Ameen Qudir

Published:
2018-10-05 22:33:01 BdST

বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার : একটি দু:স্বপ্ন এবং .....





ডা.রাজীব দে সরকার
_____________________________

এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা চলছে। রুমে আমি ইনভিজিলেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। সরকারী আদেশে এই দায়িত্ব আমি আগেও বেশ কয়েকবার পেয়েছি।

ডাক্তার হবার স্বপ্নে বিভোর নতুন নতুন মুখগুলোর সাথে প্রতি বছর এভাবেই আমার /আমাদের দেখা হয়।

আমার সাথে আছেন আমার হাসপাতালের ব্যাসিক সাবজেক্ট এর একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক। শুধু একজন অধ্যাপকই তিনি নন, একজন আন্তর্জাতিক খাতিসম্পন্ন গবেষক। সংক্রামক রোগ বিষয়ে তাঁর গবেষণা আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান অঙ্গনে শ্রদ্ধার সাথে সমাদৃত হয়েছে।

পরীক্ষা হল মোটামুটি নীরব। বেশী সাজুগুজু করা একটা মেয়ে টুকটাক কথা বলার চেষ্টা করছে। আমি ওর দিকেই তাকিয়ে আছি। লাভ হচ্ছে না।

হলে মোট ৭৫ জন বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। ২/১ টা কাশি আর ডেস্ক নাড়াচাড়ার শব্দ বাদ দিলে হলকে মোটামুটি নীরবই বলা যায়।

নীরবতা ভাঙ্গলেন একজন ভদ্রলোক।

"কী অবস্থা? সব ঠিক ঠাক?
" জ্বী ঠিক ঠাক আছে"৷ আমি বুঝলাম উনি একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

"আপনারা দুই জনই আছেন এখানে? আর কেউ নেই?"
"একজন কর্মচারী আছেন, হল সাহায্যকারী হিসেবে"

আমার উত্তর ওনার পছন্দ হলো না। আমার সমবয়সীই হবেন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব। আমাকে পালটা প্রশ্ন করলেন তিনি,

"নাম কী আপনার?"
"আমি ডাঃ রাজীব, রাজীব দে সরকার"

"ও, ঠিক আছে, ঠিক মতো কাজ করেন। কোন ঢিলেমি চলবে না"

উনি হলে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে বক্স, ওএমআর শীট চেক করা শুরু করলেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দের ক্ষমতা সম্পর্কে আমার ধারণা একটু কম। হয়তো এসব তিনি করতে পারেন। সন্দেহের বশে উনি আমাকে আর আমার অধ্যাপককে ল্যাংটা করেও সার্চ করতে পারেন হয়তো।

উনি বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ আমার মনে প্রশ্নের বুদ বুদ উঠলো।

"যদি কিছু মনে না করেন, আপনি কতো তম বিসিএস?"

আমার প্রশ্ন উনি বুঝতে পারলেন কী না জানিনা। তবে কেমন করে যেন তাকালেন।

কলোরেকটাল ক্লিনিকে আমি যখন মলদ্বার পরীক্ষা করার জন্য কোন বৃদ্ধ চাচাকে বলি, চাচা আমি আপনার মলদ্বার পরীক্ষা করবো। পেট নরম রাখেন। তাহলে ব্যাথা কম পাবেন - চাচামিয়া তখন যে চাহনিটা দেন, সেই চাহনিই যেন পেলাম ম্যাজিস্ট্রেট এর চোখে। আমার ভুলও হতে পারে।

"থার্টি সিক্স, ওয়াই?" পরিষ্কার ইংরেজি উচ্চারণে জবাব পেলাম।
"গুড। আপনার নাম জানতে পারি?

" ইয়েস, রমিজ উল আলম"
"শুনুন, রমিজ উল আলম। আমি আপনার থেকে সিনিয়র বিসিএস ব্যাচের অফিসার। আমাকে আপনি স্যার বলে সম্বোধন করবেন। ফাউন্ডেশন ট্রেনিং এ শেখানো হয় নি আপনাকে কাকে কাকে স্যার বলতে হয়? আর ঐ যে রুমে যিনি আছেন উনি গ্রেড ৩ র‍্যাংক এর একজন অধ্যাপক। আপনাদের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। তাঁর কিংবা আমার অনুমতি ছাড়া আপনি এই কক্ষে প্রবেশ করতে পারেন না। অ্যান্ড ফর ইয়োর রেকর্ড ইউ হ্যাভ অলরেডি ভায়োলেটেড দ্যা অর্ডার অব প্রিসিডেন্স এবং খুব সম্ভবতঃ সরকারী কর্মচারী আচরণ বিধিমালা (শৃংখলা) ১৯৮৫ আপনার জানা নেই। নেক্সট টাইম, কিপ দ্যাট ইন মাইন্ড, আদার ওয়াইজ দেয়ার ওন্ট বী আ নেক্সট টাইম। গুড ডে, নাও লীভ।"

রমিজ চলে গেলেন।
কিছু না বলে কেউ চলে গেলে কষ্টই লাগে। রমিজও কিছু না বলেই চলে গেলেন।

মিনিট ২০ পরে আমাকে সাদা পোশাকের কিছু মানুষ একটা জীপে তুললেন। আমি নাকি পরীক্ষার্থীদের অসদুপায় অবলম্বনে সাহায্য করেছি। মোবাইল কোর্টে আমার বিচার হয়ে শাস্তিও হয়ে গেছে।

বাসায় একটা ফোন দেওয়া দরকার ছিলো। ফিরতে দেরী হবে নিশাকে বলা দরকার। সাথে মোবাইল নেই। আনার নিয়ম ছিলো না বলে আনিনি। রমিজের কাছে মোবাইল দেখেছি। ওর মোবাইলটা চাইলে কী একবার দেবে?

সাজুগুজু করা মেয়েটার দিকে আরেকবার তাকালাম। ও বোকার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

খুব সম্ভবতঃ যে দেশে চিকিৎসক গ্রেফতার হন মোবাইল কোর্টে, সেই দেশের চিকিৎসক হবার মেকআপের ঘোরটা ওর কেটে গেছে।


ঘন্টা বেজে যাচ্ছে।
পরীক্ষা কি শেষ??

না না!!
আমার মোবাইলের অ্যালার্ম বাজছে। ঘুম থেকে উঠে বসলাম।
ডিউটি পড়েছে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার। শুক্রবার। ছুটির দিন। ছুটি নেই।

______________________________

ডা. রাজীব দে সরকার

রেজিস্ট্রার, সার্জারী বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
অনলাইন সদস্য, সিএসসি শাখা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
আহবায়ক, সুহৃদ সমাবেশ, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী
প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক, বিএমএ, রাজবাড়ী জেলা শাখা।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়