছ দেখার জন্য?
এইটুকু অভিনয় শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয় এই রোগ সেই রোগ ।
তো মেম্বার সাহেবের কথা শুনে ব্যতিক্রম কিছু না ভেবে কিছুক্ষন রোগের বর্ণনা শোনার জন্য প্রস্তুত হয়ে রইলাম।
কিন্তু মেম্বার সাহেব আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন....
তো বাবা তোমাদের পাশের বাসায় পীর সাহেব কি এসেছে?
আমাকে অবাক হতে দেখে বলল কোমরে ব্যাথার জন্য একটু পানি পড়া আনতাম।
বললাম আংকেল জানি না।
মেম্বার সাহেব তো আমার দিকে বিস্ময়ে যেভাবে তাকিয়ে আছে তার অর্থ মেবি এরকম!
কত বড় নালায়েক এত্ত বড় একজন পীর পাশের বাসায় আসে আর এ কিনা তার খবর রাখে না!!
অশিক্ষিত আর শিক্ষিত দুই ধরনের সম্প্রদায়ই এই কুসংস্কারে জড়িয়ে গেছে। যে ধর্মের নবী তাবিজ পড়ে থাকায় এক ব্যক্তিকে ইসলামে দীক্ষা দিতে রাজি হয় নি তার অনুসারীরাই আজ এটাকে ধর্মীয় মোড়ক দিয়েছে বড়ই আশ্চর্য। আজ ইমাম সাহেব এক পীরসাহেবের গল্প বলল যে গাড়ি নষ্ট হওয়ায় ড্রাইভারকে মিস্ত্রি আনতে পাঠিয়েছে। চারঘন্টা পর মিস্ত্রি এসে সেই গাড়ি ঠিক করে দিল।
তখন আমি ভাবলাম
কেন? ফুঁ দিয়ে এই গাড়ি ঠিক হয় না?
তাহলে মানব গাড়িতে অযথা ফুঁ দেন কেন?
___________________________
লেখক
ডাঃ মোবাশ্বের আহমেদ নোমান ।
Assistant Registrar of surgery ; Rangpur Army Medical College - RAMC
আপনার মতামত দিন: