Ameen Qudir

Published:
2019-01-27 08:43:06 BdST

বিশেষ স্বামীর লাশ ওয়ারড্রবে রেখে অফিস করলেন স্ত্রী: তার মানসিক পরীক্ষা করা দরকার


পুলিশ হেফাজতে আসামী জেবুন



ডা. সুলতানা এলগিন,
মানসিক সম্পর্ক বিদ
________________________

স্বামীর লাশ ওয়ারড্রবে রেখে অফিস করলেন স্ত্রী; কিংবা স্ত্রীর লাশ ফ্রিজে রেখে দিব্যি অফিসে স্বামী: এমন অস্বাভাবিক  ঘটনা সবসময় ঘটে না। বিরল ঘটে। কিন্তু নাড়া খায়, তোলপাড় হয় সমাজ জুড়ে। রাষ্ট্র জুড়ে। এমন ঘটনা বিদেশে ঘটেছে। ভারতবর্ষ উপমহাদেশে কোন শহরে ঘটেছে। সর্বশেষ ঘটল বাংলাদেশের গাজীপুরে। যথারীতি তোলপাড়।
কিন্তু এসব ঘটনায় হন্তারকদের মানসিক পরিস্থিতি সুস্থতা সচরাচর খতিয়ে দেখা হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘৃণা বিদ্বেষের আড়ালে সব চাপা পড়ে।
এসব ঘটনায় আসামীদের মানসিক অবস্থা বিশেষজ্ঞ মনোরোগ বিদ দিয়ে পরীক্ষা করা দরকার।
অনেক ক্ষেত্রে ধারনা করা যায়, এরা মূলত: মানসিক রোগী। কিন্তু যথাসময়ে চিকিৎসা হয় নি। যদি হত, তাহলে সমাজ এরকম নৃশংসতার মুখোমুখি হত না। ঘটনার শিকারদের প্রাণও রক্ষা পেত।
এই ঘটনাই দেখি । মিডিয়ায় প্রকাশ খবর অনুযায়ী,

স্বামীর লাশ ওয়ারড্রবে রেখে অফিস করলেন স্ত্রী
স্বামীর পাশাপাশি চাকরি করতেন স্ত্রী জেবুন নাহারও। যা বেতন পেতেন তা থেকে প্রতিমাসে নিজের মা-বাবাকে কিছু টাকা দিতে চাইতেন তিনি। কিন্তু বাধ সাধেন স্বামী রফিকুল ইসলাম শেখ। শুধু বাধাই নয়, ওইসব ঘটনায় তাকে বিভিন্ন সময় মারধরও করেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন জেবুন নাহার।

এক পর্যায়ে স্বামীর ওপর আক্রোশ জমে তার মনে। ফের ঝগড়া হলে সেই আক্রোশের বশবর্তী হয়ে স্বামীকে হত্যা করেন। এমনকি হত্যার পর স্বামীর মরদেহের ওপর চালান নৃশংসতা।

এই নৃশংসতা, তার নেপথ্যের কারণ কি ! যা বেতন পেতেন তা থেকে প্রতিমাসে নিজের মা-বাবাকে কিছু টাকা দিতে চাইতেন তিনি। সেটা দিতে স্বামীর বাঁধা।
স্বামী বাধা দিলেই তিনি খুন করবেন, ফ্রিজে বা ওয়ার ড্রবে লাশ রাখবেন , তা অবশ্যই অপরাধ।
আমি অপরাধকে কো্ন অবস্থায় লঘু করতে চাই না। আসামীর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই। কিন্তু ভবিষ্যতের কল্যাণে , আরও অনেক প্রাণ রক্ষা রক্ষাকবচের কথা বলতে চাই।
স্বামীর বাঁধার কারণে বাবা মা কে দীর্ঘদিন টাকা দিতে নানা সমস্যা, মানসিক নির্যাতন এই হত্যাকারীকে নীরবে দীর্ঘদিন দংশন করেছে । তার মন ক্ষত বিক্ষত হয়েছে। কেউ তা টের পায় নি। আমলেও নেয়নি।
পারিবারিক এসব নিত্য সমস্যা নিরসনে বিশ্বের নানা দেশে মানসিক রোগ চিকিৎসক সহ সাইকোথরাপিস্টরা কাজ করেন। বাংলাদেশেও করেন। যদি এই ভুক্তভোগীরা পারিবারিক বিবাদ না করেে সময় মত সাইকয়াট্রিস্টদের শরণ নিতেন , তাহলে প্রাণ বাচত। সাংসারিক সমস্যা সুরাহা হত।

 

 

 

ডা. সুলতানা এলগিন । মানসিক সম্পর্ক বিদ।
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ। কনসালটেন্ট , ওসিডি ক্লিনিক; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

-------------------------------


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেবুন নাহার জানিয়েছেন গত বৃহস্পতিবার সকালে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয় তার (জেবুন)। ঝগড়ার এক পর্যায়ে ইট দিয়ে রফিকুলের মাথায় আঘাত করেন তিনি। এতে রফিকুল অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন রফিকুলকে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মরদেহটি ঘরের ওয়ারড্রবের ভেতর রেখে কর্মস্থলে চলে যান। এ সময় তাদের মেয়েটি পাশেই জেবুন নাহারের ছোট বোনের বাসায় ছিল।

রাত ৮টার দিকে কর্মস্থল থেকে ফিরে ১১টা পর্যন্ত তিনি বোনের বাসায় ছিলেন। সেখানেই রাতের খাবার খান জেবুন। রাত ১১টার দিকে নিজের বাসায় গিয়ে রান্নাঘরের বটিতে শান দেন। এরপর ওয়ারড্রব থেকে স্বামীর মরদেহ বের করে প্রথমে দুই পা কাটেন। পরে দুই হাত কেটে মাথাও বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন।

৬ টুকরো করা মরদেহটি গুমের উদ্দেশ্যে একটি বস্তায় ভরে ফেলেন। পরে দুই হাত ও বিচ্ছিন্ন মাথা ময়লার ড্রামে ফেলেন। এরপর বাসা থেকে কয়েকশ গজ দূরে ময়লার ভাগাড়ে বস্তাবন্দি দেহটি ফেলে আসেন। এর প্রায় ৪০০ গজ দূরে শৌচাগারের পেছনে নিয়ে ফেলেন পায়ের দুটি টুকরো। শৌচাগারের পাশে দুই হাত ও খণ্ডিত মাথা রাখা ড্রামটিও ফেলে যান। সবশেষে ব্যবহৃত বটিটিও বাইরে লুকিয়ে রাখেন জেবুন নাহার।

এসআই শহিদুল ইসলাম মোল্লা বলেন, জেবুন নাহারের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে রাতেই নৃশংসতায় ব্যবহৃত বটিটি জব্দ করা হয়েছে।


এই পুরো নৃশংস বিবরণ পড়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ার চেয়ে এই ঘটনা কিভাবে রদ করা যেতো, সেই প্রবিধাণ ও প্রতিষেধকও সমাজকে ভাবতে হবে।
জেবুন নাহারের এই অতি নৃশংসতা মানসিক সুস্থতার পরিচয় বহন করে না। তার অতি ভয়ংকর নৃশংস কর্মকান্ড হয়েছে এধরণের মানসিক ঘোর , মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ ও পিশাচ মনপ্রবৃত্তির কারণে। এসব পরিস্থিতির মুক্তি মনোরোগ বিদ্যায় সম্ভব।
এ ব্যাপারে সচেতনতা দরকার। উন্নত বিশ্বেও এসব ঘটনা ঘটেছে একসময়। পরে মনোরোগ চিকিৎসা , সাইকো থেরাপি ব্যবস্থা ব্যপক ছড়িয়ে দিয়ে তা কমানো হয়েছে।
আমাদেরও ভাবতে হবে।
শুধু কি নৃশংস, কী ভয়ঙ্কর , কি পিচাশ কাহিনি ভেবে আহাজারি করলে চলবে না। নিতে হবে মনশোধনের ব্যবস্থা। বাড়াতে হবে সর্বস্তরে সচেতনতা।

 

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়