Ameen Qudir

Published:
2018-12-09 22:54:21 BdST

এমবিবিএস পাশ করার পর লক্ষ্য :বিয়ে !বিসিএস?এমডি? এমএস!মেডিসিন! সার্জারী! গাইনী?


 

 

ডা. মৃণাল সাহা
_____________________________

(১)

~ স্বপ্ন দেখা ভালো কিন্তু অতিরিক্ত স্বপ্ন দেখা ভয়ংকর! ~

আমি কাউকে নিরুৎসাহিত করছি না, শুধু এতটুকুই বলতে চাই, সামর্থের বাইরে স্বপ্ন দেখাটা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সামর্থের বাইরে বলতে যোগ্যতা ছাড়াও অনেক কিছু বুঝায়। সেটা পরিষ্কার করার আগে একটা গল্প বলি।

পঞ্চপান্ডবের কথা আছে মহাভারতে। পঞ্চপান্ডবের পাঁচ ভাইই যুদ্ধক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু অর্জুন সবার চেয়ে আলাদা। গুরু দ্রোনাচার্য্য পাঁচ শিষ্যকে বললেন, আস তোমাদের একটা পরীক্ষা নেই৷ এই বলে তিনি একটা গাছের দিকে আংগুল তুললেন, সেখানে একটা পাখির বাসায় একটা পাখি বসে আছে, সেই পাখিটার চোখের মধ্যে একটা মুক্তো বসানো। গুরদেব বললেন, তোমাদেরকে পাখির চোখের মুক্তোটায় তীর বিদ্ধ করতে হবে, সময় মাত্র ১০ সেকেন্ড। সবাই বললো, যথা আজ্ঞা। এরপর একে একে সবাইকে চেস্টা করতে দেয়া হলো। শুধু অর্জুনই লক্ষভেদ করতে পারলেন। গুরুদেব বললেন, তোমরা আমাকে বলো ওখানে কে কি দেখলে? যুধিষ্ঠির বললো, গুরুদেব আমি গাছ দেখলাম, সেখানে পাতা দেখলাম, গাছে একটা পাখি ছিলো, সেই পাখির চোখ দেখতে দেখতেই তো ৬ সেকেন্ড চলে গেলো। কেউ বললো, গাছের পাতায় বাতাস এর গতিবিধিও তারা দেখেছে।

অর্জুন তুমি কিভাবে পারলে? অর্জুন বললেন, গুরুদেব, আমি গাছ, পাতা, ডাল, পাখি কিছুই দেখিনি, এত সময় কোথায়? আমি শুধু দেখলাম একটা চোখ যেখানে মুক্তোটা আছে। আমি ৭ সেকেন্ড তাকিয়ে শুধু লক্ষ্য স্থির করেছি, আমি আশে পাশের কোন কিছু নিয়েই ভাবিনি, আমার লক্ষ্য ছিলো একটাই, সেটা হচ্ছে চোখের ভেতরের মুক্তো। ৭ সেকেন্ড লক্ষ্য স্থির করলাম, ২ সেকেন্ড নিজেকে স্থির করলাম, তারপর ৯ সেকেন্ডে আমি তীর ছুঁড়লাম, গুরুদেব আপনি তাড়াহুড়ো পছন্দ করেন না আমি জানি আর আমার সুযোগ তো একটাই ছিলো।

জীবনটা আসলে এমনই!

One life live it cause you don't get it twice.

(২)

একটা লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাবার সময় আরেকটা লক্ষ্য স্থির করাটা বোকামী। কেন আমাদেরকে এত মাল্টি সেক্টরিয়াল হতে হবে ইন এ পার্টিকুলার ইস্যু?

আমাদের লক্ষ্য অর্জনের মূল বাধা আমাদের মেধা বা যোগ্যতা নয় বরং লক্ষ্যস্থির করতে না পারা। আরো স্পেসিফিক্যালি বলতে গেলে নিজেকে স্থির করতে না পারা।

এমবিবিএস পাশ করার পর, আমরা লক্ষ্য স্থির করতে পারি না। কি করবো?

বিয়ে করবো?
বিসিএস করবো?
এফসিপিএস?
অনারারী?
দেশের বাইরে?
ইউএসএমএল?
প্লাব?
এ এম সি?
এমডি?
এমএস?
মেডিসিন? সার্জারী? গাইনী?
এমআরসিপি, এমআরসিএস?
ডিপ্লোমা নাকি এমসিপিএস?

এটা আসলেই কঠিন। সমস্যা থাকবেই, এটাকে পাশ কাটানোর রাস্তা খুঁজতে হবে। নিজের মনকে স্থির করতে হবে। নিজের পছন্দের বিষয় ঠিক করতে হবে। এসময় হাজার চিন্তা আসবে, কোন বিষয় ভালো, কোনটায় চান্স পাওয়া সহজ, কোনটায় টাকা বেশী, কোনটায় কষ্ট কম।

সত্যি কথা কি উই আর ওভার থিংকার। মেডিকেলের কোন সাবজেক্টই খারাপ না। যেখানে যাবো আমি যদি আনন্দের সাথে কাজ করতে পারি আমি সফল হবোই। ঘর পোড়ার মধ্যে আলু পোড়ার সুযোগ নেই। একটা কাজ করার সময় সেটাই মন দিয়ে করতে হবে, হাজার ঝামেলা আসলেও লক্ষ্য নিয়ে আপোষ করা যাবে না। যে সাবজেক্ট এর প্রতি ভালোবাসা থাকবে সেটা যত কঠিনই হোক সেটাই পড়তে হবে। একবার চান্স না হলে বারবার।

কাজেই কথা একটাই নিজেকে তৈরী করতে হবে, অস্থির মনকে স্থির করাটাই আসল, তাহলে লক্ষ্য সহজেই স্থির হবে। এখানে দ্রুত বলে কোন কথা নেই। জীবনটা খরগোশ আর কচ্ছপের মতই। নিজেকে প্রস্তুত করতে সময় বেশী লাগলেও লক্ষ্যভেদ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে সময় নিতে হবে। সহজে কিছুই হয় না। প্রয়োজন ধৈর্য্য, নিষ্ঠা আর অধ্যবসায়।

আব্রাহাম লিংকনের উক্তিটা আমার অনেক প্রিয় -

আমাকে যদি একটা গাছ কাটতে ২০ মিনিট সময় দেয়া হয় আমি ১৯ মিনিটই করাত ধার দিবো। ধারালো করাত দিয়ে গাছ কাটতে সময় বেশী লাগবে না।

সো প্রিপেয়ার ইউরসেল্ফ, টেইক ইউর টাইম, নেভার গো টু দ্যা ব্যাটলফিল্ড উইথ হাফ ডান প্রিপারেশান!

________________________________

ডা. মৃণাল সাহা । সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়