Ameen Qudir

Published:
2018-04-08 14:42:57 BdST

রেজাউল ভাই এমবিবিএস : বিএমডিসিকে বোকা বানিয়ে ডাক্তার



এ যেন বাস্তবের মুন্না ভাই এমবিবিএস। তার নাম রেজাউল করিম। ছবি সংগৃহীত।

ডেস্ক
____________________________

খোদ বিএমডিসিকে বোকা বানিয়ে এমবিবিএস রেজি: হাতিয়ে নিয়ে ডাক্তারী করছিল রেজাউল করিম। শুধু তাই সে বোকা বানিয়েছে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ অফিসকেও। জালিয়াতি করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ডিএ কোর্সে ভর্তিরও সুযোগ করে নিয়েছেন রেজাউল।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) ওয়েবসাইটে গিয়ে ৬০৯১৯ নম্বর দিয়ে নিবন্ধিত চিকিৎসকদের খোঁজ করলে রেজাউল করিম নামের একজন চিকিৎসকের ছবিসহ নাম দেখা যেত। বাবার নাম আবুল কাশেম। বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার মুসাপুর গ্রামে।

চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতক (এমবিবিএস) পাস করার পর চিকিৎসা করার অনুমতি দেয় বিএমডিসি। রেজাউল করিমকে বিএমডিসি চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন দিলেও তিনি কোনো দিন মেডিকেল কলেজে পড়াশোনাই করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, হাসপাতালের পরিচালকের সই জালসহ ধাপে ধাপে জালিয়াতি করে তিনি এ অনুমতি নিয়েছেন। দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোয় এ নিয়ে চমকপ্রদ রিপোর্ট এসেছে। পত্রিকার অনুসন্ধানী সাংবাদিক মেসবাউদ্দিন নানা অনুসন্ধান, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নথি বিশ্লেষণ করে জালিয়াতির এসব তথ্য পেয়েছেন।
জালিয়াতি করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ডিএ কোর্সে ভর্তিরও সুযোগ করে নিয়েছেন রেজাউল। ডিপ্লোমা ইন অ্যানেসথেশিওলজি (ডিএ) কোর্সে দুই বছর পড়াশোনা করেছেন তিনি। এর আগে নিবন্ধিত চিকিৎসক হিসেবে ফেনীসহ বিভিন্ন স্থানে ক্লিনিক ও হাসপাতালে রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন (প্রাইভেট প্র্যাকটিস)।
সিলেটের জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করার দাবি করে বিএমডিসিতে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলেন রেজাউল। কলেজটি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) চিকিৎসা অনুষদের অধিভুক্ত। বিএমডিসিতে তিনি যে প্রশংসাপত্র ও সাময়িক সনদ জমা দিয়েছেন, তার সবই ভুয়া। এই মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সই করা প্রশংসাপত্রের যে ক্রমিক নম্বর আছে, সেটিও সঠিক নয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, জালিয়াতি করে সইটি বসানো হয়েছে।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ কে এম দাউদ জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমাদের মেডিকেলের নামে ইস্যু হওয়া প্রশংসাপত্র ও ইন্টার্নি সমাপ্ত করার সনদ জাল।’ এই হাসপাতালের পরিচালক মো. তারেক আজাদ বলেন, সব নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কথিত এই শিক্ষার্থী এই মেডিকেলে ভর্তিই হননি।
জাল সনদ দিয়ে কীভাবে রেজাউল চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন পেলেন, জানতে চাইলে বিএমডিসির রেজিস্ট্রার জাহেদুল হক বসুনিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এমনটি হতেই পারে। এখন তো ধরা পড়ল। সনদের সত্যতা যাচাই কত দিনের মধ্যে করতে হয়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেডিকেল কলেজের সনদ নিয়ে আবেদন করলে আমরা সনদ দিয়ে দিই। ভুয়া হলে একসময় না একসময় ধরা পড়বেই। কত দিনের মধ্যে সত্যতা যাচাই করতে হবে, সে রকম কোনো নীতিমালা নেই।’

এই অভাবনীয় জালিয়াতি ধরা পড়তে সময় লাগল পাঁচ বছর

 

এই অভাবনীয় জালিয়াতি ধরা পড়তে সময় লাগল পাঁচ বছর। এভাবে ভুয়া চিকিৎসকের হাতে কোনো রোগীর মৃত্যু হলে তাঁর দায়-দায়িত্ব কে নেবে, জানতে চাইলে বিএমডিসির রেজিস্ট্রার বলেন, ‘আমরা চাই না এ রকম ঘটনায় কারও মৃত্যু হোক। তবে এ রকম ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে আমাদের কিছু করার নাই।’
রেজাউল প্রাথমিক নিবন্ধন পেয়েছিলেন ২০১২ সালে। পরের বছর তিনি স্থায়ী নিবন্ধন পান। বিএমডিসির ওয়েবসাইটে সর্বশেষ ৩ এপ্রিলও তাঁকে নিবন্ধিত চিকিৎসক হিসেবে দেখা যায়। এ বিষয়ে বিএমডিসির সঙ্গে কথা বলার পর গত বৃহস্পতিবার ওয়েবসাইটে গিয়ে তা স্থগিত দেখা যায়।
রেজাউল যে নিবন্ধন নম্বরটি ব্যবহার করেছেন, সেটি মূলত মো. মনজুরুল আহসান নামের আরেক শিক্ষার্থীর। সাময়িক সনদেও একই রকম জালিয়াতি করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেজাউল করিম নামে যে সনদ পাওয়া গেছে, সেটি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। আমরা নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখেছি সনদটি ভুয়া।’
সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, জাল সনদ ব্যবহার করে তিনি উচ্চতর শিক্ষার ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ডিএ কোর্সে দুই বছর অধ্যয়নও করেছেন। এখন প্রশ্ন উঠছে, তিনি এমবিবিএস না পড়েও কী করে ডিএ কোর্সে ভর্তির মতো তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাস করলেন?

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অ্যানেসথেশিওলজি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ আবু তাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেজাউল নামে ওই শিক্ষার্থী আমাদের বিভাগে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুলাই পর্যন্ত ডিএ কোর্সে অধ্যয়ন করেছেন। তবে কোর্স সম্পন্ন করতে পারেননি।’
রেজাউল করিমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি রেজিস্ট্রেশন নম্বরে ভুলের কারণে এসব আলোচনায় আসছে বলে জানান। তিনি সিলেটের রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে পড়েছেন বলে দাবি করেন। আসল রেজিস্ট্রেশন নম্বর জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক আগে পড়াশোনা করেছি তো। দেখে বলতে হবে।’ এ বিষয়ে আরও অনেক প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
শেষ কথা : বিএমডিসি ওয়েব সাইটে গত মঙ্গলবারও রেজাউল করিমের রেজি: তথ্যটি ছিল। তারপর রিপোর্ট দেখে টনক নড়েছে। গত বৃহস্পতিবার তা স্থগিত দেখা যায়।
__________________________

রিপোর্ট জনস্বার্থ বিবেচনায় প্রথম আলোর সৌজন্যে প্রকাশ হল।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়