Ameen Qudir

Published:
2017-05-07 01:10:40 BdST

ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনের ভাল মন্দ


 

 

 

 

 

ডা. রেজাউল করীম
_________________________

ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইন নিয়ে নানা লোকে নানা কথা বলছেন। একটা কথা না বলে পারছি না যে এই বিলের বেশ কিছু ভাল দিক আছে, কিন্তু খারাপ দিকের কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। আমরা আইনের কচকচি ভাল বুঝি না তবু কয়েকটি ধারা ক্ষতিকর বলে মনে হয়েছে।
1 ) ভ্যাকসিন সেন্টার গুলো আইনের আওতায় আসায় টীকাকরণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
2) একক চিকিৎসকের চেম্বারে অনেক রোগীর চিকিৎসা হত , এখন পরামর্শ নেওয়া যাবে কিন্তু চিকিৎসা হবে না। ফলে খরচ বাড়বে।3) আইনের ভয়ে সঙ্কটকালীন বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হবে। এতে রোগীর হয়রানি ও খরচ বাড়বে 4) আইনে ক্ষতির সংজ্ঞা ঠিকমত নির্ধারণ না থাকায় চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এফ আই আর বাড়বে 5) রোগীর মৃতদেহ আটকে রাখা যাবে না এটা খুব ভাল সিদ্ধান্ত কিন্তু সংশ্লিষ্ট ধারার সাবক্লজ অনুসারে এই টাকা উসুলকে আইনী রক্ষাকবজ দেওয়ায় এ ধরনের ঘটনা কমবে বলে মনে হয় না 6) আইনে তিন বছর জেলের সংস্থান থাকায় কেউ ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা করতে চাইবেননা। এতে রোগীর হয়রানি বাড়বে। 7) নিয়ন্ত্রণ কমিশনে সদস্যদের নির্বাচনের লিখিত নির্দেশিকা না থাকার জন্য যে কেউ এর সদস্য হতে পারবেন। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররাও এর সদস্য হতে পারেন, অথচ, আইনের ঘোষিত উদ্দেশ্য এদের নিয়ন্ত্রণ করা। আরো অনেক উদাহরণ দেয়া যায় ।

আমরা সবকিছুতেই রাজনীতি খুঁজতে অভ্যস্ত তাই কয়েকটি কথা মনে করিয়ে দিই: 1)আই এম এর কয়েকটি শাখা এই আইনের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে সুপ্রিম কোর্টে গেছেন- খুবই ভাল কথা। অথচ নেতারা বলেছিলেন সরকারকে 29সে এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হল, এরপর সরকার তাদের সাথে আলোচনা না করলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্নার কর্মসূচি নেওয়া হবে। তাহলে কোর্টে কারা গেছেন? যারা জানেন, যদি জানান বাধিত হব।
2) 14 এপ্রিলের সভায় আমরা পরিষ্কার করে বলেছিলাম যে WBDF ধরনা দিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়াতে চায় না। আইনের মোকাবিলা আমরা আইনী পথে লড়বো। সরকারের সাথে সম্পর্কের অবনতি বা শত্রুতা উদ্দেশ্য নয়।আত্মরক্ষা ছাড়া WBDF এর অন্যতর উদ্দেশ্য নেই, তা পরিষ্কার করে বলতে চাই। অনেকে একজন আইনজীবীর নাম করে নানা গুজব রটাচ্ছেন। পেশাগত সম্পর্ক আর রাজনীতি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।কপিল সিবাল, রাম জেঠমালানি বা একসময় অরুন জেটলীরা বার বার তা প্রমাণ করেছেন। 3) স্বাস্থ্যের মত যৌথ বিষয়ে রাজ্য আইন করেছেন- কেন্দ্রীয় সরকার এর পার্টি কেন? 4) যারা রিট দাখিল করেছেন তাদের কয়েকজন সরাসরি বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক দলের সদস্য- সেই দলগুলি আইন সম্পর্কে তাদের মতামত খোলসা করছেন না কেন?

WBDF রিট পিটিশন করবে- কিন্তু পাশাপাশি সরকারের সাথে সহযোগিতা বন্ধ করবে না। এই সংস্থা সরকারের শত্রু নয় কিন্তু কেউ ভুল ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। সরকারের ও ভুল হতে পারে, বিশেষতঃ আইন পাশ করার জন্য বড্ড বেশী তাড়াহুড়ো করা হয়েছে । বিল পেশের পর মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন- কোন ভুল হয়ে থাকলে সংশোধন করে নেওয়া হবে। সরকার কিন্তু আলোচনা করার কোন আগ্রহ দেখাননি বলেই আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। এই সংগঠনের সদস্যদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ সরকারের সাথে মিলতে পারে, নাও পারে কিন্তু সংস্থার ঘোষিত রাজনৈতিক কর্মসৃচি নেই। এই আইনের অনেক ধারা রোগী ও চিকিৎসকদের সমানভাবে আঘাত করবে, তাই এর বিরোধিতা করা হচ্ছে। যারা এই আন্দোলন পরিচালনা করছেন তারা প্রতিষ্ঠিত সুচিকিৎসক- রাজনীতি তাদের নেশা বা পেশা নয়। নেতাদের শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি। শুধু একটিমাত্র আবেদন- সম্মানের সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দিন। ব্যক্তির পাপে গোটা সম্প্রদায়কে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো মানবাধিকারের পরিপন্থী।

____________________________

ডা. রেজাউল করীম । বাংলার প্রখ্যাত লেখক কবি। লোকসেবী। সুচিন্তক।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়