Ameen Qudir

Published:
2018-04-02 15:18:34 BdST

ডাক্তারগণ যে বৈষম্যগুলোর শিকার:প্রমোশন ভারসাম্য ,অাবাসন,গাড়ি ও অন্যান্য


ছবিটি প্রতিকী। এভাবেই জনগনের সঙ্গে অন্তরে মিলেমিশে সেবা দেন চিকিৎসক। বিনিময়ে প্রাপ্য বেশীর ভাগ সুবিধা বঞ্চিত। মারাত্মক বৈষম্যের শিকার। নানামুখী অপপ্রচারেরও শিকার।


ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো
___________________________________

উদ্দেশ্য_ অন্যান্য সকল ক্যাডারের মত ডাক্তারদেরও ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ডেপুটেশন চাই।

আমরা যদি ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব নাগরিককে উত্তম স্বাস্থ্য সেবা দিতে চাই, তাহলে এখনই এর পরিকল্পনা করতে হবে । এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে দরকার ভাল অবকাঠামো, দরকার ডেডিকেটেড স্বাস্থ্য সেবা দানকারী, দরকার টিমওয়ার্ক ।

বর্তমানে ডাক্তারদের প্রমোশন পুলিশ বা এডমিন ক্যাডারের প্রমোশনের সাথে ভারসাম্য না-থাকায়, উপজেলায় ভাল আবাসনের ব্যবস্থা না-থাকায়, অপ্রীতিকর অবস্থায় সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কায় ডাক্তারগণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেশীদিন থাকতে চান না । উচ্চতর ডিগ্রী করলে প্রমোশন নিশ্চিত হয়, বৈধভাবে অর্থ-উপার্জনের পথ সুগম হয়, সামাজিক মর্যাদা বাড়ে—এ সব কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ডাক্তার কোনভাবে দুই তিন বছর পার করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলে যায় ।
নতুন ডাক্তারদেরকে উপজেলায় থাকার অনুরোধ করে দেখেছি । তারা স্পষ্ট করেই বলেছেন, “আমরা অবিচারের শিকার । ক্যাডার ভেদে বৈষম্য করা হচ্ছে । একজন সহকারী পুলিশ সুপার বা একজন সহকারী কমিশনার সরকারী গাড়ী পেলে আমাকে সরকারী গাড়ী দিবেন না কেন ? একজন সহকারী পুলিশ সুপার বা একজন সহকারী কমিশনার তাঁর চাকুরী জীবনের পাঁচ বছর পূর্ণ করা মাত্র পুরো ক্যাডারের সাথে প্রমোশন পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হচ্ছেন বা সিনিয়র সহকারী সচিব হচ্ছেন । কিন্তু একজন মেডিক্যাল অফিসার কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না হওয়া পর্যন্ত প্রমোশন পাচ্ছেন না । একই দেশে বাস করে, একই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করেও আমাদেরকে অন্যদের চেয়ে বঞ্চিত করা হবে, এটা কি অবিচার নয় ?”
আমি এ প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারিনি ।

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর সমাধান সম্ভব । অন্যান্য ক্যাডারের সাথে সঙ্গতি রেখে উপজেলায় এবং জেলায় স্বাস্থ্য সেক্টরে প্রমোশনের ব্যবস্থা করলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের গ্রামেই রাখা সম্ভব । এ জন্য দরকার উত্তম পরিকল্পনা, ন্যায়বোধ এবং সদিচ্ছা ।
আমি এখানে কিছু কিছু বৈষম্য তুলে ধরছি । আমি মনে করি, সদিচ্ছা থাকলে এ সমস্যাগুলো সমাধান করা মোটেও কঠিন নয় ।

এক. #উচ্চশিক্ষায়_প্রেষণের_ক্ষেত্রে_বৈষম্য--
২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে “সরকারী কর্মচারীদের উচ্চশিক্ষা বিষয়ক নীতিমালা” সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে । এর স্মারক নম্বর ০৫.০০.০০০০.২১১.২২.১০৬.২০০৮.৩৩৯, তারিখ ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪২২ বঙ্গাব্দ (০৬/ডিসেম্ব্র/২০১৫ খ্রি) । এ নীতিমালা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কর্মচারীদের দেশের অভ্যন্তরে উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত । সে প্রজ্ঞাপনের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো আমি তুলে ধরছি--

০৫। প্রেষণঃ
খ) প্রেষণ প্রাপ্তির জন্য কর্মচারীর চাকুরীকাল ০২ বছর হতে হবে, এবং চাকুরী স্থায়ীকরণের শর্তাদি পূরণ হতে হবে ।
০৯। কর্মচারীর বয়স
আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে কর্মচারীর কোর্স সমাপ্তির শেষ তারিখ হতে পিআরএল গমনের তারিখ পর্যন্ত কমপক্ষে ০৩ (তিন) বছর সময় থাকতে হবে ।
১১। বিবিধ
দেশের অভ্যন্তরে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক ইতঃপূর্বে জারিকৃত কোন আদেশ পরিপত্র/নীতিমালার কোন অংশ এই নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে এই নীতিমালা প্রাধান্য পাবে ।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে
ড কামাল আবদুন নাসের চৌধুরী
সিনিয়র সচিব

২০১৫ সালের ৬ই ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারী করা এই প্রজ্ঞাপনটির ৯ম অনুচ্ছেদটি আবার পড়ুন । সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে- “আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে কর্মচারীর কোর্স সমাপ্তির শেষ তারিখ হতে পিআরএল গমনের তারিখ পর্যন্ত কমপক্ষে ০৩ (তিন) বছর সময় থাকতে হবে ।“
এর মানে, ৫৫ বছর বয়সেও উচ্চশিক্ষার জন্য কোর্সে গমনের আবেদন করা যাবে । অথচ, একজন ডাক্তার, তাঁর ৪৫ বছর বয়স হয়ে গেলে আর উচ্চশিক্ষার জন্য প্রেষণের আবেদন করতে পারবেন না । এটা একটা বৈষম্য ।
উচ্চশিক্ষার জন্য নীতিমালার ১১ (ঝ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, পূর্বে জারিকৃত কোন আদেশ বা পরিপত্র যদি এই নীতিমালার (যা ২০১৫ সালের ৬ই ডিসেম্বর জারি করা হয়েছে) সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে এই নীতিমালা প্রাধান্য পাবে । ডাক্তারগণ এত বড় একটি বৈষম্যের শিকার হওয়ার পরও কেউ একে চ্যালেঞ্জ করেনি । এ ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার কায়েম হলে ডাক্তারগণ ৫৫ বছর বয়সেও উচ্চশিক্ষার জন্য ডেপুটেশন পাবেন । এমনটি হলে একজন ডাক্তার তুলনামূলক বেশী সময় উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা দেবার পর উচ্চশিক্ষার জন্য গমন করবেন । চাকুরীর দুই তিন বছর শেষ হতে না-হতেই তাড়াহুড়া করে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করার প্রয়োজন হবে না । আমার তো মনে হয়, একটু ভাল সুযোগ সুবিধা পেলে পাঁচ সাত বছরের আগে কেউ গ্রাম ছাড়বেন না ।
ডাক্তারদের সাথে কৃত বৈষম্য দুইভাবে বাতিল হতে পারে ।

১) উচ্চশিক্ষার জন্য নীতিমালার ১১ (ঝ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, পূর্বে জারিকৃত কোন আদেশ বা পরিপত্র যদি এই নীতিমালার (যা ২০১৫ সালের ৬ই ডিসেম্বর জারি করা হয়েছে) সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে এই নীতিমালা প্রাধান্য পাবে । এই নীতিমালার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক আদেশ জারি করে খুব সহজেই বৈষম্যটি বাতিল করতে পারে ।

২) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত এই পরিপত্রটি সংবিধান বিরোধী । সংবিধানে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমানাধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে । তাই, অন্যদের চেয়ে ডাক্তারদের আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নেই । সুপ্রীম কোর্টে রিট করা হলে, কোর্ট এক আদেশের মাধ্যমে এ বৈষম্য অবৈধ ঘোষণা করতে পারে ।

প্রিয় পাঠকবর্গ, এ বৈষম্য নিরসনের জন্য আমরা কীভাবে কাজ শুরু করতে পারি, পরামর্শ দিন ।
_____________________________

বিসিএস_স্বাস্থ্য ক্যাডার যে_বৈষম্যের শিকার ধারাবাহিক পর্বের ১মপর্ব শেষ । পরের কিস্তি আগামীতে প্রকাশ হবে।
__________________________

Zainal Abedin Tito, BM&DC Registration no A 30584.
Ex-student of M-28 batch of Mymensingh Medical College.
After Qualifying 21st BCS examination, now working in Sylhet division.

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়