Ameen Qudir

Published:
2017-09-11 17:44:01 BdST

বোনের মনে চাপ পড়লে জমজ ভাইয়ের শরীর কেন ব্যথা পায়?



 

প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম

___________________________________

 

 


মনের উপর চাপ পড়লে( বোন) , কেন তার জমজ ভাই ( শরীর) ব্যথা পায়?

এর রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। আসুন জানি কি সে ব্রেইন মেকানিজম :

মানসিক চাপের ফলে ব্রেইনের " হাইপোথেলামাস" থেকে সিআরএইচ হরমোন নিঃসরন হয়> সেটি এসিটিএইচ হরমোন নিঃসরন করে> যা এড্রিনাল কর্টেক্সকে সক্রিয় করে >ফলে গ্লুকোকরটিকয়েড এর পরিমান বেড়ে যায়।
এই গ্লুকোকর্টিকয়েড- শরীরকে জরুরি অবস্হায়( ইমারজেন্সী) যা যা করনীয় তা করতে সামর্থ্য জোগায়- অনেকটা যুদ্ধাবস্হায় রাস্ট্র যা করে তেমন( বাংলাদেশ - মায়ানমার নয়,ভারত- পাকিস্তান বা ভারত- চীন যুদ্ধাবস্হায় গেলে যেমন ঘটে)।
কি করে? শরীরকে বাড়তি শক্তি জোগায়,( সব ধরনের কেন্দ্রীয় রসদ জোগান দেওয়া) , বিপদ মোকাবিলায় হার্টকে অধিক সক্রিয় করে তোলে( এটি হচ্ছে ক্যান্টনমেন্ট )।

অন্য দিকে শরীরের স্বাভাবিক কাজ- কর্ম স্হগিত হয়ে পড়ে( দেশে জরুরি অবস্হায় যেমনটি ঘটে-)

- স্বাভাবিক বেড়ে উঠা( গ্রুথ), প্রজনন করা,রোগ প্রতিরক্ষা ব্যবস্হার দিকে কম নজর দেওয়া( বহিঃশক্তির আক্রমন রোখা তখন প্রধান লক্ষ্য) ।

প্রকৃত বিপদ মোকাবিলার জন্য স্রষ্টা আমাদের ব্রেইনে এরকম " প্রতিরক্ষা " ব্যবস্থা তৈরী করেছেন,যাতে আমরা বিপদকে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারি। কিন্তু ব্রেইন যখন ভুল করে " ধারনাগত" বিপদাশঙ্কা বা " উদ্বেগে" বার বার এরকম ইমার্জেন্সী অবস্হা জারি করে তখন এই ক্রমাগত ও প্রায় স্হায়ী যুদ্ধাবস্হার কারনে আমাদের সকল সহায়,সম্পদ, শক্তি নষ্ট হয়ে যা।( ধরুন বাংলাদেশকে যদি এরকম অকারনে ২০ বছর যুদ্ধে লিপ্ত থাকতে হয়,দেশের ও আমাদের অবস্হা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাড়াবে?)

যারা দীর্ঘ স্হায়ী ও উপরযুপরি " স্ট্রেস বা চাপের" মুখে থাকে তাদের অবস্থা এরকমই হয়।

এবার দেখা যাক স্ট্রেসের ফলে কি হয়:

১। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা( ইম্যুনিটি) কমে যায়-

ইম্যুনিটির প্রায় সব উপাদানই মানসিক চাপ,উদ্বেগ,উৎকন্ঠার কারনে পরিবর্তিত হয়ে যায়।ফলে তারা সহজে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন,বিশেষ করে ভাইরাস জনিত রোগে।" কোষ নিয়ন্ত্রিত" ইম্যুনিটি কমে যায়।এমনকি রোগ প্রতিরোধের জন্য আমরা যে" ভ্যাকসিন" দেই এর কার্যকারিতা ও কমে যায়।( ঠেলা এবার সামলান)

২। অনিদ্রা বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে- এই অনিদ্রার কারনে ও ইম্যুনিটির " এন- কে" কোষ ও "আই এল " নামক দুটি গুরুত্ব পূর্ন উপাদান কমে যায়।ফলাফল আরো রোগের ঝুকি বৃদ্ধি পায়।

৩। শরীর দুর্বল, কাহিল হয়ে পড়ে-

এর কারন " সাইটোকিনস" এ পরিবর্তন। তাই শারীরিক রোগ না থাকা সত্বেও তারা অল্পতে হাপিয়ে উঠেন,পরিশ্রমের কাজ করতে পারেন না।

৪। বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ব্যাথায় ভুগেন-

এর কারন " সাইটোকিনস" এর মাত্রায় হেরফের ঘটে।এই সাইটোকিনসের জন্য ব্রেইনের ব্যথা অনুভবের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।ফলে বিভিন্ন ধরনের শারিরীক ব্যথায় আক্রান্ত হন,যেগুলো শুধু কষ্টদায়ক নয়,দীর্ঘস্থায়ী ও হয়ে থাকে।

৫। স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়া-

এর কারন " এন্ডোটক্সিন" নামক হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া।ফলে অস্হিরতা,উৎকন্ঠা বেড়ে যাওয়ার সাথে মনে রাখার ক্ষমতা কমে যায়।

৬ সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ন হচ্ছে " হার্টের" সমস্যা -

হার্ট এ্যাটাকের প্রধান কারন রক্তনালীতে ক্রমশ চর্বি জমে শক্ত ও মোটা হয়ে যাওয়া।রক্তনালির এই মোটা ও শক্ত হয়ে যাওয়ার প্রায় প্রতিটি পর্যায়ে মানসিক চাপ ও বিষন্নতার ভূমিকা রয়েছে।চাপের ফলে রক্তের একটি মার্কার " এস- আই- সি- এ- এম" এর পরিমাণ খুবই বেড়ে যায়।এই মার্কারের পরিমান বেশি হলে " হার্ট এ্যাটাকের" সম্ভাবনা বেড়ে যায়

৭। বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন - ক্রমাগত চাপ বিষন্নতা রোগ সৃষ্টি করে।আবার হার্ট এ্যাটাকের পর উপরের মার্কার বেড়ে যাওয়ার কারনেও বিষন্নতা রোগ দেখা দিতে পারে।

৮। গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা- বা রিমাটয়েড আর্থারাইটিস: এটি এক ধরনের অটো-ইম্যুইন ডিজিজ।ক্রমাগত চাপের ফলে মস্তিস্কের চাপ নিয়ন্ত্রন অক্ষ" এইচ পি এ" দুর্বল হয়ে পড়ে।ফলে অটো ইম্যুনিটিকে দাবিয়ে/ চাপিয়ে রাখা যায় না।চাপ বা বিষন্নতায় তাই বাতের ব্যথা বাড়ে ও তা দীর্ঘ স্হায়ী হয়।

৯ সোরিয়াসিস-: একটি মারাত্মক ধরনের চর্ম রোগ।মনোচিকিৎসায় তারা ভালো ফল পেয়ে থাকেন।

১০। এমনকি ক্যানসার-: এদেরকে ও মনোচিকিৎসা দিয়ে বেচে থাকার সময় বাড়ানো যায়( তবে হোমিওপ্যাথির মতন এ দাবী নয় যে ক্যানসার এভাবে ভালো করা যায়)। ক্যানসারের শেষ অবস্হায় কেমোথেরাপির যন্ত্রনাদায়ক চিকিৎসার চেয়ে মনোচিকিৎসা কম কার্যকর নয়
( লেখাটি অনেক আগে দৈনিক " যুগান্তরে" উপসম্পাদকীয় পাতায় ছাপা হয়েছিল।পরে এটি " মন ও মানুষ " বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করি।ব্যথা শব্দটি কারেকশন করতে পরামর্শ দেওয়ার জন্য সুপ্রিয় বন্ধু,দেশের অন্যতম কথা সাহিত্যিক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. Mohit Kamal এর প্রতি কৃতজ্ঞতা)

________________________________

 

 

প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম
সোশাল সাইকিয়াট্রিস্ট
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ
জাতীয় মানসিক স্বাস্হ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল,ঢাকা
মোবাইল :০১৭১৫১১২৯০০
ইমেইল :[email protected]

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়