Ameen Qudir

Published:
2017-03-19 17:45:26 BdST

নির্দোষ ডা. মোস্তফা কামালকে শারিরীক মানসিক নির্যাতনের দায় কে নেবে !


 

 ডা. সৌমিত্র বড়ুয়া । সুলেখক।

 

 

 

 

 

ডা. সৌমিত্র বড়ুয়া
___________________________

 

আমরা যারা ডা. মোস্তফা কামাল ভাইকে চিনি, তারা জানি তিনি কেমন মানুষ। উনি দীর্ঘদিন যাবৎ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
ওনার সংসারে আছেন সহধর্মিণী যিনি নিজেও একজন সরকারী চিকিৎসক, ৬ বছর ও ৩ বছরের দুটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান।


মাত্র ৪ মাস আগে ওনার সহধর্মিণীর হার্টে জটিল অপারেশন হয়েছে যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল। জীবন-মৃত্যর সন্ধিক্ষণ থেকে ফিরে আসা স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে ভালই চলছিল সময় যদিও অপারেশনের মানসিক ও অর্থনৈতিক ধকল এখনও পুরোপুরি কাটাতে পারেননি।

ঠিক এই সময় হঠাৎ এক ঝড় এসে সব এলোমেলো করে দিল।

অন্যান্য দিনের মত ১০ মার্চও তিনি রোগী দেখছিলেন।
সন্ধ্যা ৭ টার দিকে এক রোগী (ছাত্রী) আসেন যিনি বিগত কয়েকদিন ধরে পেট ব্যথায় ভুগছিলেন, ব্যথানাশক ঔষধ ও (Algin) খেয়েছেন কয়েকদিন কিনতু ব্যথা সারেনি। রোগী নিজে থেকেই ডাক্তারকে বলেন, উনি Appendix এর সমস্যা কিনা এই ভয়ে আছেন।

 

তখন ডা. মোস্তফা কামাল ভাই রোগীকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি একটু পেটে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারি? রোগী সম্মতি দিলেন এবং রোগীর সাথে আসা আরও ১০-১২ জন সহপাঠী ও মেডিকেল সেন্টারের সহকারীর উপস্থিতিতে রোগীর পেটের উপরের কাপড় অনাবৃত না করেই (সঠিকভাবে রোগ নির্নয়ের জন্য যা কাপড় অনাবৃত করে পরীক্ষা করা উচিত কিন্তু পুরুষ চিকিৎসকরা সাধারনত বেশী প্রয়োজন না হলে মহিলা রোগীদের ক্ষেত্রে তা করেন না) কাপড়ের উপর দিয়েই Mcburney's point tenderness পরীক্ষা করেন।

এরপর উনি ঔষধের নাম লিখে প্রেসক্রিপশন দেন আর কিছু investigation করতে বলেন যেন appendicitis কিনা তা ধরা পড়ে । ঐ রোগী ও তার সাথীরা চলে যায় এবং উনি যথারীতি অন্য রোগী দেখায় মনোনিবেশ করেন। প্রায় ঘন্টা খানেক পর হঠাৎ ১০-১৫ জন বহিরাগত এসে ওনার রুমে প্রবেশ করে এবং ওনার উপর কিল-ঘুষি ছুড়তে থাকে, হতবিহবল মোস্তফা ভাই জিজ্ঞেস করেন কেন ওনারা এমন করছেন এবং ওনার কি দোষ? তখন তারা বলে, তুই একটু আগে আমাদের একজন ছাত্রীর যৌন হয়রানি করেছিস। তখনও তিনি বুঝতে পারেননি কারনটা কি।

ঘটনার আধঘন্টার মধ্যে অন্যান্য ডাক্তারদের সহযোগিতায় ভার্সিটির ৩ জন Asst. Proctor এবং মেডিকেল সেন্টারের চীফ মেডিকেল অফিসারের সামনে ঐ রোগী স্বীকার করেন যে তিনি অনুমতি দেয়ার পরেই ডাক্তার তার গায়ে হাত দিয়ে clinical examination করেছেন।

আপনাদের জানার জন্য বলতে হয়, যেকোন রোগীর শারীরিক পরীক্ষা (Physical Examination) ৪ ভাগে করতে হয়। Inspection মানে ভালমত রোগীকে দেখা (Clinical eye দিয়ে), Palpation এবং Percussion রোগীর গায়ে হাত দিয়ে পরীক্ষা করা এবং Auscultation হল স্টেথোস্কোপ দিয়ে examine করা।
'পেট ব্যথা' (Acute Abdomen) হল Medical Emergency যা বিভিন্ন রোগের কারনে হয়। শুধুমাত্র সুচারুরুপে Physical Examination এর মাধ্যমে বেশিরভাগ সময়ই সঠিকভাবে রোগ নির্নয় সম্ভব হয়।
এখন যদি রোগীর গায়ে হাত দিয়ে দেখলে এ ধরনের যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠে এবং অযাচিতভাবে ডাক্তারকে মারধোর করা হয়, তবে কোন পুরুষ চিকিৎসক নারী রোগীর চিকিৎসা করতে চাইবেনা এবং
চিকিৎসা ব্যবস্থায় এর বিরুপ প্রভাব পড়বে।

নিয়ম অনুযায়ী এই অনভিপ্রেত ঘটনার সুষঠ তদন্তের সার্থে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে তবে সে কমিটিতে কোন চিকিৎসককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
কিন্তু দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই চ.বি কর্তৃপক্ষ ডা. মোস্তফা কামাল ভাইকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, সামাজিক প্রচারমাধ্যম এবং বিভিন্ন electronic ও প্রিন্ট মিডিয়াতে ডা. মোস্তফা কামাল ভাইয়ের চরিত্র হরন করা হচ্ছে যা খুবই দুঃখজনক।
আমরা আশা করব তদন্ত কমিটি সুষঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করবেন।

আমি দৃঢ়ভাবে ডা. মোস্তফা কামাল ভাইয়ের প্রতি শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক হয়রানির প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপওা নিশ্চিত করা-
এখন সকল চিকিৎসকের প্রানের দাবী।

___________________________

ডা. সৌমিত্র বড়ুয়া । সুলেখক। Research Physician at Wellcome-Mahidol-Oxford Tropical Medicine Research Unit
Former HMO at Chittagong Medical College & Hospital

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়