Ameen Qudir

Published:
2018-03-08 16:41:01 BdST

বছরে ১০০০০ ডাক্তার বেরুচ্ছে : বিসিএসে ডাক্তার কোটা বাড়ালে স্বাস্থ্যকেন্দ্র শূন্য থাকবে না



ডা.কামরুল হাসান সোহেল

_______________________

বাংলাদেশে চিকিৎসা শিক্ষা খাতে চলছে চরম অব্যবস্থাপনা। কোন নিয়মনীতি না মেনেই যত্রতত্র গড়ে উঠছে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ। প্রায় সমান তালে পাল্লা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সরকারি মেডিক্যাল কলেজও। অধিকাংশ বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ গড়ে উঠছে ভাড়া করা বাড়ীতে যার অধিকাংশেরই নেই ২৫০ শয্যার হাসপাতাল,পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক, লাইব্রেরি, লেকচার গ্যালারি, ছাত্রাবাস সহ ডিসেকশন রুম কোন কিছুই নেই। পুরনো বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নই নিশ্চিত করা যাচ্ছেনা তবু প্রতিবছর নতুন নতুন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।অনেক নতুন সরকারি মেডিক্যাল কলেজেও প্রায় একই ধরনের সমস্যা বিদ্যমান।ফলে মেডিক্যাল চিকিৎসার মান নিম্নগামী হচ্ছে দিন দিন।

প্রতিবছর জানুয়ারি আর জুলাইতে ১০০০০ করে চিকিৎসক এমবিবিএস পাস করে বের হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলো থেকে। কিন্তু এত চিকিৎসকের সরকারি বা বেসরকারি চাকরির কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রতি বছরেই বাড়ছে বেকার চিকিৎসকের সংখ্যা।বেকারত্ব চিকিৎসকদের মনে হতাশার জন্ম দিচ্ছে।
প্রতি বছর বিসিএসে ১০০০/১৫০০ চিকিৎসক নিয়োগ দিলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো সবসময় চিকিৎসক থাকতো,কখনো চিকিৎসক শুন্য হয়ে পড়তো না। কিন্তু ৪/৫ বছর পর পর হঠাৎ করে ৫০০০/৬০০০ চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়,পরের বছরগুলোতে ৩০০/৪০০ চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয় ফলে প্রায়ই চিকিৎসক শুন্য হয়ে পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো। প্রতিবছর ১০০০/১৫০০ চিকিৎসক নিয়োগ দিলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকেও মুক্তি পেত অনেক চিকিৎসক।

স্বাস্থ্য ক্যাডারে পদোন্নতি প্রক্রিয়া ধীর অন্যান্য ক্যাডারের তুলনায়।অন্য ক্যাডার বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডারে যেসব সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় তার দশ ভাগের এক ভাগ সুযোগ সুবিধাও পায় না স্বাস্থ্য ক্যাডারের লোকজন। কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে চিকিৎসকরা,প্রায়ই স্থানীয় গুণ্ডাপাণ্ডার হাতে শারিরীক নিপীড়নের শিকার হতে হয়। নারী চিকিৎসকরাও রেহাই পান না ইভটিজিং এর শিকার হয়। সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন চিকিৎসকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি বা নিশ্চিত করার কোন উদ্যোগ ও নেয়নি আজ পর্যন্ত।

কোথাও কোথাও স্থাপনা আছে কিন্তু জনবল নেই, কোথাও কোথাও জনবল আছে কিন্তু স্থাপনা নেই। কোথাও কোথাও সাপোর্টিং স্টাফ নেই, নার্স নেই, ওয়ার্ড বয় নেই, আয়া নেই কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক আছে। আবার কোথাও তার উল্টো চিত্র। গাইনিকোলজিস্ট আছেন,সার্জন আছেন কিন্তু এনেসথেটিস্ট নেই। কোথাও আবার এনেসথেটিস্ট আছেন কিন্তু গাইনিকোলজিস্ট,সার্জন নেই।

কোথাও কোথাও ৫০ শয্যার অবকাঠামো আছে কিন্তু ৩১ শয্যার জনবল ও নেই, তাই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলো।

কোথাও কোথাও রোগ নির্ণয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে কিন্তু তা চালানোর মত দক্ষ লোক নেই। আবার অন্য কোথাও দক্ষ লোক আছে কিন্তু রোগ নির্ণয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই।

চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার জন্য দরকার সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়ন।
________________________

ডা.কামরুল হাসান সোহেল
আজীবন সদস্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ , কুমিল্লা জেলা।
কার্যকরী সদস্য স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
আজীবন সদস্য,বিএমএ কুমিল্লা।
সেন্ট্রাল কাউন্সিলর, বিএমএ কুমিল্লা

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়