Ameen Qudir

Published:
2019-01-29 01:39:54 BdST

BMA চিকিৎসকদের অভিভাবক বিএমএ'র মুখে রা শব্দটিও নেই


 

 

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ
____________________________

মাধ্যমিকে আমার এক টিচার ছিলেন।
তিনি বলতেন, 'গরুরে ঘোড়া কওয়া মানে তুমি গরুও চেনোনা ঘোড়াও চেনোনা।'
হালের সাংবাদিকদের হয়েছে একই অবস্থা।
তারা কোয়াকও চেনে না চিকিৎসকও চেনে না।

কোয়াকের অপচিকিৎসায় বা ভুলচিকিৎসায় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কোথাও কোন রুগির অপমৃত্যু হলে পত্রিকার শিরোনাম হয়-
'চিকিৎসকের ভুলচিকিৎসায় রুগির মৃত্যূ'।

কোথাও কোন কোয়াক পকেট মারুক কিংবা মুরগি চুরি করুক সাংবাদিকরা নিউজ করে দেয়-
'চিকিৎসক পকেট মেরেছে, চিকিৎসক মুরগি চুরি করেছে!'

সাংবাদিকদের আসল উদ্দেশ্য পত্রিকার কাটতি বাড়ানো, সংবাদের মেরিটটা তাদের কাছে মুখ্য নয়।
যেমন ধরুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের এক সভায় চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভির কথা বলেছেন, জনগণকে সংযত আচরণ করতে বলেছেন কিন্তু কোন পত্রিকায় সেটা নিয়ে কোন শিরোনাম হয়নি।
শিরোনাম হয়েছে 'কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে চিকিৎসকদের ওএসডি করা হবে' সেটা নিয়ে।

নার্সদের ভূমিকা, অবকাঠামোগত দিক, পড়াশোনার কোয়ালিটি, মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা, মানহীন প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রাইভেট মেডিকেলসংখ্যা, চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র‍্যাকটিসের ব্যবস্থা, চিকিৎসকদের আবাসনের ব্যবস্থা কি নেই যা নিয়ে তিনি বলেননি!
অথচ সকল পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে শুধু চিকিৎসকদের ওএসডি নিয়ে!

অতি সম্প্রতি আরো একটি খবর আমাদের নজরে এসেছে যেখানে সাংবাদিকতার আড়ালে অপসাংবাদিকতা করে চিকিৎসকদের হেয় করা হয়েছে।

নওগার প্রত্যন্ত গ্রামের এক গৃহবধু এক কোয়াক কর্তৃক ধর্ষিত হয়ে আত্মহত্য করেছেন।
আর আমাদের সাংবাদিকেরা ঐ নরপিশাচ কোয়াকের দায় চিকিৎসকের উপর চাপিয়ে পত্রিকায় শিরোনাম করে খবর ছাপিয়েছে-
'চিকিৎসকের ধর্ষণের শিকার গৃহবধুর আত্মহত্যা।'

এই সংবাদটা আমলে নিতাম না যদি কোন 'যেন তেন' অনলাইন পোর্টালে খবরটা আসতো এবং সেক্ষেত্রে যারা সংবাদটি ছেপেছে তাদেরকে সাংবাদিকের কাতারেও আনতাম না।

কিন্তু যেহেতু প্রথমশ্রেণীর কতগুলো দৈনিকে সংবাদটি ছাপা হয়েছে তাই আমলে না নিয়ে পারছি না এবং যিনি সংবাদটি ছেপেছেন তাকে সাংবাদিক হিসেবেই গন্য করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। কারন এখনো পর্যন্ত আমার বিশ্বাস প্রথমশ্রেণীর কোন সংবাদপত্রে সাংবাদিক নামের কোন অসাংবাদিক কাজ করে না।

মজার ব্যাপার হলো আমরা চিকিৎসকরা যেমন ভূয়া চিকিৎসক বা কোয়াকের বিরুদ্ধে সোচ্চার সাংবাদিকরা কিন্তু ভূয়া সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মোটেও তেমন সোচ্চার নয়।

ভূয়া সাংবাদিকেরা যখন চিকিৎসকদের নিয়ে ভুলতথ্যে ভরা বিতর্কিত শিরোনাম দিয়ে মুখরোচক সংবাদ ছাপে তখন আমরা শুধুমাত্র ঐসব ভূয়া সাংবাদিকদেরই সমালোচনা করি, প্রথিতযশা প্রকৃত কোন সাংবাদিককে নয়।

কিন্তু আমাদের সাংবাদিক বন্ধুরা না বুঝেই ঐসব ভূয়া সাংবাদিকদের পক্ষ নিয়ে আমাদের উপর মনঃক্ষুণ্ণ হন।

আমার ফ্রেণ্ডলিস্টে বেশ কয়েকজন প্রথিতযশা সাংবাদিক ছিলেন অনেকদিন ধরেই।
চিকিৎসকদের জড়িয়ে এধরনের ভূয়া সংবাদ এলেই আমি তার প্রতিবাদ করে কিছু লেখার চেষ্টা করি।
ফলশ্রতিতে একসময় আবিস্কার করলাম সেইসব সাংবাদিক বন্ধুদের অনেকেই এখন আর আমার ফ্রেণ্ডলিস্টে নেই। হয়তো তারা আমকে ঘৃণাভরে আনফ্রেণ্ড করেছেন!
________

এবার আমাদের অভিভাবকদের কথায় আসি।
দেশের সকল সাধারন চিকিৎসকদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য দেশে একটি অভিভাবকীয় সংস্থা আছে যেটা বিএমএ নামে পরিচিত।

যদি এক কথায় বলতে চাই তাহলে বিএমএ'র দায়িত্ব হলো চিকিৎসকদের ভালোমন্দ, সুবিধা-অসুবিধার খোঁজ-খবর নেওয়া এবং সাধারন রুগির স্বার্থ ক্ষুন্ন না করে চিকিৎসকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপারগুলো সংরক্ষণ করা।

স্বার্থ সংরক্ষনের কথা না হয় বাদই দিলাম!
এসব নিয়ে বহুত আলোচনা হয়েছে, বহু লেখালেখি করেছি, দিনের পর দিন মাইলের পর মাইল মানববন্ধন করেছি, গজের পর গজ কালো কাপড়ের শ্রাদ্ধ করেছি!

আজ আর স্বার্থের কথা নাইবা বললাম।
জন্মসূত্রে প্রাপ্ত সম্মানটুকুও আজ ধরে রাখতে পারছি না।
উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্যতম মিথ্যা অপবাদও চিকিৎসকের গলায় ঝুলিয়ে দিচ্ছে সাংবাদিকেরা!
দেশের সাধারন মানুষের সামনে ধর্ষক হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে চিকিৎসকদের!
ঘটনাটি যে নতুন তাও নয় আগেও বহুবার এমন অপসাংবাদিকতা হয়েছে!

অথচ চিকিৎসকদের অভিভাবক বিএমএ'র মুখে রা শব্দটিও নেই।
কোন প্রতিবাদ প্রতিলিপি প্রেসকনফারেন্স নেই।
এখনো নেই, আগেও দেখিনি!
কোনকিছুই যেন তাদের গায়ে লাগে না!
গণ্ডারের চামড়াও যেন তাদের চামড়ার চেয়ে পাতলা!

হাসপাতালে ওয়ার্ডে ক্লিনিকাল ক্লাসে আমাদের স্যারেরা প্রায়ই বলতেন আমাদের চামড়া নাকি গণ্ডারের চামড়ার চেয়েও পুরু!
আজ মনে হয় স্যাররা ঠিকই বলতেন!
স্যারেরা শুধু যেটুকু বলতেন না সেটা হলো স্যারদের নিজেদের চামড়াও আমাদের চেয়েও পুরু!
_________________________________

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ।
সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ,স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক পরিষদ, বিএসএমএমইউ।
Doctor ,t Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University
Former Secretary General বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ,দিনাজপুর।
Studied MBBS. at Dinajpur Medical College, Dinajpur

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়