Ameen Qudir
Published:2018-02-20 19:23:32 BdST
২০২৩ সাল: হাসপাতালে ঢুকে ডাক্তারপেটাচ্ছে গুন্ডারা : প্রফেসররা দরজার ছিটকিনি দিয়ে লুকিয়েছেন
ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন
__________________________
সময়কাল ২০২৩ ,ঢাকা।
"বাবা বাবা" বলে চিৎকার করে দৌড়ে এসে অঝোর কাদতে শুরু করলো ছেলেটা।
মাত্র হাসপাতাল থেকে বাসায় ঢুকেছি,ঢুকেই দেখি ছেলে চিৎকার করে কাদছে।আমি হতভম্ব।আমার বাবাটাকে কি ওর মা কিছু বলেছে?চোখ গরম করে ওর মা'র দিকে তাকালাম।কই না তো,সে ও আমার মতোই হতবাক।
হতভম্ব ভাব কাটিয়ে ছেলেকে কোলে তুলে।নিলাম।"কি হইছে আমার বাবাটার।কে কি বলছে বাবা তোমাকে?দেখো,বাবা এসে গেছে,আর কোন ভয় নাই।"
ছেলেটা কাধে মুখ লুকাতে লুকাতে আঙুল দিয়ে টেলিভিশনের দিকে ইংগিত করে।তাকালাম,আর আমার ছেলেটার এভাবে ভয়ে কান্না করার কারণটা পরিষ্কার হয়ে গেলো।
তেমন কিছুই না,রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারদের পেটাচ্ছে কারা যেন।ইন্টার্ন,মেডিক্যাল অফিসার থেকে শুরু করে যে যেখানে আছেন সবাই মার খাচ্ছেন,আর প্রফেসররা যার যার ঘরের দরজায় ছিটকিনি দিয়ে শুকনো মুখে বসে আছেন।
একঘেয়ে কন্ঠে সংবাদ পাঠিকা খবর পড়ে যাচ্ছেন,"তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন ডাক্তারদের সাথে রোগীর আত্মীয়দের সংঘর্ষ।জানা যায়,রোগীর আত্মীয়দের প্রেশার না মেপে দেয়ার কারণে কথা কাটাকাটির সূচনা হয়,ক্রমেই তা হাতাহাতি এবং পরবর্তীতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ।পরবর্তীতে পুলিশ এসে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনে।এই ঘটনায় যেন কোন অবস্থাতেই হাসপাতালের কাজ ব্যাহত না হয়,সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং চিকিৎসকগণ নিজেদের কাজ বন্ধ না করে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।তারা স্মারকলিপি প্রদান করবেন বলে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে।আহতদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।অভিযুক্ত ইন্টার্নের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবার প্রক্রিয়া চলছে।"
সংবাদ পাঠিকা অন্য খবরে চলে গেলেন।আমার চোখে ভাসছে আমার জুনিয়র ডাক্তারগুলোর মার খাওয়া মুখ,অন্যান্য পদস্থ ডাক্তারদের অসহায় আত্মসমর্পণ আর প্রশাসনের তাচ্ছিল্য মাখা মুখগুলো।আর হাসপাতালের ভেতরে বাইরে লাঠিসোঁটা হাতে সেই সন্ত্রাসী বহিরাগতদের বীরোচিত আস্ফালন।
আমার বাচ্চাটা ভয় পেয়েছে।সে ভেবেছে ওইখানে তার বাবাও হয়তো আছে সেই মার খাওয়াদের দলে।তার বাবাও যে রোজ এপ্রন গায়ে হাসপাতালে যায়,আর যাদের মারছে তারাও তো এপ্রন গায়েই মার খেয়েছে।ছোট মানুষ,বুঝতে পারেনি পুরো বিষয়টা।এখনো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদছে কাধে মাথা রেখে।
আমি অসহায় হয়ে ওকে কোলে নিয়ে বসে থাকি।আজ ডাক্তার সমাজের মান বেচেছে,কেউ আক্রমণকারী কাউকে কোন বাধা দেয়নি।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মার খেয়েছে।চিকিৎসা পেশা মহান,এখানে ধৈর্য ধরতে হয়,রোগীদের আবেগ বুঝে চলতে হয়।আজ এরা সবাই চিকিৎসক হিসেবে সফল।
শুধু আমি হার মেনে গেছি আমার ছোট্ট বাচ্চাটার কাছে,যে দেখেছে তার বাবা কিংবা বাবার মতো কিছু মানুষের অসহায় আত্মসমর্পণ।
হোক না কিছু অপমান কিংবা শারীরিক লাঞ্ছনা, দিনশেষে আমি তো একজন সফল চিকিৎসকই,তাই না???
___________________________
লেখক ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন । ঢাকা ।
আপনার মতামত দিন: