Ameen Qudir

Published:
2017-04-25 16:39:27 BdST

একটি অনাকাঙ্খিত ঝড় এবং একজন কর্তব্যরত লেডি ডাক্তার


 

ডা. নাসিমুন নাহার
_________________________________

বেলা এগারোটা।
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হাসপাতালের ডক্টরস রুমে বসে আছে ডা. তুপা।দু’দিন ধরে প্রবল ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে ।বন জঙ্গল গ্রামান্চল এমনিতেই লোকজন কম।বৈরী আবহাওয়ার জন্য পুরো পৃথিবী যেন নিঃশব্দ হয়ে গেছে এখানে। হাসপাতাল কমপ্লেক্সের চিরাচরিত হৈচৈও আজ একেবারেই নেই।

গতকাল তার নাইট ডিউটি ছিল।সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মর্নিং ডিউটির দুজন কলিগ ফোনে জানাল-- ক্যান্টনমেন্টে ঢোকার আগের রাস্তায় পানি জমে গেছে।বাস,গাড়ি সব আটকে আছে মোড়ে, রিক্সা অটো কিছু ই নেই।হেঁটে আসারও কোন উপায় নেই।ওনারা আটকা পড়ে আছে।ওরা কেউ না আসা পর্যন্ত তুপা যেন হাসপাতাল লীভ না করে।

সাড়ে আটটার দিকে ফোনে জানাল ওরা ফিরে যাচ্ছে।এদিকে আসার কোন উপায় নেই।তুপাও যেন বের না হয় হাসপাতাল থেকে।
ট্রান্সপোর্ট পাবে না।রাস্তায় আটকা পড়ে যাবে।
এমনিতেই গ্রাম অঞ্চল তখন বিপদ হতে পারে।তার থেকে তুপা যেন হাসপাতালে ই থাকে এটাই বেটার হবে।

তুপাও তাই ভাবল।একজন না একজন ডাক্তার কে তো থাকতেই হবে অন ডিউটিতে।এদিকে নয়টা বাজতেই জেনারেটরও বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতালে।ওয়ার্ড বয় জানিয়ে গেল জেনারেটরের তেল শেষ।দুটো মোম আর একটা ম্যাচবক্স রেখে গেল টেবিলে।ইলেকট্রিসিটি নেই রাত থেকেই।চারপাশটা এত অদ্ভুত ভুতুড়ে লাগছে।মনে হচ্ছে কোন মানুষ জন নেই কোথাও।

তুপা ফলোআপ শেষ করল সব বেডের।মোমের আলোতে ফ্রেশ অর্ডারও লিখল দুইটা ফাইলে।

মনের মধ্যে একটু অস্থিরতা আর অস্বস্তি হচ্ছিল তুপার। মেইল ওয়ার্ডের বেড নম্বর চারের পেসেন্টের এটেনডেন্স কাল রাত থেকেই খুব জ্বালাচ্ছে।একটু পর পর ফাইল নিয়ে হাজির।
রোগীর এইটা হচ্ছে, ঐটা হচ্ছে,প্রসাবের নলটা মনে হয় খুলে গেছে,ঔষধ কখন খাবে---এক একবার এক এক কারন।তুপা যথেষ্ট ধৈর্য ধরে ঠান্ডা মাথায় বলল সবকিছু ফাইলে লেখা আছে, নার্সরা ঐভাবে ফলো করবে, আপনার রোগী ভালো আছে, টেনশন করবেন না। তাতেও তার হয় না --- কি যে কন না ম্যাডাম টেনশন তো করন ই লাগে বলেই খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠে এমন বিশ্রী চাহনি দিল যে তুপার গা রি রি করতে থাকল।মানুষের তাকানো এত নোংরা হয় কিভাবে?

নাইট ডিউটি থাকলেই আর চাকরি করতে ইচ্ছে করে না। এত প্রতিকূলতা এত সমস্যা নিয়ে কাজ করা খুব কঠিন। বাসায় ফিরেও কি শান্তি আছে? নাইট ডিউটি শেষ করে সকালে বাসায় ফিরলে শাশুড়ি এমনভাবে তাকান যেন রাতে অভিসারে ছিল তুপা !

কেন যেন মনে হচ্ছে বেড নম্বর চারের রোগীর এটেনডেন্স ডক্টরস রুমের বাইরেই ঘুরঘুর করছে।
আস্তে করে দরজাটা লক করে দিল তুপা। নার্সেস স্টেশনটা কেন যে ঐ প্রান্তে--এতটা দূরে ! ভালো লাগছে না একেবারেই।হঠাৎ ই দরজায় আস্তে আস্তে টোকা পড়ার শব্দ।ভয়ে জমে গেল তুপা।দিনের বেলা হলেও এত অন্ধকার।মনে হচ্ছে গভীর রাত।আবারো শব্দ দরজায়।সাথে ফ্যাসফ্যাসে গলায় ডাক ---ডাক্তার ম্যাডাম ও.... ডাক্তার ম্যাডাম দরজাটা একটু খুলেন।রোগীর ব্যাপারে কথা কমু।

ভয়ে যেন রীতিমত কাঁপতে শুরু করল তুপা।কি করবে সে এখন ? দিদিদের কাউকে ফোন দিবে ? দরজা খুলে লোকটাকে আচ্ছা মতো বকে দিবে ?
মাথা কাজ করছে না।এদিকে দরজায় টোকা যেন বেড়েই যাচ্ছে।

সাবকনশাস মাইন্ড সিগন্যাল দিচ্ছে তুপাকে।খুব খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে তার সাথে।কান্না পাচ্ছে, ভীষন কান্না পাচ্ছে তুপার।

______________________________

লেখক লোকসেবী চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়