Ameen Qudir
Published:2017-04-25 17:45:18 BdST
ফিফথ ইয়ার মেডিকেল স্টুডেন্ট হয়ে ব্রেস্টের কেসের চিকিৎসা করাতে গেছো গাইনীতে?
ডা. মিথিলা ফেরদৌস
____________________________
সার্জারিতে মেয়ে ডাক্তার কম হবার কারণে অনেক ডাক্তার, মেডিকেল স্টুডেন্টস আসে আমার কাছে হাসপাতালে । আমি আমার চুড়ান্ত আন্তরিকতা দিয়ে চিকিৎসা দেবার চেষ্টা করি।
কিছুদিন আগে ফিফথ ইয়ারের এক স্টুডেন্ট আসলো তার আত্মীয়াকে নিয়ে। ব্রেস্ট এর রুগি। দেখেই বুঝলাম ফাইব্রোসিস্টিক ডিজিজ। তাও বয়স একটু বেশি দেখে ডায়াগনোসিস কনফার্ম করার জন্যে দুইটা পরিক্ষা করে কনফার্ম হলাম ক্যান্সার না।
এই রোগের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা রিয়াসুরেন্স (reassurance) আর দুই তিনটা ঔষধ দিলে অনেকেই দেখি বলে, ভালো হয়ে গেছে!
প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ টা ব্রেস্টের রুগি দেখতে হয়। তাদের ফলোআপেও দেখি রেজাল্ট ভালোই, অনেকেই ভালো হয়ে যায়, অনেকে বলে চাকা কমছে, অনেকে বলে চাকা আছে ব্যাথা কমছে, যাই হোক ফলাফল ভালোই পাই।
আমি সেই ছেলের আত্মীয়াকে দুইটা ঔষধ লিখে দিয়ে বুঝায় দিলাম টেনশান না করতে।
কিছুদিন পর ওই ছেলে আবার তার রুগী নিয়ে আসলো। জিজ্ঞেস করলাম কি অবস্থা? বলে ভালো হয়নি। আমি কিছুটা অবাক। বললাম....
---ঔষধ ঠিকমত খেয়েছেন?
সে দেখি আরেক প্রেস্ক্রিপশান বের করলো। এক গাইনী বিশেষজ্ঞের প্রেস্ক্রিপশান। তাতে অনেক টেস্ট, অনেক ঔষধ। ওইসব খাইছে, আমারগুলা খায়নি। কি বলবো! ছেলেকে বললাম....
-----তুমি একটা ফিফথ ইয়ার মেডিকেল স্টুডেন্ট হয়ে ব্রেস্টের কেসের চিকিৎসা করাতে গেছো গাইনীতে? আমার কি উচিৎ উনার চিকিৎসা করা? এখানে প্রতিদিন যে রুগী দেখি তারা কেউ ডাক্তারের রুগী না। তাই তারা ডাক্তারের প্রতি বিশ্বাস থেকেই ভালো হয়ে যায়।সবচেয়ে বড় কথা আমার কোন চিকিৎসাই যে নেয়নি, আমার প্রেসক্রাইব করা ঔষধ যে খায়নি তার আমি কেমনে চিকিৎসা করি?
ছেলে কাচু মাচু,
-----ম্যাডাম ভুল হইছে আর হবেনা। আপনি ই দেখেন।
আমার অভিমান চরমে। আমি তাকে বললাম
-- ভাই তুমি ডাক্তার মানুষ ;তুমি আমার চেয়ে ভালো ডাক্তার এর কাছে দেখাও,
টিকেটে রেফার্ড লিখে পাঠায় দিলাম(আমার প্রেসক্রিপশানে আমার চিকিৎসা দেয়াই ছিলো।) [রেফারড মানে তাকে আমার চেয়ে ভালো ডাক্তারের কাছে পাঠাইছিলাম]
সে কিছুতেই যাবেনা। আমারও আর একেবারেই ইচ্ছা করতেছিলো না দেখতে, সে আমারে গুরুত্ব দেয়নি কারণ আমি হয়ত বেশি আন্তরিকতা দেখায় ফেলছিলাম তাই।
খারাপ লেগেছে কিন্তু আমি নিরুপায়। ছেলেটা জন্যে সারাদিন মন খারাপ ছিলো।
একটা জিনিস বুঝি, বুদ্ধিজীবীদের চিকিৎসা করা খুব কঠিন। তার চেয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করা অনেক স্বস্তিদায়ক।
সে একজন ডাক্তার হয়েও বুঝলোনা কোন কেস কোথায় নিয়ে যেতে হবে, তাহলে সাধারন মানুষের কি হবে? এইটা জনগনের জন্যে অনেক বড় হেজার্ড।
প্রতিদিন ব্রেস্টের অনেক রুগী দেখাতে আমারে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে,তা হলো রুগীরা বিভিন্ন ভাবে অপচিকিৎসার স্বীকার হচ্ছে,অনেক কেস পাই ব্রেস্ট আবসেস,যা আন্টিবায়োমা বানায় নিয়ে আসে,সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই করার কিছু থাকেনা,রুগীর ভোগান্তি ছাড়া।অনেক ক্যান্সারের রুগী অনেক ঘোরাঘুরি করে এন্ড স্টেজে আসে ,প্রাথমিক ভাবে আসলে ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রোগনোসিস ভালো।
তাই রুগীদের সচেতনতার জন্যেই একটা কথাই বলতে চাই,ব্রেস্টের সমস্যার জন্যে অবশ্যই সার্জনকেই দেখাতে হবে,যারা লজ্জা পান তাদের জন্যে বলবো দেশে এখন অনেক মহিলা সার্জন আছেন।আর এইটা কোন লজ্জা বা ভয়ের বিষয় না।বেশির ভাগ ব্রেস্ট ডিজিস খারাপ না তবে ক্যান্সারের রেটও দিন দিন বেড়েই চলেছে।
______________________________
ডা. মিথিলা ফেরদৌস । পাঠকপ্রিয় লেখক। লোকসেবী ডাক্তার ।
আপনার মতামত দিন: