Ameen Qudir

Published:
2017-06-20 17:18:31 BdST

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বললেন, আমার ম্যালেরিয়া হয়নি তবু ম্যালেরিয়ার জন্য পরীক্ষা করলেন কেন


 

 
ডা. রেজাউল করীম
______________________________


"জ্ঞান-বিহঙ্গের দুইটি ডানা, মতামত তার একটি। মতামতের পরাপারে জ্ঞানের সাগরে অবগাহন করতে পারলে, সে মুক্ত আকাশে ডানা মেলে দিকবিদিকে গেলেও আর পথভ্রষ্ট হয় না" (রুমি/ মসনবী)।
যে কোন বিষয়ে মতামত দেওয়া আমাদের জন্মগত অধিকার, যে যত অন্ধ সে অপরের পথনির্দেশ করতে তত পারঙ্গম। আমাদের মত আম জনতার মতামতের দাম নেই, যা বলি পাগলের প্রলাপ বা অমৃতম বালভাষিতম তবে উডিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু যারা দেশনেতা তাদের এটা সাজে না। রাজন্যপ্রথা বিলোপ হয়েছে বহুদিন। এখন একক ব্যক্তি কোন নীতি তাৎক্ষনিকভাবে ঘোষনা করবেন না, এটাই আমাদের সংবিধানের নির্দেশ।


মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেবেন আর মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করবেন। এই দেশ, এই রাজ্য কারো মৌরসীপাট্টা নয়, যে "আমি দিলাম, আমি করলাম" এসব বলা যায়। সম্প্রতি একজন আমাকে দুটি ভিডিও ক্লিপিংস পাঠিয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে দুজন প্রবীন রাজনৈতিক ব্যক্তি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খাচ্ছেন। একজন স্টেডিয়াম বানানোর টাকা বেশী খরচা করে ফেলেছেন আরেকজন কোথায় একটা হাসপাতাল বানাতে চান। এখানে স্টেট পলিসিটি ঠিক কী?

সরকারের কী কোন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে, যে কি উন্নয়ন হবে, কোথায় হবে, কত টাকা খরচ হবে, ইত্যাদি ঘোষনা করা হয়েছে? নাকি একজন ব্যক্তির নিজস্ব মতই স্টেট পলিসি!!
ঠিক একই জিনিস স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও দেখতে পাচ্ছি। সরকার গত আর্থিক বছরে ৩০০০ কোটি টাকা স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ করছে অর্থাৎ মাথাপিছু ৩০০ টাকা তার খরচ। গত বছরে মাথা পিছু ব্যক্তিগত ব্যয় ছিল ১৮০০ টাকা অর্থাৎ সরকারী ব্যয়ের প্রায় ছ'গুন। সরকার কি আরো বেশী টাকা খরচ করতে পারতো? স্বাস্থ্য কী সরকারের অন্যতম প্রধান বিবেচ্য বিষয়? গুটি বসন্ত ও পোলিও নির্মূলকরণ আমাদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য কিন্তু জনস্বাস্থ্য ও শিশুমঙ্গলের সর্বস্তরে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।

আমাদের নাগরিক সমাজ সবকিছু নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে কিন্তু স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা মানে চিকিৎসার ত্রুটি নিয়ে আলোচনা বা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহি:প্রকাশ। একদিন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও দূরদর্শনের অনুষ্ঠানে বললেন- আমার জ্বর হয়েছিল। ম্যালেরিয়া হয়নি তবু ম্যালেরিয়ার জন্য পরীক্ষা করলেন!! সাধারনভাবে মানুষ চিকিৎসা নিয়ে খুব তিতিরিরক্ত ও স্বাস্থ্য নিয়ে তার মাথাব্যাথা নেই। তাই, সরকারের কাছে সবার জন্য সরকারী সমমানের উন্নত পরিষেবার দাবী যে আসবে না সেটা ধরে নেওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে যারা দেশের কর্নধার তারা কী করেন? তারা তাদের ব্যর্থতার ময়না তদন্ত করবেন ও আশা করা যায় যে জনগনের জন্য সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু, আমরা দেখতে পেলাম সরকার তা না করে একের পর এক ঘোষনা দিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করতে চাইছেন। সর্বশেষ নির্দেশিকায় সরকার চিকিৎসা খরচ বেঁধে দিয়েছেন। দুটো জিনিস বুঝতে পারছি না- ১) চাল, ডাল, মাছ, আলু, পটলের দাম সরকার বেঁধে দিচ্ছে না কেন? নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বেঁধে দিলে মানুষ তো অন্তত দুমুঠো খেতে পারবে। তারা যখন বাড়ী বাড়ী ঘুরে ভোট ভিক্ষা করেন তখন কিন্তু প্রতিশ্রুতি দেন যে নায্য দামে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সবরারাহ করবেন। চিকিৎসার মত অনির্দেশ্য ও অনিশ্চিত বিষয়ে যদি দাম বেঁধে দেওয়া যায় তাহলে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের বিষয়ে সরকার দাম বাঁধবে না কেন? ২) সরকার এত আইন-কানুন না বানিয়ে এই ৫০,০০০ বেসরকারী শয্যা কিনে নিক আর যে দাম বেঁধে গিয়েছে সেই দামে চিকিৎসা বিক্রি করুক। এ দায় তো তাদের ই। যারা হাসপাতালের জন্য টাকা ঢেলেছেন তারা সব সর্বত্যাগী সন্নেসী, নেহাত শিবিরাজার মত বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড পরিত্রানের জন্য টাকা ঢেলেছে এটা নাও হতে পারে কিন্তু আমরা সরকার নির্বাচিত করেছি এগুলি পাবার জন্য। শিক্ষা স্বাস্থ্য যে আমাদের মৌলিক দাবী তা মেনে নিয়ে আইন পাশ হোক আর এই সুন্দর স্বাস্থ্য প্রকল্প সব সরকারী হাসপাতালে চালু হোক। এত জনদরদি সরকার ক্ষমতায় অথচ বেসরকারী হাসপাতাল থাকবে এটা কী মেনে নেওয়া যায়!!
সরকার একদিকে যখন ভুয়ো চিকিৎসক ধরছে অন্যদিকে তখন হাতুডে ডাক্তারদের প্রশিক্ষন দেওয়া হচ্ছে। যারা নামের পর নানা বর্ণময় বিশেষণ যোগ করছেন তাদের সাথে হাতুডেদের কোন গুনগত ফারাক নেই- হাতুডেরা গরীবের চিকিৎসা করেন তাই তাদের ভেক না ধরলেও চলে কিন্তু ভুয়োরা বড়লোকদের চিকিৎসা করে তাই ভেকের ডাকে কানের পর্দা ফাটবে সে কোন বিস্ময়কর তথ্য নয়। তেওয়ারী বা দেবাশীষ দত্তরা হয়তো কিছু মানুষের ক্ষতি করেছেন ও ধরা পড়ে মান-সম্মান সব খুইয়েছেন। কিন্তু এই সমাজে ডা: হাজরারা সর্বত্রগামী। ভুয়োদর্শী এইসব ব্যক্তিত্বের অনেকে দেশের কর্ণধার সেজে বসে আছেন। তাদের ভুয়ো ডিগ্রির কথা যেন কেউ জানতে না পারেন, তার জন্য তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। রাষ্ট্রের এমন গোপন তথ্য যদি ফাঁস হয়ে যায়, তাহলে কী হবে?

_______________________

ডা. রেজাউল করীম , বাংলার লোকসেবী চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়