Ameen Qudir

Published:
2017-03-16 17:21:37 BdST

ফেসবুকে রোজ সুইসাইড নোট লিখেও মেয়েটির আহত মন বিনা চিকিৎসায় প্রাণ দিল


 

ফেসবুকের টাইম লাইন জুড়ে রোজ সুইসাইড নোট লিখেও মেয়েটির আহত মন বিনা চিকিৎসায় প্রান দিল মেয়েটি।

 

 

 

 


ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী
____________________________

তাসমিয়া _শান্তা ।

এক স্তব্ধতার নাম।এক অপারগতার নাম।বাংলাদেশী সমাজটাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার নাম যে,আমরা আত্মকেন্দ্রিক,স্বার্থপর।

তখন আমি বেশ ছোট।দাদা বাড়ীতে বেড়াতে গেছি।এক সকালে খুব হৈ চৈ হলো।কাছাকাছি বাড়ীতে ঐদিন যে মেয়ের বিয়ে হওয়ার কথা সে ঘুমের ওষুধ খেয়ে মারা গেছে!
বাড়ীর প্রায় সব রমনীগন কৌতুহলে গেল ঐ বাড়ীতে।আমি ও গেলাম।সবটা মনে নেই।এইটুক মনে আছে যে অনেক পুলিশ এসেছিল।তখন পুলিশ দেখলে ভয় পেতাম।সেদিন ও ভয়ে কারো কোলে মুখ লুকিয়ে ছিলেম।
বাড়ীর ভেতরে ঢুকে দেখলাম অনেক মানুষের ভীড়।চিৎকার করে কান্না।আর পুকুর পাড়ে মশারী ধরে গোসল হচ্ছিল।অপরুপা সুন্দরী এক সদ্য আত্মহত্যা কারী প্রেমিকা।
প্রেমিককে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে দিচ্ছিল বলে এই আত্মহনন।আমি ঐ লাশ দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলেম।বাড়ীতে এসে প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত হই এবং ভুলভাল বকি।

 


এই পুরো ব্যাপারটা যে আমার জন্য বিশাল মেন্টাল ট্রমা ছিল,তা বড় হতে হতে বুঝেছি।
আমি জীবনে অসংখ্যবার দুঃস্বপ্নে ঐ বাড়ীটি এবং ঐ অপরিচতার ধবধবে সাদা লাশটি দেখেছি।

আজকে শান্তার মত অসম্ভব মেধাবীনি এবং অসাধারন লেখনী শক্তি ও কাব্য প্রতিভার অধিকারীনি কারো এমন অকাল মৃত্যু আমাকে স্তম্ভিত করল।ঘুরে এলাম তার টাইম লাইনে।যেন এক সাহিত্য রসে ডোবা অতলান্ত টইটুম্বুর সমুদ্র।এক রহস্যময়ী তরুনীর আত্মজীবনী,হাহাকার আর নিজস্ব কথন।।

 


তার বন্ধু লিষ্ট বেশ বড়।ফলোয়ার ও!
কি লাভ হলো তবে এত বন্ধু তৈরী করে।ফ্রি ফ্রি গল্প উপন্যাস পড়া??

 

 

 

তার নিরানব্বই শতাংশ পোষ্টেই এক আকুল কান্না।
প্রেম হারানোর বেদনায় কাতর বিরহী এক কোকিলের আর্তনাদ যেন।কোন এক প্রতারক প্রেমিকের দ্বারা সে চরম প্রতারনার শিকার।লেখা পড়ে যেটুকু মনে হলো,তার টাইপ ওয়ান পার্সোনালিটি তার প্রেমিকের দ্বারা করা এই অপমান,তাকে ছেড়ে অন্যের বাহুডোরে আবদ্ধ হওয়াটাকে কোন মতেই মেনে নিতে পারেনি।
সে মেধাবী ছিল কিন্তু তার বাস্তব জ্ঞান,দূরদর্শিতা এবং পরিপক্কতা ছিল না।
হয়ত তার আবেগটা অন্নেক বেশী ছিল।মানছি,কবিদের আবেগ বেশী থাকে।
কিন্তু পাঠক??

 


ওর পরিবারের কোন সদস্য,কোন কাছের বন্ধু কেউ এত এত সুইসাইড নোট দেখেও বোঝেনি যে এই মেয়েটা সুইসাইড করতে যাচ্ছে!ওর প্রতিটি লেখাই ছিল এক একটা সুইসাইডাল নোট।
মার্চের পাঁচ তারিখে সে তার স্মৃতিকে ভস্ম করে ছাইয়ের ছবি আপ দিয়েছে ফেস বুকে।
আমরা অত্যন্ত শিক্ষিত একটা সমাজ,সুশীল সমাজ।
এদেশে কেবল টক শো করে সুশীলগন যা আয় করে তাতে সমাজে জ্ঞান পাপীরা যে বড় অংশের তা তো বলাবাহুল্য।
এই মেয়েটি অতিরিক্ত ইমোশনাল।অতি সত্বর হয়তো তার প্রথম প্রেম ভেঙ্গে দিয়ে প্রেমিক আলাদা কাউকে ভালবাসছে।হেয়ালীর বসে চরম প্রতারনার ও ইঙ্গিত দিয়েছে সে।
এত কিছু জেনে বুঝে লাইক কমেন্ট করেই দায়িত্ব শেষ?এই ডিপ্রেশনের সময় টা একজন সাইক্রিয়াটিষ্ট এবং একজন প্রফেশনাল কাউন্সিলর এর সহায়তায় এই সময়টুকু পার করে দিতে পারলেই আমাদের সাহিত্য সমৃদ্ধ হতো ওর হাতে।সমাজে গুছিয়ে ভাববার,কথা বলবার মানুষ বড্ড দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।

 


একজন মান সম্পন্ন নবীন কবিকে হারালাম আমরা।হারিয়ে যেতে দিলাম!
আমাদের দেশের সামাজিক নিরাপত্তা সিস্টেম যে কতটা দুর্বল তা আবার প্রমানিত হলো।একটি মেয়ের মনটাকে আহত করা হয়েছে।আহত মেয়েটি তার কাব্যিক বা সাহিত্যের ভাষায় বার বার তার কষ্টকে জানিয়েছে।তার কাছের মানুষরা সেই আহত মেয়েটিকে সুস্থ করার কোন উদ্যোগ না নিয়ে বিনা চিকিৎসায় মরে যেতে দিল।
শান্তা হারিয়ে গেছে না ফেরার দেশে।কিন্তু এই অপমৃত্যু এই চলে যাওয়া আমাদের একটা বার্তা দিচ্ছে।
আমরা সকলে নিরাপত্তাহীন।যারা লিখছে নিজেদের এক্সপ্রেস করছে তাদের বরং বিপদগ্রস্থ করার বহু বন্ধু আছে,অনেক বড় লিষ্টে ও সত্যিকারের ওয়েল উইশার কম থাকে।
তাই আজকের এই ক্ষতিকে সামনে রেখে ঐ কচিমুখকে সামনে রেখে প্রতিজ্ঞা করি আর কোন শান্তাকে এইভাবে অবলীলায় অবহেলায় হারিয়ে যেতে না হয়।

 


আর এই সমাজের শান্তাগন তোমাদের বলছি।এটা শরৎচন্দ্রের যুগ তো নয়।এটা জুকারবর্গীয় যুগ।আঘাত পেয়েছ?প্রতিঘাত না করতে পারো,এমন মানসিক শক্তি নিয়ে জীবন চালাতে পারছ না যে তোমার ভালবাসার মানুষ অন্য নারীর শরীরে মুখ ডুবিয়ে থাকলে তুমি তার কাল্পনিক ভিডিও চিত্র কল্পনা করে শিহরিত হয়ে নিজের জীবনের মত মূল্যবান সম্পদকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে?

এই ভুল যেন আর না হয়।আর কোন শান্তা যেন আমাদের অবহেলায় পথ না হারায়,এই হোক আমাদের আজকের ব্রত।।
______________________________

ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী । জনপ্রিয় লেখক-কলামিস্ট । পেশাজীবী নেতা।

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়