Ameen Qudir

Published:
2017-04-05 16:49:58 BdST

এক বয়স্ক মহিলা,সঙ্গে তিন তাগড়া জোয়ান ছেলে: জিজ্ঞাসিলাম , আপনারা কারা !


 

ডা. মিথিলা ফেরদৌস

__________________________________

 


আমাদেরও ইচ্ছা করে রুগীর সাথে গল্পগুজব করতে,কিন্তু সম্ভব হয় না,এত বেশি রুগী দেখতে হয় যে শুধু সমস্যা শুনে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিতে হয়।আজ রুগী একটু কম থাকায়,রুগীদের সাথে কিছু গল্প করার সুযোগ হইলো।

 

কম বয়সী এক মেয়ে হাতে ব্লেড দিয়ে কেটে আনছে,সংগে মা আছেন।বুঝলাম সুইসাইডাল কেস,যদিও বেটির মধ্যে মরার কোন লক্ষন ছিলো না,থাকলে মরা খুব একটা কঠিন কিছু না।

যে কাজ করে আসছে,তাতে তার বাপ মা,আমি আর সে নিজেও ঝামেলায় পড়ছে।অন্যদিন হইলে সময় নাই চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেই।আজ কারণ জিজ্ঞেস করলাম।মায়ে কয়,পড়াশুনা সংক্রান্ত।

আমি হইলাম ঘোড়েল মহিলা এইসব বুঝার বুদ্ধি আমার আছে।পড়াশুনার ব্যাপার হইলে ইমার্জেন্সি কেস হইতো,আমার না।

আমার কাছে আসছে মানেই ফাজিল মেয়ে ।আমি আর কিছু কইলাম না।তখন মহিলা নিজেই,বলে ফেললো মেয়ে, কোন ছেলেরে পছন্দ করে,বাসা থেকে মানা করা হইছে তাই এই অবস্থা।

মেজাজ আরও খারাপ হইলো,স্কুলে পড়া একটা মেয়ে,বললাম
-----তুমি যে কাজ করেছো তাতে,ওই ছেলের কি কোন কস্ট হয়েছে?ঝামেলায় ফেলছো বাপ মাকে আর নিজেও তো কস্ট পাচ্ছো তাইনা?(বুঝায়া লাভ হইলো বলে মনে হইলো না।মেয়ে মাথা নিচু করে আছে,মুখে স্পষ্ট অবজ্ঞার চিহ্ন)
মেয়ের বাবা মায়ের উদ্বিগ্ন চেহারা দেখে মনখারাপ হলো।
এক বয়স্ক মহিলা,সঙ্গে তিন তাগড়া জোয়ান ছেলে আসলো,মহিলার ছোটখাটো সমস্যা।জিজ্ঞেস করলাম আপনারা কারা?বলে সবাই নাকি ছেলে।ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে তিন ছেলে চলে আসছে,সমস্যা বড় হইলে তো ছয়জন চলে আসতো।বললাম 'মা আপনি তো ভাগ্যবতী মহিলা।'কে বলে সব ছেলে মা কে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়?
এক বয়স্ক মহিলার সাথে মোটামুটি কমবয়সী আরেক মেয়ে আসলো,মেয়ে রুগী কিন্তু সমস্যা বলছিলো বয়স্ক মহিলা,আমি বললাম,মা,আপনার মেয়ের সমস্যা তাকেই বলতে দেন',মহিলা বলে 'ও আমার ছেলের বউ'।সত্যি মুগ্ধ হলাম।বললাম 'আপনি ছেলের বউ এর জন্যে চলে আসছেন!!'উনি খুব অবাক আমার কথায়।বলে 'কেনো আসবোনা?'এই ব্যাপারটা না বোঝার মাঝে যে কত সরলতা,সেইটা দেখেই আমি আবার আশাবাদী হই।নাহ সমাজটা পচে যায়নি।
মা"দের কত লক্ষী ছেলে আছে,বউ এর মায়ের মত শ্বাশুড়ি আছে।


সরকারি হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ৩০% রুগী সত্যিকারের রুগী বাকি ৭০% ই আসে,হয় ঔষুধ নিতে,না হলে টেস্ট করতে, না হলে গল্পগুজব করতে,অনেকের ইনডোরে রুগী ভর্তি থাকে তার সাথে এসে সামান্য সমস্যা হইলেও এসে দেখায় যায়।কেউ কেউ ঢাকা শহর ঘুরতে এসে হাসপাতালে ঘুরে যায়।টিকেটের দাম ১০ টাকা হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সত্যিকারের রুগীগুলো।কারণ ডাক্তাদের উপর অসহনীয় রুগীর ভারের কারনে ডাক্তাররা অনেকসময় সত্যিকারের রুগীকে ঠিকমত সময় দিতে পারেনা।

 

তাই ডাক্তাদের যদি একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক রুগী দেয়া হতো,তাহলে রুগীরা সঠিক পরিচর্যা পেতো,ডাক্তারদের সঙ্গে গল্প করেও অনেক রুগী ভালো হয়ে যেতো।কিন্তু ডাক্তারাও যে মানুষ এইটাই সবাই ভুলতে বসেছে।অসহনীয় মাত্রার রুগী যে তাদের উপর কতটা মানুষিক অত্যাচার এইটা নিয়ে কেউ বলার নাই,রুগী রাও বুঝতে চায় না,তারা ভাবে তারাই শুধু একমাত্র রুগী। সব মানুষের কমন কম্পলেইন ডাক্তাররা কথা শুনতে চায় না।কেনো শুনতে চায় না এইটা কখনই বুঝতে চায় না।এই ব্যাপার নিয়ে কখনও কোন লেখালেখিও হয়না।


__________________________________

লেখক ডা. মিথিলা ফেরদৌস । সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়