Ameen Qudir

Published:
2019-02-15 05:10:58 BdST

বিশ্ব ভালবাসা দিবসডিএমসি'র ডাক্তার দম্পতির অমর প্রেমের কাহিনি: নাফিসা যেভাবে বাচাঁলেন আদিবকে


 

ছবি সৌজন্য: ডা. আবিদ হাসান

 

 

 

ডেস্ক, ঢাকা
________________________

ভালবাসা দিবসে ডাক্তার দম্পতির অমর প্রেমের অমর কাহিনি আপ্লুত করছে সবাইকে । হাজারো পাঠক এই কাহিনি পড়ে আক্ষরিক অর্থেই কেদেঁছেন। অনবদ্য অনন্য এক জীবন কাহিনি। এক নারী ডাক্তার তার ডাক্তার স্বামীর জন্য অসামান্য ত্যাগ ও পরিশ্রম করেন। জীবন দান করেন তার স্বামীকে। চট্টগ্রামের ডা. আকাশ ও মিতুর কাহিনি নিয়ে যখন বিদ্বেষের মিডিয়ায় ডাক্তার আক্রান্ত ; সেই বৈরী সময়ে এই কাহিনি প্রেমের নয়া মহাকাব্য। এই দম্পতি উভয়েই ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী।

সহপাঠী ডা. নাফিসার সেবা ও ত্যাগ নিয়ে তারই স্বামী ডা. আদিব লিখেছেন : তারই ভাষায়: "নাফিসার যত্ন আর সঙ্গই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। অনেক ভেবে ওকে আমি বলেছিলাম যে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে। কারণ আমি মাঝখানে কয়েকবার মৃত্যুর সম্মুখীন হই এবং আমার যে শারীরিক অবস্থা তাতে আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা আশা ছিলনা। কিন্তু নাফিসা আমাকে ছেড়ে যায়নি। আমার কখনোই মনে হয়নি যুদ্ধটা আমার একার। আমার পাশে একসাথে, কখনো বা আমার চাইতেও বেশি কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে নাফিসা আমার সাথে লড়ে গেছে। মাঝখানে আমার রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, হিমোগ্লোবিল লেভেল চারের নিচে নেমে গিয়েছিল। তখন নাফিসাই রক্তদান করে আমার জীবন রক্ষা করে।"ভালবাসা যে সব প্রতিকূলতাকে জয় করতে পারে, আমার স্ত্রীই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

সম্প্রতি ডা. আদিব হাসান হিউম্যানস অব ডিএমসি ব্লগে এই অমর প্রেমের কাহিনি লিখেছেন। তারপর হাজারো পাঠকের মন জয় করে সেই কাহিনি। প্রেম অপরাজেয়; প্রেম অজর , অমর, সে কথাই প্রমাণ করলেন তারা।

এখানে হিউম্যানস অব ডিএমসি ব্লগ থেকে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি সৌজন্য ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ডা. আবিদ হাসানের লেখাটি বিশ্ব ভালবাসা দিবসের উপহার হিসেবে পাঠকদের কাছে প্রকাশ করা হল।

ছবি সৌজন্য: হিউম্যানস অব ডিএমসি

ডা. আবিদ হাসান লিখেছেনদীর্ঘ লেখা। লেখাটির বিবরণ :
আমরা বিয়ে করি ২০১০ সালের মাঝামাঝি। আমরা ব্যাচমেট ছিলাম, এরপর বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে জীবনসঙ্গী। দুজনেই তখন মেডিসিনে এফসিপিএসের ট্রেনিং করছি, হাসপাতালে রোগী দেখতে অনেক সময় দিতে হয়। মাস চারেক পর আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। প্রায়ই জ্বর আসতো, ধারণা করা হয় যে কাজের অনেক চাপ যাচ্ছে দেখে এমন হচ্ছে। কিন্তু অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছিল। ১০৪-১০৫ ডিগ্রি জ্বর উঠে যাচ্ছিল, সাথে ইউরিনারি রিটেনশনও দেখা দেয়। কোনভাবেই ডায়াগনোসিস করা সম্ভব হচ্ছিল না। এমআরআই করে ডাক্তাররা ধারণা করেন যে আমার সিএনএস টিউবারকিউলোসিস হয়েছে। তখন আমার পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছিল। কথা জড়িয়ে যেত, সাথে মেমোরি লস দেখা দেয়। কাছের মানুষদেরও চিনতে পারতাম না, এমনকি আমার স্ত্রীকেও না।

টিউবারকিউলোসিসের চিকিৎসা এবং এর পাশাপাশি স্টেরয়েড নেবার পর আমি কিছুটা সুস্থ হই, হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসি। কিন্তু এসময়ই প্রথম প্যারালাইসিসের লক্ষণ দেখা দেয় আমার মাঝে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে আমাকে সিংগাপুর নেয়া হবে। এখানে আমাকে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় যার মধ্যে টাকা জোগাড় করাটা প্রধান ছিল। তখন আমার দুই পায়ে শক্তি কম, হুইলচেয়ারে বসিয়ে ক্যাথেটার লাগিয়ে আমাকে সিংগাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় আমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিল নাফিসা। আমাকে সারাক্ষণ দেখাশোনা করা এবং সেই সাথে বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ও পালন করে।

ডাক্তারের পরামর্শে সিংগাপুর থেকে আমাকে ইন্ডিয়া পাঠানো হয়। এখানে ওষুধের পাশাপাশি আমাকে ফিজিওথেরাপি দেয়া হয়, ফলে স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হয়। আমি তখন ওয়াকিং স্টিকে ভর দিয়ে হাঁটতে পারতাম। ২০১২ সালের মাঝামাঝি নাগাদ দেশে ফেরত আসি। এসময় আমি আর নাফিসা এমআরসিপি পার্ট ওয়ান আর টু পাশ করি। ২০১২ সালের শেষের দিকে আমার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হয়। শেষ পর্যন্ত সিংগাপুর থেকে ডায়াগনোসিস হলো যে আমার সিরিনগোম্যায়ালিয়া নামে স্পাইনাল কর্ডের খুব রেয়ার একটা ডিজিজ হয়েছে। কয়েকবার স্পাইনাল সার্জারি করলাম, কিন্তু সেটা খুব একটা ফলপ্রসূ হলো না। এই সময়েই শুরু হলো পুরো শরীরে প্রচণ্ড স্নায়বিক ব্যথা ও আমার শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হয়। সবরকম ওষুধ এমনকি শক্তিশালী ওপিওয়েড ও হাই ডোজ স্টেরয়েড দিয়েও ব্যথা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিল না। শেষ চেষ্টা হিসেবে আমার পেটে একটি যন্ত্র বসিয়ে দেয়া হয় যেখান থেকে মরফিন সরাসরি আমার মস্তিষ্কে পাম্প করা হয়।

আমার বর্তমান যে শারীরিক অবস্থা, তাতে আবার পূর্বের মত হওয়া সম্ভব নয়। বর্তমানে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান হলো অসুখটা ও সিমটমগুলো যতদূর সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা। আমি যে এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি তাতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা আমার স্ত্রীর ও আমার বাবা মায়ের। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে আমার বাবা মাও ডিএমসিয়ান এবং তাঁরাও একে অপরকে পছন্দ করে বিয়ে করেন। মাঝখানে প্রায় দুই বছর আমি পুরোই বিছানায় ছিলাম। নিজে উঠে বসতে পারতাম না, বাইরের আলো বাতাস পর্যন্ত দেখিনি। এসময় নাফিসার যত্ন আর সঙ্গই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। অনেক ভেবে ওকে আমি বলেছিলাম যে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে। কারণ আমি মাঝখানে কয়েকবার মৃত্যুর সম্মুখীন হই এবং আমার যে শারীরিক অবস্থা তাতে আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা আশা ছিলনা। কিন্তু নাফিসা আমাকে ছেড়ে যায়নি। আমার কখনোই মনে হয়নি যুদ্ধটা আমার একার। আমার পাশে একসাথে, কখনো বা আমার চাইতেও বেশি কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে নাফিসা আমার সাথে লড়ে গেছে। মাঝখানে আমার রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, হিমোগ্লোবিল লেভেল চারের নিচে নেমে গিয়েছিল। তখন নাফিসাই রক্তদান করে আমার জীবন রক্ষা করে।

এত কিছুর পরেও যে আমি পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েশন করতে পেরেছি, তাতেও নাফিসার অবদান সবচেয়ে বেশি। আমি জীবন নিয়ে কখনোই হাল ছাড়িনি। আমার যত্ন নিতে গিয়ে নাফিসা ওর পড়াশোনা থেকে প্রায় চার বছর দূরে সরে আসে। আমি ওকে আবার পড়াশোনায় ফিরতে উৎসাহিত করি। নাফিসা এমআরসিপি ফাইনাল পার্ট দেবার সিদ্ধান্ত নেয় এবং আমার নামও এন্ট্রি করে দেয়। ফলে আমিও একরকম বাধ্যই হই প্রস্তুতি নিতে। প্রস্তুতি নেবার সময় শারীরিক অংশটুকুই ছিল সবচেয়ে কঠিন। প্রচণ্ড ব্যথা ও অ্যাডিসন’স ক্রাইসিস নিয়ে প্রস্তুতি নেই। এসময় আমার ব্লাড সুগার তিনের নিচে নেমে যেত এবং রক্তচাপও কমে যেত। হাই ডোজ স্টেরয়েড নিয়ে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তখন। ২০১৭ সালে আমি আর নাফিসা কাছাকাছি সময়ে এমআরসিপি পাশ করি। এখন চেম্বারও করতে পারছি, নিয়মিত রোগী দেখি। নাফিসা কখনোই বিশ্বাস হারায়নি আমার উপর আর আমাকেও বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে যে জীবনে প্রতিকূলতার পরেও ভাল সময় আসতে পারে। ওর কারণেই আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখি, এত কষ্টের মাঝেও বেঁচে থাকার প্রেরণা পাই। ভালবাসা যে সব প্রতিকূলতাকে জয় করতে পারে, আমার স্ত্রীই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

ছবি সৌজন্য: ডা. আবিদ হাসান

We married in mid 2010. We were batchmates, then best friends turned life partners. We were doing our FCPS training in medicine back then and had to spend a lot of time in the hospital. In about four months I got ill. I had frequent fevers but it was assumed that it might be because of the workload. But I was deteriorating each day. My temperature rose to 104-105 degrees and I also developed urinary retention. No diagnosis could be made. After MRI, the doctors assumed that it might be a case of CNS tuberculosis. My condition was deteriorating drastically. My speech was slurred and I also had periods of memory loss. I couldn't recognise my family members,not even my wife.

After getting the treatment for tuberculosis and taking steroids, my condition got better and I shifted home. But around this time I first had some symptoms of paralysis. Finally it was decided that I've to be taken to Singapore for treatment. I face many difficulties, among them raising the money required being the principal one. At that time, I had weakness in my legs and had to be taken to Singapore in a wheelchair with a catheter. During this period, Nafisa was my constant companion. She played a major role in looking after me and taking me to the doctors.

The doctors advised me to continue the treatment in India. Here I was given physiotherapy besides medication and my condition improved. I used a walking stick to walk around. We returned home in the middle of 2012. Nafisa and I passed MRCP part 1 and 2 in the meantime. At the end of 2012, my condition again deteriorated. At last it was diagnosed in Singapore that I had Syringomyelia, a rare disease of the spinal cord. I underwent spinal surgery a few times but it didn't help that much. Now I had serious neuropathic pain in my whole body. We tried everything, even strong opioids and high dose steroids, but it couldn't be controlled. As a last resort, a machine has been implanted in my abdomen which directly pumps morphine in my nervous system.

Given my present condition, I can't go back to my normal life again. The current treatment plan is to contain the disease and symptoms as much as possible. The main reasons of my making it this far are my wife and parents. My parents are also DMCans and they too have married out of love. For almost two years I was bedridden. I couldn't sit up by myself and rarely saw sunlight. In those times, Nafisa's presence and care kept me alive. After giving it much thought, I had told her to leave me. I've faced death on quite a few occasions and didn't have much hope for the future. But Nafisa didn't leave me behind. I never felt that I was fighting the battle alone. Nafisa fought alongside me, sometimes sacrificing even more than me. One time I developed severe anemia where my hemoglobin level fell below four. That time, Nafisa donated me blood to save my life.

Even after going through all this, I've completed my post graduation and for that Nafisa deserves the most credit. I never gave up on life. While taking care of me, Nafisa has lost some four years of her academic career. I encouraged her to pursue it again. Nafisa decided to appear for MRCP final part exam and entered my name too. So I had to take the preparations. During that time, I had to face many physical challenges. I had to endure severe pain and Addison's crisis. My blood sugar fell below three and blood pressure was low too. I had to keep these in control my taking high dose of steroids. In 2017, Nafisa and I passed the MRCP exams. Now I do chambers, attend to patients regularly. Nafisa never gave up on me and she had made me believe that good times can come even after the darkest of hours. It's because of her that I still hope for a better future and find the will to live despite so many difficulties. Love can conquer everything, my wife is the living proof of that.

Dr. Nafisa Akter
DMC K-58
Internal Medicine Consultant, Uttara Crescent Hospital, Uttara

Dr. Adeeb Hasan
DMC K-58
Internal Medicine Consultant, Lab Aid Diagnostic Centre, Uttara

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়