Ameen Qudir

Published:
2017-09-16 19:29:44 BdST

"ম্যাম,আমি আসলে ৩০ টা ঘুমের ঔষধ খেয়েছি"


 

 

 

ডা. মিথিলা ফেরদৌস

________________________

কম বয়সী শ্যামলা মেয়ে মায়ের সাথে এসেছে।জিজ্ঞেস করলাম,
--সমস্যা কি?
মেয়ে মা দুইজনেই ইতস্তত করছে।মা বললেন,
--ওকে মেরেছে।
--কে মেরেছে?
---আমিই মেরেছি।(মায়ের উত্তর।)
মেরেছে আবার বলে মেরেছি,কেমন জানি উলটা পালটা হিস্ট্রি।বললাম
---কোথায় কোথায় মেরেছেন?
দেখলাম সেইটাও ঠিক মত বলতে পারেনা।নিজেই দেখলাম,হাত দিয়ে চাপ দিয়ে পরিক্ষা করলাম ব্যাথার কিছুই মনে হলোনা।তবুও একটা ব্যাথার ঔষধ সাথে গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ দিয়ে বিদায় দিলাম।গাদা গাদা রুগীর মধ্যে আবার আসছে তারা।

এসেই মেয়েটা বলে
---ম্যাম একটু কথা ছিল।


---কি কথা?
---আমার খুব খারাপ লাগছে।
---হাসপাতালে ঘোরাঘুরি না করে বাসায় গিয়ে রেস্ট নেন,ঠিক হয়ে যাবে।
(বাইরে উপচে পরা রুগী,আমি এক রুগী নিয়ে বেশিক্ষন থাকলে তারা বিরক্ত হয়)
---ম্যাম,আমি আসলে ৩০ টা ঘুমের ঔষধ খেয়েছি।
এইবার আমার বিস্ময় আর বিরক্তির পালা।
---আপনি ৩০ টা ঘুমের ঔষধ খেয়ে এমন ঘুরে বেরাচ্ছেন কেন?কেন আমাকে প্রথমেই বলেন নাই,টিকিটের ওখানেও আসল কথাটা বললে দ্রুত ব্যাবস্থা হতো।

 

একটা মেয়ে সুইসাইড করবে সেইটাও ঠিকমত করতে পারেনি,ঠিকমত হিস্ট্রি দিবে এইটাও ঠিকমতো করতে পারেনি।এইসব মানুষইই সাধারণত সুইসাইড করতে যায়।কিছুই ঠিকমতো করতে পারবেনা,এইটা কেমন কথা?
এই মেয়ে আমি শিউর,দশটা উপর ঔষধ খায় নাই।ত্রিশটা খেয়ে হাসপাতালে এমন ঘুরে বেড়ানোর কথা না।এই হিস্ট্রি ইমার্জেন্সিতে দিলে সেখানে ওয়াস করা আরেক কস্টের ব্যাপার।মোট কথা ডাক্তারের জায়গায় এসে অন্তত সত্য টুকু বলুন,যাই ঘটে থাকুক জীবনে,তাহলে আপনাকে এত ঝামেলায় পরতে হয়না।

 

আমার অভিজ্ঞতায় আমি যতগুলি সুইসাইডাল কেস পেয়েছি বিভিন্ন জায়গায়,তাদের মধ্যে মেয়ের সংখ্যা বেশি হলেও,এরা কেউই মরার জন্যে সুইসাইড করতে যায়নি,যার উপরই হোক একটা প্রেশার ক্রিয়েট করার জন্যে এই কাজ করে তারা।আর ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগই মারাই যায়।ছেলেদের কষ্ট পাবার থ্রেসল্ড মেয়েদের চেয়ে অনেক বেশি,তাই যদি কষ্ট পাই ই তাহলে,এমন পহ্না বেচে নেয় আর বেচে ফিরতে হয়না।

 

সুইসাইড করার বহু পথ আছে,সবচেয়ে কঠিন পথ গলায় ফাস দেয়া।দড়ি জোগাড় থেকে শুরু করে যেকোন কিছুতে টাংগানো তারপর ঝোলা,তারপর নিচের সাপোর্ট সরানো কি ভয়াবহ ভাবাই যায় না।যে এই পথ বেছে নেয় তীব্র কষ্ট থেকেই সে ফাইনাল ডিসিশন নিয়ে ফেলে।তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফাসির কেস গুলো হমিসাইড কে সুইসাইড বলে চালানো হয় বলে আমার ধারনা।সুইসাইডের এত সহজ সহজ উপায় থাকতে নিজেকে একটা মানুষ কেন এত কষ্ট দিয়ে মারবে,নিজের উপর কিসের এত রাগ?

আমি এমনও দেখেছি,এক মেয়ে ঘুমের ঔষধ খাবার পরে,তাকে তার হাজবেন্ড ওভারডোজে ইন্সেক্ট পয়জন খাওয়ায় এনেছিলো,মেয়েটা মারাই গিয়েছিল।

 


যাইহোক সুইসাইড যেই করুন,করার আগে আপনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা,মানুষ জনের কথা ভাবুন,যারা আপনাকে ভালবাসে তাদের কস্টের কথা ভাবুন,বা আপনি যারে ভালবেসে এই কাজ করতেছেন,তার কথাও ভাবুন,তার কিন্তু কোন ক্ষতি নাই,বরং আমার কাছে তারজন্যে শাপে বর মনে হয়।সবচেয়ে বড় নিজের কথা ভাবুন,মরে গেলে তো সমস্যা না বেচে গেলে আরও অনেক কষ্ট পেতে হবে মানে শারীরিক কস্টের কথা বলছি,মানসিক টা বাদ দিলাম।আর যদি কারো উপর চাপ দিতে ৫/১০ টা ঘুমের বড়ি খেয়েই ফেলেন তো অন্তত ডাক্তারের কাছে সঠিক হিস্ট্রি দিন।জীবনকে ভালবাসুন।নিজে ভাল থাকুন,ভাল রাখুন আপনজনদের।

______________________________

ডা. মিথিলা ফেরদৌস। ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়