Ameen Qudir

Published:
2018-04-22 02:26:02 BdST

পশ্চিম বাংলাতেও মাত্র ক'দিনে ৬টি স্থানে ডাক্তারদের ওপর হামলা


কর্তব্যরত মহিলা ডাক্তারের ওপর রোগীর আত্মীয়দের হামলার ঘটনার সাক্ষী রইল চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ। এমার্জেন্সিতে রোগীর চিকিত্‍সা করছিলেন এক ইন্টার্ন ডাক্তার। সেই সময় চিকিত্‍সায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে তাঁকে মারধর করা হয়। এদিকে, মেয়ের আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে বেলেঘাটার বাড়ি থেকে ছুটে আসেন বাবা। ঘটনার কথা জানিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। এই ঘটনায় বেনিয়াপুকুর থানার পুলিস দুজনকে আটক করে। ফাইল ছবি



ডা. রেজাউল করীম
___________________________________

এক বছর ক্রমাগত আন্দোলনের পর গত দোসরা এপ্রিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের সাথে আলোচনায় বসে বেশ কিছু সদর্থক কথা বলে ছিলেন। কিন্তু, দু:খের বিষয়, মাত্র ১৫দিনের ব্যবধানে তাঁর কথার অন্ত:সারশূন্যতা চিকিৎসকরা মর্মে মর্মে অনুভব করছেন।এই স্বল্প সময়ে পাঁশকুড়া, বড়বাজার, শিলিগুড়ি সহ মোট ছটি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে চিকিৎসকরা নিগৃহীত হয়েছেন। এমনকি দুজনের মাথাও ফেটেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি হামলার বিরুদ্ধে বিবৃতি দেবেন। মনে হচ্ছে, পঞ্চায়েত নির্বাচন ও রাস্তার উপর ভিড় করে থাকা উন্নয়নের দেখভাল করতে গিয়ে তিনি এই সব ছোটখাট বিষয়ে মাথা ঘামানোর সময় পাননি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে, হাসপাতালে হামলাবাজি হলে মেডিকেয়ার ২০০৯ অনুসারে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত: কারো বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করা হয় নি।

সেদিনের আলোচনায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল, যেখানে বলা হয়েছে, চিকিৎসায় গাফিলতির তদন্ত পুলিশের দারোগারা করতে পারবে না ও কথায় কথায় চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা যাবে না। অথচ, পুলিশ একটার পর একটা ঘটনায় "প্রাথমিক প্রমান পেয়ে" চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ৩০৪/৩০৪এ ধারায় মামলা করছে। পুলিশের নিম্নতর কর্মচারী কিভাবে চিকিৎসায় গাফিলতির প্রাথমিক প্রমান পেল, সেও কম রহস্যময় নয়। বিরোধী শূন্য করার ব্রত নিয়ে মুখে গামছা বেঁধে মাস্কেট হাতে যারা উন্নয়নের মৈনাক পর্বত হয়ে পথ আটকে দাঁডিয়ে আছে, এর সিকিভাগ তৎপরতা তখন দেখা গেলে, বাংলার পথে ঘাটে সত্যিকারের গনতন্ত্রের সুবাতাস বইত। পুলিশের তৎপরতা শুধু চিকিৎসক ও মানবাধিকারের বিরুদ্ধে-সেখানে ভাঙ্গড় আর পাঁশকুড়ায় কোন ভেদ নেই।

সভায় মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, পরবর্তি সময়ে চিকিৎসকরা যেন পুলিশ ও স্বাস্থ্য মহানির্দেশকের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। সেই কথা মনে রেখে স্বাস্থ্য নির্দেশকের সাথে দেখা হয় ও কিছু প্রাথমিক আলোচনাও হয়। ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট আইনের যে পরিবর্তনের কথা মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন তার রূপরেখা সম্পর্কে সংগঠনের মতামত জানানো হয় ও পরবর্তীকালে এই নিয়ে কার্য্যকরী আলোচনার প্রস্তাব নিয়েও প্রাথমিক কথাবার্তা হয়। কিন্তু পুলিশ-মহানির্দেশকের সাথে সাক্ষাৎ চেয়ে একাধিকবার বার্তা পাঠালেও কোনরকম সাড়াশব্দ পাওয়া যায় নি। বেশ বোঝা যাচ্ছে যে এমনকি প্রধান প্রশাসকের আশ্বাসও এ বিষয়ে তেমন কার্যকরী নয়।

এই অবস্থায়, এই সন্ত্রাসের পরিবেশ থেকে মুক্তি পাবার জন্য দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন ছাড়া অন্যকোন সহজতর রাস্তা আছে বলে মনে হয় না। এর জন্য চিকিৎসকদের সংঘবদ্ধ হয়ে লড়াই করা খুবই প্রয়োজন।এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে চিকিৎসকরা আগামী ২২ এপ্রিল, রবিবার বেলা ৯টার সময় "পাঁশকুড়া চলো" কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে। তাঁরা বড়মা হাসপাতাল ও স্থানীয় থানায় উপস্থিত হয়ে চিকিৎসকদের সুরক্ষা সম্বলিত দাবীপত্র পেশ করবে। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই আন্দোলনে অংশগ্রহন করার আবেদন জানাচ্ছি।
_____________________________

ডা. রেজাউল করীম। লোকসেবী চিকিৎসক, কলকাতা। সুচিন্তক। কলামিস্ট।

 

 

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়