Ameen Qudir

Published:
2018-10-19 15:41:34 BdST

আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে চিকিৎসক লেখকদের শ্রদ্ধার্ঘ্যআইয়ুব বাচ্চুর চলে যাওয়া কি ইচ্ছামৃত্যু ?


 

আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে লেখক ।

 


মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ

-------------------
আমার সাথে ছবির ফ্রেমে বাঁধা ব্যাণ্ড সংগীতের কিংবদন্তী হাস্য প্রোজ্জ্বল আইয়ুব বাচ্চু বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় রংধনুর দেশে অসীমে যাত্রা করেন ।তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৬ বছর ।বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি যখন তাঁর মোহন ছোঁয়ায় সাগর পেরিয়ে মহাসাগরে ধাবিত হচ্ছিল তখন তাঁর অসময়ে চলে যাওয়া লাখো ভক্তকে কাঁদিয়েছে ।

২।তিনি অনেক বছর ধরে অসুস্থতার সাথে লড়ছিলেন ।হৃদযন্ত্রে ব্লক ধরা পরে ২০০৯ তে।সেসময়েই ইন্টারভেনশন করে তার হার্টে রিং পরানো হয় ।চিকিৎসকেরা তাকে বিশ্রামে থাকতে বারবার তাগাদা দিয়েছেন ।বাচ্চুভাই সেটি মানেন নি ।কয়েক বছর পর তিনি আবারও অসুস্থ হন ।ফুসফুসে পানি জমাজনিত জটিলতা নিয়ে ২০১২ সালে স্কয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিট, সি সি ইউতে ভর্তি হন ।চিকিৎসকদের নিবিড় যত্নে সেই ধাক্কা সামলে যান বাচ্চু ভাই ।

৫।ইতিহাস এখানেই শেষ নয় ।২০১৫ সালে আবারও হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে স্কয়ারে ভর্তি হন । চিকিৎসকেরা তাঁকে নিয়মিত চেক আপে রেখেছিলেন ।ওষুধ -পত্র চলেছে দীর্ঘসময় ।রোগটির নাম কার্ডিও মায়োপ্যাথি ।একজন সুস্থ মানুষের হৃদপিণ্ড অন্তত ৭০শতাংশ কাজ করে ।বাচ্চুর সেটি কমতে কমতে ৩০ শতাংশে চলে আসে ।রক্তচাপ আশংকাজনকভাবে কমে যায় ।যখন তাঁকে স্কয়ারে আনা হয় তখন তাঁর মুখ দিয়ে ফেনা পরছিল । সরল বাংলায় বললে কর্মক্ষমতা হারিয়ে তাঁর হার্ট ততক্ষণে ফেল করে গেছে ।

৬। চিকিৎসকের মূল নিষেধ ছিল লাইভ কনসার্টের ব্যাপারে ।হাজারো দর্শক মাতাতে লাউড স্পিকারে উচ্চস্বরে একটানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাইবার ফলে ফুসফুস এবং হৃদপিণ্ড দুই সংবেদনশীল অংগের উপর প্রচণ্ড চাপ পরে । বিষয়টি আমরা তাঁকে বিভিন্ন সময় বুঝিয়ে বলেছি ।শীতের ছোঁয়া লাগতে না লাগতেই দেশব্যাপী কনসার্টের ধূম পরে যায় ।অন্যান্য শিল্পীরা যখন একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন তখন বাচ্চুভাই ঘরে থাকতে পারেন নি ।হাজারো উল্লসিত দর্শকের আনন্দের খোরাক হতে তিনি নিজেকে বলি দিলেন ।মৃত্যুকে যেন ইচ্ছায় নিজ বাসভূমে ডেকে আনলেন ।

৭।মাত্র দুইদিন আগে রংপুরে প্রোগ্রাম করতে যান ।বিমানে উঠে ক্লান্তি আর অসুস্থতায় তিনি ঘুমিয়ে পরেন ।নিজের অসুস্থতার কথা সবসময়ই চেপে রাখতেন ।এই বিষয়ে আলোচনা উঠলে প্রসংগ ঘুরিয়ে দিতেন । এত নিষেধ সত্ত্বেও দুদিন পরে রাজশাহীতে তাঁর লাইভ কনসার্ট ছিল ।শুধু কি গাইবার জন্যই তিনি এত শারীরিক অত্যাচার সয়েছেন ? খুব নিকটজনেরা জানতেন তিনি একধরণের অনিশ্চয়তায় ভুগতেন । ক্রিকেট খেলোয়াড়দের সন্মানের সাথে আকাশচুম্বী সন্মানী এবং আর্থিক নিশ্চয়তা দেয়া হয় ।শিল্পীদের সেই ক্ষেত্রে অনাগত ভবিষ্যৎ প্রায়ই অন্ধকারের বিবরে ঢাকা । চাকুরেদের পেনশন আছে ,প্রফিডেণ্ট ফাণ্ড,গ্র্যাচুইটি আছে ।শিল্পীদের ভক্তের ভালোবাসার ফুলের মালা ছাড়া জীবিকার কোন স্থায়ী বন্দোবস্ত নাই ।পাইরেসি যখন আমাদের অডিও শিল্পকে ধবংশ করে দিয়েছে তখন মূলত জীবনের প্রয়োজনে লাইভ কনসার্টকে অবলম্বন করতে হয়েছে ।

৮।মান্না দে' গেয়েছিলেন

'সে আমার ছোট বোন ,বড় আদরের ছোট বোন
একদিন গলায় তার দারুন জ্বালা ,
শেষ গান গাইল সে পরে শেষ মালা ,

শিল্পের জন্যই শিল্পী শুধু , এ ছাড়া নেই কি তার অন্য জীবন?'

৯।আমাদের শিল্পীরা হাজারো শ্রোতার আনন্দ দিতে মঞ্চ কাঁপিয়ে ফেলুক ।তাতে কারো আপত্তি থাকবার কথা নয় ।কিন্তু , শিল্পীর 'ফর্ম 'সারাজীবন এক থাকে না ।তাই শেষ জীবনে কোন শিল্পী দুঃস্থ হয়ে যেন না পরুক সে খেয়াল আমাদেরই রাখতে হবে ।গিটার ছিল বাচ্চুভাইয়ের প্রিয়তম বন্ধু ।তিনি গেয়েছিলেন ,;একদিন রুপালি গিটার ছেড়ে চলে যাব দূরে ----
' বড় অসময়ে , বড় অবহেলায় ,বড় কষ্ট নিয়ে তুমি দূরে চলে গেলে ,বহুদূরে -----

__________________

লেখক মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ;
উপ অধিনায়ক ,
আর্মড ফোর্সেস ফুড এন্ড ড্রাগস ল্যাবরটরী ।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়