Ameen Qudir

Published:
2017-02-05 22:16:38 BdST

হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগী ও সেবা ডাক্তাররা বন্ধ করে দিলে আহাজারি পড়বে দেশজুড়ে



ডা. মুহসিন আব্দুল্লাহ মু
________________________

ডাক্তারদের ভেতর চরম ক্ষোভ এবং হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বনাশা এ ক্ষোভ। যারা এ ক্ষোভের কারণ, তারা ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারছে না এর বদলে কী মাশুল গুনতে হবে। ক্রমাগত মিথ্যাচার, শারীরিক আক্রমণ, চরিত্রহনন আর চরম মাত্রার অকৃতজ্ঞতা বাংলাদেশের সকল ডাক্তারকে পেশাদার করে তুলছে। দেশের মানুষ এখনো যতটা সস্তায় আর বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকে তা বোধহয় আর থাকছে না। ডাক্তাররা নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা আর নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগীর বাইরে অতিরিক্ত কাজ না করলে অবস্থা কী দাঁড়াবে তা যেকেউ যেকোন একদিন যেকোন সরকারি হাসপাতালে ঘুরে আসলেই বুঝবেন।

হতাশা এবং তা থেকে উদ্ভুত সিদ্ধান্তগুলোর কয়েকটি উদাহরণ দেইঃ
ছোটভাই Nesar Ahmed লিখেছে- আজ, এই মুহূর্ত থেকে ফোন কল , মেসেজ ,ফেসবুকের ইনবক্স মারফত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো জিজ্ঞাসার উত্তর কিংবা সাজেশন দেওয়া সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দিলাম ।
এম বি বি এস পাশ করছি , এফ সি পি এস পার্ট ওয়ান পাশ করছি - স্কুল ,কলেজ , এস এস সি, এইচ এস সি, ভর্তি পরীক্ষা সব জায়গায় নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই আসছি , তারপরেও আমাকে করতে হয় বিনা বেতনের ট্রেনিং ।সপ্তাহের ছয়দিন হাসপাতালে যাই আসি , "পাবলিকের টাকা"য় পড়ালেখা করার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করি ।আর এই বয়সেও অবসরপ্রাপ্ত বাপের টাকায় চলার গ্লানি বয়ে বেড়াই ।

 

সারা দিন সারা রাত আমরা আপনাদের মা বাবা ভাই বোন সন্তানদের দেখি ,।হাসপাতালে কাটানো রাতগুলোয় কখনোই ঘুমাতে পারিনা - প্রতিটা ট্রলি টেনে নেবার শব্দে , দরজায় প্রতিটা টোকা পরার শব্দে বার বার লাফায় উঠি , এটেন্ড করি - কারও শ্বাস নিতে কষ্ট , কারও পেটে ব্যথা , কারও বমি , কারও খিঁচুনি ইত্যাদি ইত্যাদি । আমি রাত জাগার জন্য , প্রতিবার লাফিয়ে উঠে আপনার রোগীটা দেখে আসার জন্য একটা টাকাও পাইনা - তাও আমি গাফিলতি করিনা।


সারা রাত খাটার পরও আমার ছুটি মিলে না , পরদিন সকালে ,রোগীর সব ব্যবস্থা পত্র দিয়ে যাবার পর আমার ছুটি মিলে । আবার মিলেও না । আমি জানি অমুক রোগীটা খারাপ , আমি জানি তমুক রোগীটার লোকজন কিছু জানেনা ,কিছু বুঝেনা । আমি আবার যাই , গিয়ে সব কিছু ঠিক করে আসি । লাভ হয়না-যেইকে সেই ।আমি হাল না ছেড়ে পরদিন সকালে আবার নতুন করে শুরু করি । রোগী আর রোগীর লোকজন নিয়ে যুদ্ধ । নাহ ! আমি একটা টাকাও পাইনা । ডিউটি আওয়ার বাদ দিয়ে বাড়তি সময়টা পরে থাকার জন্যেও না । আমি তাতেও কিছু মনে করিনা ।


কিন্তু , এখন মনে হয় -কি করছি ? কেন করছি ? কিসের জন্য ,কার জন্য করছি ?
কি লাভ হচ্ছে আমার ? টাকা পয়সা কবে কামাবো জানিনা , মান -সম্মানের চিন্তাও বাদ দিয়ে দিছি ।তাহলে আর রইলো টা কি ? উপর ওয়ালা একদিন প্রতিদান দিবেন -এই আশা ছাড়া এই পেশা থেকে আর কিছু মনে হয়না চাওয়ার আছে এখন ।
ডাক্তার নিয়ে যেকোনো ইস্যুতে আজ পর্যন্ত নন- মেডিক্যাল কাউকে মুখ খুলতে দেখলাম না , আমাদের হয়ে , আমার হয়ে দু চারটা কথা বলতে শুনলাম না - পরিচিতদের কাউকে না , কাছের মানুষদের কাউকে না , ফ্রেন্ড লিস্টের হাজার খানেক মানুষের মধ্যেও না । কি করছি? কেন করছি? কাদের জন্য করছি ?


আমি লোভী ? কসাই ? আচ্ছা আপনারা সবাই সেটা যখন মেনে নিচ্ছেন - আমিও মেনে নিলাম । এখনো ছোট মানুষ , চিকিৎসার জন্য হয়তো আসেন না । কিন্তু , ইনবক্স এ , মেসেজ এ, ফোন কল দিয়ে ঠিকই এ ব্যাপারে ও ব্যাপারে সাহায্য চান - কাকে দেখাবেন , কোথায় দেখাবেন , কোন পরীক্ষা করাবেন - এ ব্যাপারে সাজেশন চান -এগুলো বুঝার জন্যেও আমাকে পাঁচ বছর পড়ালেখা আর এক বছর ইন্টার্নশিপ করতে হয়েছে । আমি মাগনা আপনাকে বলবো কেনো ?
আবার বলছি ্আ‌ জ, এই মুহূর্ত থেকে ফোন কল , মেসেজ ,ফেসবুকের ইনবক্স মারফত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো জিজ্ঞাসার উত্তর কিংবা সাজেশন দেওয়া সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দিলাম ।


Subhasish Chayon ভাই লিখেছেন-
আজ খুব দুঃখ নিয়ে এই কথা বলতে এসেছি। আইসিডিডিআর,বি আমার কাজের সুবাদে আমি নানা দেশের অনেক মানুষের সাথে মেশার সুযোগ পেয়েছি। অনেক বড় বড় বিদেশি বিজ্ঞানীদের দেখার সুযোগ হয়েছে। আপনারা কল্পনা ও করতে পারবেন না যে তারা আমাদের দেশের চিকিৎসক ও চিকিৎস্যা বিজ্ঞানীদের কতোটা সম্মান করে!! আমার বহু ব্যাচমেট, সিনিয়র, জুনিয়র চিকিৎসকরা বিশ্বের বহু দেশে অসম্ভব ভাল ভাল কাজ করে যাচ্ছে! তাদের অনেকেই বিশ্বের নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সারির ছাত্রছাত্রী! ওইসব দেশে তারা কতোটা সম্মানিত এটা বলার প্রয়োজন পড়েনা। অথচ তাদেরই কলিগরা এইদেশের আনাচে কানাচে কাজ করতে গিয়ে কি হেনস্থা টাই না হচ্ছে? কেন এই হেনস্থা? আমরা কি অপোগণ্ড মূর্খ? আমরা কি কারো দয়ার পাত্র? আমরা এই দেশে না থাকলে কি আমরা মরে যাবো? মোটেও না !! তাহলে কিসের জন্যে আমাদের এই দুর্ভোগ? যে যেভাবে পার এই দেশ ছাড়ো! যেই দেশে ঢাকা মেডিকেলের একজন মহিলা ইন্টার্ন এর হাত রোগীর লোক কাঁচ দিয়ে কেটে দেয়, সেই দেশ তোমার সেবা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না! দেশ ছাড়ো, নিজের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল কর, নিরাপদ কর! দেখবে এই বাঙালিরাই তখন তোমার জন্যে টিকেট কেটে সিংগাপুর/লন্ডন/আমেরিকা যাবে!! সেই দিনের জন্যে প্রস্তুতি নাও! দেশ ছাড়ো!

 

Kosai Jased Cmc ভাই লিখেছেন-
আমার মনে হয় ডাক্তারদের এখন ফ্রি হেলথ ক্যাম্প করা উচিৎ নয়। এটা ধিরে ধিরে জনগনের মনে একটা ধারনা তৈরি করছে যে, চিকিৎসা দিতেতো ডাক্তারদের তেমন পয়সা খরচ হয় না, খালি একটু কাগজ আর কলমের কালি খরচ হয়। তারা যদি গ্রামেগঞ্জে এসে ফ্রি চিকিৎসা দিতে পারে তাহলে শহরে গেলে এত টাকা নেয় কেন? আস্তে আস্তে ডাক্তার কসাই আর লোভী হতে থাকে আর মহৎ হতে থাকে হেলথ ক্যাম্প আয়োজক নেতা, মন্ত্রি,অ সমাজসেবী বা কোন ক্লাব।সাধারন মানুষ মনে করে আয়োজক ব্যক্তি বা ক্লাবের কারনেই ডাক্তার ফ্রি রুগী দেখছেন,এখানে ডাক্তারদের মহত্ব জনগনের তেমন চোখে পড়েনা। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এলাকায় একটা ফ্রি মেডিকেল আয়োজন করে ব্যক্তি বা ক্লাব যথেষ্ট সুনাম কামাই করে যা পরবর্তিতে তাদের অনেক কাজে লাগে। কিন্তু ডাক্তার বেচারা কেবল লোভীই রয়ে যায়। আচ্ছা অন্য পেশাজীবীদের কেউ কি এরকম ফ্রি ক্যাম্প করে লোভী,কসাই উপাধি লাভ করতে পেরেছে। আমার জানা মতে আমরা ছাড়া সেটা কেউ করতে পারে নাই। তাই আসুন কিছু দিন ফ্রি হেলথ ক্যাম্প বন্ধ রাখি, নিজেদের লোভ মুক্ত রাখি।

 

ডাঃ মোঃ আবু শিহাব ভাই লিখেছেনঃ
Decision final- শিঘ্রই দেশ ত্যাগ করতে ইচ্ছুক। সোনার দেশের সৎ, নির্লোভ, মানুষদের মাঝে কসাইদের না থাকাই ভাল। আশা করি আমার অপ চিকিৎসা দ্বারা এই সভ্য দেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।

______________________________

 

লেখক
ডা. মুহসিন আবদুল্লাহ মু। লোকসেবী চিকিৎসক। কলামিস্ট। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়