Ameen Qudir
Published:2018-02-11 17:00:50 BdST
ছয়মাসে সাত হাসপাতালের সাত বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে বললেন :যাচাই করলাম,কেমন ডাক্তার
ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল ,
শিল্পী ও লোকসেবী
________________________________
রোগীর ইতিহাস নিতে গিয়ে ব্যাড়াছ্যাড়া অবস্থা।
চিকিৎসার জন্য ছয়মাসে সাত হাসপাতালের সাতজন বিশেষজ্ঞ দেখিয়েছেন। প্রথম জনই রোগ সনাক্ত করেছেন এবং চিকিৎসাও দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিবারই চিকিৎসা কিছুদুর এগিয়ে নিয়ে তারপর আবার বন্ধ করেছেন। আবার আরেকজন চিকিৎসক দেখিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন " যাচাই কইরা দেখলাম। সবাই বলে অমুক ডাক্তাররে দেখান।"
সব ডাক্তারই আবার বাড়তি আলাপে যাননি। খুশি মনে একই চিকিৎসা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
রোগীরা প্রতারিত হবার জন্য নিজেরাই ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। ডাক্তারও জানেন এই রোগী তাকে ' যাচাই' করছে। ফলে একটু 'বাজিয়ে' দেন।
এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে প্রধান তিনটি কারণ হলো ১. রেফারেল সিস্টেম না থাকা, ২.বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এই দেশে খুবই ' ইজিলি এভেইলেবল' ৩. বাংলাদেশে কারো অসুখ হয়েছে শুনলে পরামর্শ দেবেননা এমন লোক নেই। শুধু পরামর্শই না রীতিমত চাপে ফেলে দেন।
অনেকেই বলবেন রোগীদের আস্থার অভাব। যে রোগী মাইন্ড সেট করে রাখেন ' আমি আস্থা রাখিনা' সেই রোগীর আস্থা কিভাবে ফিরাবেন? তাছাড়া আস্থা না রাখলে প্রথম ডাক্তার দেখিয়েই বিদেশ চলে যাওয়ার কথা। আমার কাছে বিষয়টা এত সরল মনে হয়না। আস্থাহীনতার আরেকটি উৎস এই আত্মীয় স্বজনদের মন্তব্য। রোগীর হয়ত ডাক্তারের কথাবার্তা ভাল লেগেছে, কাউন্সেলিং ঠিক মনে হয়েছে কিন্তু যেহেতু বড় খালু বলেছেন তোমার বাপের চিকিৎসা ঢাকায় করতেছ/ পিজিতে করতেছ? তোমার কি টাকার অভাব?- তখনই চিন্তাটা ঘুরে যায়।
ভেবে দেখলাম -রোগীর জায়গায় আমি থাকলে আমিও হয়ত তাই করতাম। যে দেশে চাইলেই যে কোন সময় যে কোন বিশেষজ্ঞ দেখানো যায়, ভিজিটও পাঁচশ থেকে একহাজার টাকা- সেখানে পাচ ছয়জন ডাক্তার দেখানো তো কোন ব্যাপারই না।
দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে একই প্রশাসনের আওতায় না আনলে এবং রেফারেল সিস্টেম না ঠিক করেলে এই আস্থাহীনতা চলবেই। কারণ অপশন থাকলেই মানুষ সেটা নিতে চাইবেন। মানুষের সামর্থ ও Feeling of insecurity সমান হারে চলে। মানুষ ধনী হলেই ছেলে মেয়েকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়। মনে করে এই দেশে মানুষ হবে ক্যামনে? সামর্থ না থাকলে " ধন ধান্য পুষ্প ভরা"।
গরীব মানুষদের দেখেছি বংগবন্ধুতে চিকিৎসা নিতে পারলেই তারা সর্বোচ্চ পেয়েছেন বলে মনে করেন। বড়লোকের কাছে এটা কোন হাসপাতাল!
আমি মনে করি বিশেষজ্ঞদের ভিজিট বাড়ানো উচিত। দ্বিগুন বা তিনগুন। তারা সময় দেবেন, অল্প রোগী দেখবেন কিন্তু ভিজিট নেবেন ন্যুনতম তিনহাজার টাকা।
সস্তা হলেই জনবান্ধব হবে এমনটা আমি মনে করিনা। চ্যারিটি বা জনসেবা ভিন্ন জিনিস। সেটা আপনি অবশ্যই করবেন। নিয়মিত ফ্রি রোগী দেখুন, অর্ধেক ছাড়ে রোগী দেখুন। সেটা রাখতেই হবে। তবে নিয়মের ভেতরে। সামর্থ্যবান রোগীরা যেন জনসেবার গল্প শুনিয়ে গরীবের কোটা নিজেই না মেরে দেয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
___________________________________
ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
আপনার মতামত দিন: