Ameen Qudir

Published:
2018-08-04 17:17:35 BdST

খাই খাই: অনর্থক দুশ্চিন্তা করবেন না


 

 

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
_______________________________

খাই খাই।।
আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই শুনছি বা পড়ছি, একটু বয়েস হয়ে গেলে খাওয়া দাওয়ায় ধরাকাট করতে হয়, ডিমের কুসুম টি খেতে নেই, চর্বির পরত থাকা সুস্বাদু রেওয়াজি খাসির মাংস, গোমাংস এবং বরাহমাংস নিয়মিত খেতে নেই, যতই ভালো লাগুক না কেন। কারণ এই সব খাদ্যগুলিতেই আমাদের জন্য ভারি ক্ষতিকর হৃদয়বিদারক ব্যাড কোলেস্টেরল আছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানী রা এমনতরো ই বলতেন। তা ব্যাড কোলেস্টেরল হলো ওমেগা -৬ এর আড়ত। এর ডাক্তারি নাম নন এইচ ডি এল কোলেস্টেরল। আবার তাঁরা বলতেন মূলত: সামুদ্রিক মাছ, যেমন ইলিশ ( উলস্) বা পমফ্রেট মাছ খেতে যাতে আছে হৃদয়বন্ধু ওমেগা -- ৩ বেশি বেশি করে।
আরো বলতেন, প্রায় এই শতকের শুরু থেকে চল্লিশ পার হলেই একটি করে কোলেস্টেরল কম করার ওষুধ --- মূলত: স্টাটিন জাতীয় ওষুধ নিয়মিত প্রতিদিন খেতে। এই স্টাটিন অনেক রকম। প্রথমে এলো আটোরভাস্টাটিন, পরে এলো সিম্ভাস্টাটিন, এবং শেষতক রসুভাস্টাটিন। এই রসুভাস্টাটিন এর কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষমতা অন্য স্টাটিন দের প্রায় দ্বিগুণ বা আরো বেশি। একটু বয়স্ক মানুষদের ওষুধের মরা গাঙে এলো জোয়ার, সকালেই বেশ কয়েক রকম নানারঙের ওষুধ খেতে হতো বয়স্ক সব্বাইকে, তাতে নাকি হৃদয়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। বেশ ভালোই বেওসা করছিলো স্টাটিন তৈরী করা কোম্পানি রা।
মনে পড়ে, নব্বুই এর দশকে এমন ভাবেই দাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল সর্ষের তেল কে, বিজ্ঞাপনী চটকে আর ডাক্তারবাবু দের বোঝানো হয়েছিল, সূর্যমুখী তেল খুব ভালো, সূর্যমুখী তেলে ভাজা লুচি খেলে ছেলে আর বাবা বরাবর পাশাপাশি ডিগবাজি খেতে পারবে। প্রায় ব্রাত্য হয়ে গেল সর্ষের তেল। একই সঙ্গে সংসার খরচ ও বেড়ে গেল একধাপে অনেকখানি। কিন্তু সর্ষের তেলের রান্নার স্বাদ, গন্ধ ও যে গেল। ( সুকুমারমতি পাঠক পাঠিকা গণ এই অধম কে একটু ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন, এই রইলো আবেদন) ।
কি দেখা গেল বহুবছরের খাদ্যাভ্যাস জোর করে পালটে? না টাইপ টু ডায়াবেটিস আর উচ্চরক্তচাপ বাড়লো বেলাগাম ভাবে। তাতেই বা কি। বিজ্ঞাপনী চাতুরতায় এখনো অনেক বাড়ীতেই সূর্যমুখী তেল ই একমাত্র ব্যবহার্য তেল।
আগের কথায় ফিরি। ২০১৬ এর মাঝামাঝি নাগাদ এক নতুন তথ্য জানা গেল এক লম্বা ও বড়ো ট্রায়াল এর পরে।
বিজ্ঞানী রা বলছেন ভালো কোলেস্টেরল এবং খারাপ কোলেস্টেরল বলে আদপে নেই কিছু। এইচ ডি এল হামেশাই এল ডি এলে রুপান্তরিত হচ্ছে, আমাদের অজ্ঞাতে। যে কোলেস্টেরল এতদিন ছিল ভিলেন নং ১, এখন দেখা গেল সে যে ভারি প্রয়োজনীয়। উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল তৈরী হয় লিভারে এবং দেহের শারীরবৃত্তিক কাজকর্মের জন্য, বিশেষত নানা হরমোন এবং এনজাইম তৈরীর জন্যে। একসময় কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কম করার যে স্টাটিন গোষ্ঠী র ওষুধ মানুষজন ভুরি ভুরি খেতেন তাতে লিভারে চাপ পড়তো বেশি, আর ১০%মানুষের গা হাত ব্যথা ( নাম মায়েলজিয়া) থেকে শুরু করে কিছু ক্ষেত্রে মায়োফাব্রাইটিস এবং মায়োপ্যাথি পর্যন্ত হত --- মাংসপেশি র প্রদাহ এত যন্ত্রণা দায়ক ও এবং শয্যাশায়ী বা শয্যাশায়িনী করে ফেলত রোগী দের যে ওষুধ বন্ধ করা ছাড়া উপায় ছিল না কোন।
এ বিনাও এই স্টাটিন জাতীয় ওষুধ আগে থেকেই গর্ভাবস্থা এবং ছেলে ও মেয়েদের ১৮ বছর অবধি দেওয়া যেতই না কখনো। নইলে কোলেস্টেরল তৈরী এবং হরমোন তৈরী হবে কি করে। এইসব যে বৃদ্ধির জন্য অতি প্রয়োজন। লিভার এই কোলেস্টেরল তৈরী করে কাজেই স্টাটিন গোষ্ঠী র ওষুধ লিভারের স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা দিত যে অহরহ।
বিভিন্ন রিসার্চ এবং ডাবল ব্লাইন্ড র‍্যান্ডম ওপেন এন্ডেড স্টাডিতে দেখা গেছে, যারা হৃদরোগে ( মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশান) এ আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের কোলেস্টেরল এর মাত্রা সিংহভাগ ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক। বরং চিকিৎসা বিজ্ঞানী রা দুষছেন চিনি ( সুক্রোজ বা গ্লুকোজ কে) । বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এই হৃদযন্ত্রের অসুখ জীন নিয়ন্ত্রিত। এছাড়া হাইপারটেনশন এবং হাই ব্লাড গ্লুকোজ থাকলে হৃদযন্ত্রের অসুখের সম্ভাবনা বাড়ে। খুব বেশি ওজনবৃদ্ধি এবং তামাকের ব্যবহার ( ধোঁওয়া বা ধোঁওয়াহীন) ক্যান্সার ছাড়াও বড় বিপজ্জনক, হৃদযন্ত্র এবং রক্ত সরবরাহকারী ধমনী ও শিরার ওপর।
আর ট্রাইগ্লিসারাইড খুব বেড়ে গেলে, ৫০০ র কাছাকাছি হলে, অ্যকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস হতে পারে, তখন এটি একটি মেডিকাল এমারজেন্সী।
ওজন বাড়তে দেবেন না, ধুমপান বা খৈনি, জর্দা চলবে না, আর ভাজাভুজি এবং মিষ্টি খাবার কম খান। মিষ্টি কথা বলুন আর হ্যাঁ, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম কিছু করুন --- সপ্তাহে ছদিন বা সাত দিন --- ৪০ মিনিট থেকে ৫০ মিনিট করে। জোরে একটানা হাঁটলেও হবে। সাঁতার কাটতে পারেন , জিম এ গিয়ে অনেকের সঙ্গে শরীরচর্চা করতে পারেন।
অনর্থক দুশ্চিন্তা করবেন না।
ভুলে যান কোলেস্টেরল নিয়ে চিন্তা। ২০১৬ র স্টাডি এমনতর ই বলছে।।
ডিমের কুসুম টি না খেয়ে সাদা টি তো অনেকদিন খেলেন, এবারে নির্ভয়ে পুরো ডিম ই খান না। এমন কি ভাতের পাতে একটু গরম ঘি খেতেও নেই মানা। তবে ভাজা ডিম বা পোচ বা ওমলেত কম খান। হার্ড বয়েল্ড ডিম ই খান না। এগ রোল বা এগ চিকেন রোল বা এগ মাটন রোল আর হাউচাউমিন বাদ দিন বা কম খান। মাসে এক বা দুবার, তার বেশি নয় আর।।
_____________________________

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
সুলেখক । কবি।

Diabetes & Endocrinology Consultant
M.D. at University of Madras । প্রাক্তন :
Calcutta National Medical College and Madras Medical College (MMC)

আপনার মতামত দিন:


প্রেসক্রিপশন এর জনপ্রিয়