Ameen Qudir

Published:
2018-09-24 17:58:40 BdST

'ভাবখানা এমন যে পয়সা খরচ করে যদি ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধই খাই, তবে আর হাটবো কেন?'


 

 

ডা: এ. হাসনাত শাহীন
_______________________________

৭৫ বছর বয়সী এক মহিলা আমাদের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দিন কয়েক পূর্বে। ডায়াবেটিস ছাড়াও উনি হৃদরোগ, হাইপারটেনশন,এ্যাজমা জনিত সমস্যায় ভুগছেন দীর্ঘদিন যাবৎ। তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে Basal+ Bolous Insulin লাগছে ভর্তির পূর্বে সর্বমোট ২২০ ইউনিট দৈনিক। আর ডায়াবেটিসের অন্যান্য ঔষধ তো সাথে রয়েছেই। আমাদের সম্মানিত কনসালটেন্ট যার সুপারভিশনে উনি আছেন আমার কাছে রোগীটিকে রেফার্ড করলেন।

রোগীর হিস্ট্রি নিতে গিয়ে জানতে পারলাম শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে উনি একেবারেই হাটেন না। খাদ্য নিয়ন্ত্রণে খুব একটা বাছ বিচার নেই বললেই চলে। সারাদিন শুয়ে বসে চলে তার দিনযাপন। স্বভাবতই ওজন আধিক্যে ভুগছেন। রোগীর শারীরিক অবস্থার পর্যবেক্ষণে আমার মনে হয় নি যে, উনি একেবারেই হাটতে অপারগ। তাই অগত্যা জিজ্ঞেস করলাম, " আপনি কোন ধরনের সমস্যা ছাড়া একটানা কতক্ষণ হাটতে পারেন?" রোগীর সহাস্য উত্তর "১০ মিনিট "।

আমি তাকে বললাম,"আপনাকে একটানা ১০ মিনিট নয়, ৫ মিনিট করে সকাল, বিকেল আর রাত্রে শোয়ার পূর্বে হাটতে হবে। পারবেন তো?" উনি বেশ সাবলীলভাবেই তাতে সম্মতি জানালেন। আমি বললাম, "এখন এই বিকেলবেলা আমাদের হাসপাতালের এই লম্বা করিডোরে ৫ মিনিট হাটুন"। উনি আমার সামনে কোন ধরনের সমস্যা ছাড়াই হাটলেন। তার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের একটি তালিকা তৈরি করে দেয়ার জন্য একজন ডায়েটিশিয়ানের কাছে রেফার্ড করলাম। আর তার সারাদিনের ব্লাড সুগার প্রোফাইল অনুযায়ী ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে দিলাম। এভাবে ধীরেধীরে মাত্র ৫ দিনে তার ইনসুলিনের মাত্রা ২২০ ইউনিট থেকে কমিয়ে প্রায় ১৪০ ইউনিটে নিয়ে আসতে সক্ষম হই। এখানে উল্লেখ্য অন্য কোন ডায়াবেটিসের ঔষধ সংযোজন বা পরিবর্তন ব্যাতীত আজকে পর্যন্ত উক্ত মাত্রার ইনসুলিনে তার ডায়াবেটিস খুব ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে। এই ঘটনাটি বলার পিছনে কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমেই বলে নিচ্ছি নিজের পাণ্ডিত্য বা যোগ্যতা জাহির করার কোন মানসিকতা নিয়ে আমি এ লেখাটি লিখছি না। একটু লক্ষ্য করলে সকলেই বুঝতে পারবেন শুধুমাত্র জীবন ধারার সামান্য একটু পরিবর্তনেই রোগীটিকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসা সক্ষম হয়েছে। আর হ্যা, আমি বিশেষ ভাবে এই বিষয়টির উপর আলোকপাত করতে চাচ্ছি। ডায়াবেটিস সহ অনেক দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগ যেমন, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, হাপানি, কিডনি বা লিভারের জটিলতা প্রভৃতি রোগে ঔষধ গ্রহণের পাশাপাশি জীবনধারার একটু পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকাংশেই সুস্থ স্বাভাবিক থাকা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটু হাটাহাটি বা হালকা ব্যায়াম ও নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাসের দ্বারাই অনেকে সুস্থ আছেন দীর্ঘ সময়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে বেশিরভাগ রোগীরাই তা মানতে চান না। তাদের ধারণা অসুস্থতার জন্য ঔষধ গ্রহণই যথেষ্ট। আমি আমার পেশাজীবনের দেখেছি স্বাস্থ্যকর জীবনধারণ সম্পর্কে উপদেশগুলো বেশিরভাগ রোগীরা খুব একটা শুনতে চান না। আর শুনলেও মানতে চান না। আবার মানতে তাগিদ দেয়া হলে অনেকেই খুব বিরক্ত হন। ভাবখানা এমন যে পয়সা খরচ করে যদি ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধই খাই, তবে আর হাটবো কেন? কেনই বা এত খাওয়া- দাওয়া নিয়ন্ত্রণ? শুধু উপরের একটি উদাহরণ নয় আমাদের চিকিৎসকদের অনেকেরই এ ধরনের অভিজ্ঞতার উদাহরণ শয়ে শয়ে রয়েছে। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যকর জীবনপ্রণালী সম্পর্কে বলতে হবে। উদ্বুদ্ধ করতে হবে। চিকিৎসক হিসেবে শুধু ঔষধ লিখেই ক্ষান্ত হলে চলবে না। রোগীকে একটু সময় নিয়ে বুঝিয়ে, প্রয়োজনে একটু শাসনের সুরেই স্বাস্থ্যসম্মত জীবন ধারনের তাগিদ দিতে হবে।

_____________________________

ডা: এ. হাসনাত শাহীন
মেডিসিন, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হরমোন বিশেষজ্ঞ
ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:


প্রেসক্রিপশন এর জনপ্রিয়