Ameen Qudir

Published:
2018-05-12 16:28:55 BdST

আবারো এক মেডিকেল ছাত্রের দু:খজনক সুইসাইডের দু:সংবাদ


লেখকের ছবি
.

 

ডা. মিথিলা ফেরদৌস
________________________________

দুপুরে এক গ্রুপে পোস্টে দেখলাম,একটা মেডিকেল স্টুডেন্টের সুইসাইডের নিউজ।মেয়েটাকে দেখেই চমকে উঠলাম।আমার ফ্রেন্ডলিস্টেই আছে,সে আমার প্রায় পোস্টই পড়ে।পরে আতি পাতি করে খুঁজতে আরেকটা গ্রুপে গেলাম।সেখানে,বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনা দেখলাম।কেউ বলছে,জাহান্নামী হবে,কেউ বলছে প্রেম বিষয়ক ইত্যাদি দেখে কমেন্ট পড়ার রুচি নষ্ট হলো।মনে হয়,জান্নাত জাহান্নামে কে কে যাবে, লিস্ট করার গুরু দায়িত্ব নিয়ে বসেছে।

একটা মানুষ যখন সুইসাইড করে,তখন সে মানসিক ভারসাম্য হারায় ফেলে,তখন সে সুস্থ থাকেনা।আমরা মৃত মানুষটার কষ্ট বোঝার একটুও চেষ্টা করলাম না।আজব সব মানসিক বিকৃত মানুষ জন আমাদের চারপাশে।

মেয়েটার প্রফাইলে গেলাম,প্রথমেই লেখা, "ক্ষুদার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়..।আরও ভিতরে গেলাম,কিশোরকুমারের একটা গান,তুমি রইবে এপারে,আমি ওপাড়ে" এই টাইপ।লাস্ট পোস্ট ছিলো এইটা।এরপর এক ক্ষুধার্ত লোকের খাওয়ার ছবি,আরেকটা ছবি সামনে এক ছেলে বাচ্চার মুক্ত পা,পিছনে এক মেয়ে বাচ্চার শিকল দিয়ে বাধা পা।মোটামুটি এইসব দেখে কিছুটা আইডিয়া করলাম।

মেয়েটা কোন কারনে প্রচন্ড মানসিক চাপে ছিলো,এক মেডিকেলের পড়ার চাপের সাথে,কোন কারনে আমার কাছে পারিবারিক চাপ মনে হইছে।প্রেম ব্যাপারটা আমার মাথায় আসেনি।যে মেয়ে মানুষের ক্ষুদার ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করে,মেয়েদের পরাধীনতা নিয়ে চিন্তা করে তার সমস্যা অন্য কিছু।ভুল হতেই পারে।যেটাই হোক মেডিকেলে পড়ার প্রচন্ড চাপের সাথেই যুক্ত হয়েছে হয় পারিবারিক চাপ, আর নয়তো সে অন্যের কষ্ট সহ্য করতে পারতেছিলো না।এমন আমার মধ্যেও ছিলো।

আমি যখন ফিফথ ইয়ারে,তখন আমাদের সাইকিয়াট্রির একটা প্রশ্ন ছিলো MDI(major depressive illnesses) এর নয়টা ক্রাইটেরিয়া।নয়টাই আমার মধ্যেই ছিলো।লাস্টের টা ছিলো,সুইসাইডিয়াল টেন্ডেন্সি।কোন কিছুর প্রতি আমার কোন আগ্রহ ছিলোনা,কন্সেন্ট্রেশান ছিলো না।মরে যেতে ইচ্ছে করতো।ব্যাসিকেলি মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা আমার ছিলো না।বাবাকে খুশি করতেই এসেছিলাম।কিন্তু মেনে নিতে পারতাম না।প্রচন্ড মানসিক ট্রমা হতো সবসময়।আমি তখন কারো কষ্ট সহ্য করতে পারতাম না।বৃদ্ধ ভিক্ষুক দেখলে পাশে বসে গল্প করতাম,কেনো তার ছেলে মেয়ে তাকে সাহায্য করেনা।যতটুকু পারতাম সাহায্য করতাম,তখন তো নিজের কোন ইনকাম ছিলো না।অথচ মেডিকেলে ভর্তির আগ পর্যন্ত আমি ছিলাম ফুর্তিবাজ মেয়ে।আবার পাশ করার পর,আবার স্বরুপে ফিরে আসি।

কয়েকজন মেডিকেল স্টুডেন্ট আমার কাছে তাদের কথা শেয়ার করে,সময় পেলে আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করি বুঝানোর।

আসলে কাউন্সেলিংটা একটা শিক্ষিত মানুষের নিজেকেই করতে হবে।পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের জীবনের কিছু না কিছু খারাপ সময় যাবেই,কেউ সমস্যা ছাড়া জীবন পার করতে পারবেনা।মুখ বুজে সময়টুকু পার করতে হবে।সময়ই ক্ষতের সৃষ্টি করে, সময়ই ক্ষত সারায় দেয়,শুধু মুখ বুঝে অপেক্ষা করাটা জরুরী।সুইসাইড কেউই ভাল চোখে দেখতে চায় না,একেকজন একেক গল্প বানায়,গল্প বানানোটা যদিও মানুষের মন মানসিকতার উপর নির্ভর করে।তবে এইটুকু বলবো,একজন মানুষ কম কষ্টে পৃথিবী ছাড়ার মত ডিসিশন নেয় না।তাই ব্যাপারগুলা গুরুত্বের সাথেই বিবেচনা করা উচিৎ।

মেডিকেল স্টুডেন্টদের মধ্যে দিন দিন এই প্রবণতা কেন বাড়ছে?এইসব নিয়েও আমাদের ভাবা উচিৎ।স্টুডেন্টদের সমস্যাগুলা নিয়ে টিচারদের আন্তরিক হওয়া,বন্ধুদের এগিয়ে আসা,প্রতি প্রফের আগে,কাউসেলিং এর জন্যে একটা ক্লাস নেয়া যেতে পারে,বিশেষ করে যাদের সমস্যা সিভিয়ার তাদের নিয়ে বসা দরকার,সর্বোপরি ফ্যামিলি সাপোর্ট দরকার।যদিও এরা ইন্ট্রোভার্টেড টাইপ হয়,সহজে কারো সাথে কিছু শেয়ার করতে চায় না,ফলে দুর্ঘটনা গুলো ঘটে।তবুও আমাদের সকলকে আন্তরিক হতে হবে।আর এমন সংবাদ শুনতে চাইনা।
_____________________________

ডা. মিথিলা ফেরদৌস। সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়