Ameen Qudir

Published:
2017-11-18 17:28:56 BdST

"বিলাতে আমরা হকারি করি না, ডাক্তারি করেই মানুষের সেবা করি"




ডা. সুমন ইসলাম
_______________________________

 

 


ডাক্তার প্রতিদিনে অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক স্যার লিখেছিলেন , সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের মত সস্তায় সুচিকিৎসা কল্পনাও করা যায় না ।
তিনি ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে

জানান,

বিলাতে সাধারণ অসুখ বিসুখ হলে বিপদ। গড় ১৫ দিন লাগবে এমবিবিএস
ধরনের একজন জেনারেল প্র্যাকটিশনার দেখাতে।

বিলাতে বিশেষজ্ঞডাক্তার দেখাতে চাইলে বাংলাদেশের মত যে কোনও দিন দেখান যায়।
তবে কড়ি গুনতে হয় অকল্পনীয় । প্রথম ভিজিট ৩০০০০ টাকা। নামি বিশেষজ্ঞ হলে ৫০০ পাউন্ড, মানে ৫০/৬০ হাজার টাকা।(এ দেশে ১৫০০ টাকা)।

আর যায় কোথায় এদেশের মিডিয়ার মত সর্বশ্রেনীর আতেলরা ঝাঁপিয়ে পড়ল বাংলাদেশী ডাক্তারদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে।

তারা দেশে বাংলাদেশী ডাক্তার আর থাকতে দেবে না। সবাইকে তাড়িয়ে লন্ডন, সিঙ্গাপুর, ব্যাঙ্গালোর, মাদ্রাজ আর ভেলোর থেকে ডাক্তার কবিরাজ এনে সব হাসপাতাল ভরিয়ে ফেলবে।

সাইফুল আলম লিখেছেন , আপনারা সবাই বিলাত চইলা যান না কেলা! পাউন্ড কামাবেন আর বগল বাজাবেন ।

Ali Newaz লিখেছেন আপনাকে কি বলব কেননা আপনি শিক্কিতমানুয়।ঐ দেশের ৫০০পাউন্ড মানে ৫০০টাকা আর আমার দেশে নেন ১৫০০টাকা মানে ১০০০টাকা বেশী নিচ্ছেন ।

 

তাকে সমর্থন দিয়ে
Anwarul Azim বলছেন, একদম ঠিক বলেছেন। একজন শিক্ষিত ডাক্তার কিভাবে এইরকম বাস্তব বিবর্জিত কথা বলেন ভেবে পাই না।
Faizur Rahman বলেছেন, বিলাতের সাথে বাংলাদেশের তুলনা চলে কি ? বিলাতের লোকদের মাথাপিছু আয় কত আর বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কত ?

 

 

Aminul Akanda Ratan বলেছেন, বিলাতে ১০০০০ থেকে ২০০০০ বাংলাদেশি টাকায় ড্রাইভার পাবেন না । ৫০০০ টাকায় ২৪ ঘন্টার জন্য কাজের লোক পাবেন না ।
৫০০ পাউন্ড মানে ওদের কাছে ৫০০ টাকা । আমাদের কাছে যতই হোক । আপনার মত একজন শিক্ষিত লোকের কাছ থেকে এমন পোষ্ট আশা করা যায় না ।

 

এই হচ্ছে আমার সোনার বাংলাদেশের অবস্থা। এখানে হিংসা ছাড়া কোন কথা নাই।

 

 

 

আমার মেয়ে বিলাতের নাগরিক। তার স্বামী এর পিত্তে পাথর ধরতেই GP র, লাগে ৬ মাস।এর পর গেলেই প্রতিবার শুধু paracetamol. বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করে না।


স্যারের সঙ্গে একমত হয়ে বলতে চাই ,

সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশ, ভারতের মত সস্তায় সুচিকিৎসা কল্পনা করা যায় না।

মুজিবুল হক স্যারে র প্রতিটা কথা বিালোকের মত সত্য।

 

বাংলাদেশীরাও খুব মেধাবী। BSMMU( আগের PG) হাসপাতালে, ৫০০টি কিডনি দান/গ্রহনের((transplant) জটিল operation এর সবগুলোই সফল হয়েছে। খুবই কম পয়সায়।

অতিরিক্ত জনসংখ্যা, স্বাস্থ্যখাতে লো-বাজেট, ডাক্তারদের ওপর অতিরিক্ত কাজের চাপ ( ঢাকা মেডিকেল এ ২৬ শবেডে এ সর্বদা ৪৫০০ এর বেশী রুগী, সারা দেশেই এরকম অসম্ভব অবস্থা ।


অকল্পনীয় ক্লান্তিকর কাজ (সপ্তাহে শুধু ডাঃদেরই একদিন ছুটি, , এ দেশেই সকল চাকরিরত দের, ২ দিন।,( সারাটি দুনিয়াতে প্রয়োজন থাকলে বেশী টাকায় বদলী দেয়া হয়,কিন্ত ডাঃ এর ছুটি ২ দিন ), health delivery ব্যবস্থাকে অস্থীর/অসম্ভব করে রেখেছে।

বিদেশের সঙ্গে তুলনায় এদেশের কমমুল্যের
চিকিৎসা সুবিধা জনগনের কাছে আরেকটু আদৃত হওয়া কাম্য ছিল।

এত অসম্ভবের মধ্যে, এত কষ্টের মাঝেও এদেশের ডাক্তারদের অবদান এর যুক্তিযুক্ত প্রশংসা , করলেও কিছুটা শ্লাঘা অনুভূত হত।

কিন্তু স্যার , কে শোনে কার কথা। এখানে কেবলই অবমূল্যায়ন আর অপমান। এদেশে কবিরাজরাই সঠিক দরকারী চিকিৎসক।
বাংলাদেশের এমবিবিএস ডাক্তাররা সবাই বিদেশে গিয়ে ভাল করছেন। কেউ টেক্সীও চালান না। কবি আবু হাসান শাহরিয়ারের কথা মত জুতা পালিশ বা হকারি করেন না।
জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশীর ভাগ পাশ করা লোকজন বিদেশ গিয়ে কি পেশায় আছেন , আমরা ইউরোপ আমেরিকা গিয়ে রাস্তাঘাটে ফুটপাতে দেখতে পাই বাস্তব চিত্র। কিন্তু ডাক্তার যারা গেছেন , সকলেই নিজ ডাক্তারি পেশাতেই আছেন।
ইউরোপ আমেরিকায় এমন ডাক্তার কম নয় , যারা সেখানকার বড় ডাক্তার। আয় পাতি করছেন সেদেশের মত।

আমি নিজেও ইউরোপেই থাকি। এখানে জুতা পালিশ করি না। ডাক্তারি করেই খাই। বাড়ি গাড়ি করেছি।
দেশে সঠিক মূল্যায়ণ পেলে দেশ ছেড়ে আসতাম না। মানুষের সেবা করতাম; যেমন এখন এই ইউরোপীয় দের করি।

______________________________
ডা. সুমন ইসলাম । ইউরোপ প্রবাসী চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়