Ameen Qudir

Published:
2017-03-19 17:00:55 BdST

"ভিনদেশী মলম লাগাতেও মজা, খেতেও মজা"


 



ডা. রাজীব দে সরকার
_______________________________

গণেশ বাবু দুধ বাজারে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা জমিয়ে ফেলেছেন। মুখে তার সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশে চিকিৎসা-পর্যটন সেরে আসার সুখ স্মৃতি।

- "যাই বলো তোমরা। হাসপাতালের প্রতিটা মানুষের যা ব্যবহার, ঐটা এই দেশে হারিকেন দিয়ে খুঁজলেও পাবা না। কী দারুন মলম দিলো একটা। লাগাতেই পরের মিনিটে আমি প্যারালাইজড অবস্থা থেকে সুস্থ। এরকম মলম, এরকম ডাক্তার আছে নাকি এদেশে?"

গণেশ দা'র এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই আসলে এই লেখা। কোথায় পাই এমন মলম? বিদেশী মলম ভালো। লাগাতেও ভালো। খেতেও হয়তো খুব একটা খারাপ না।

পরের বউ সব সময়ই সুন্দর।
বিদেশী মলম খাইতেও মজা, লাগাইতেও মজা।
হয়তো এজন্যই দেশী ডাক্তারদের খেটেও সুনাম নাই। অকৃতজ্ঞতা প্রাচীন ইতিহাসের ধারক আমরা।

বিদেশী কাপড়, বিদেশী আতর, বিদেশী সিরিয়াল-সিনেমা, বিদেশী ভাষার পাশাপাশি দেশী ডাক্তাররা আজকাল আর অ্যাপীল করছে না অনেকের কাছেই। তাই দেশী হাসপাতালগুলোতে যতোই প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের চিকিৎসা হোক না কেন, কদর ঐ বিদেশী মলমেরই।

দুঃখজনক হলেও সত্য তৃণমূল জনগোষ্ঠীর একমাত্র ত্রাণকর্তা এই দেশী ডাক্তার আর উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলো। কমিউনিটি ক্লিনিক আর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে তাই আজকার উপচে পড়া ভীড় থাকে। মানুষের বিশ্বাস আর আস্থা অর্জন করে নিয়েছে এই অনাড়ম্বর স্বাস্থ্যসেবা। এমনকি আজ বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গন আমাদের এই কর্মনৈপুণ্য আর অর্জনে মুগ্ধ।

কিন্তু ঐ যে, দেশী জিনিসে আমাদের অরুচি বড্ড প্রাচীন।

বিদেশে চিকিৎসা করাতে গেলে লাভ অনেক।

> গণেশ বাবুর মতো রসালো গল্প করতে পারবেন। হাজার হলেও তো বিদেশ ঘোরা। কী কী দেখলেন, কী কী খেলেন। দেশটা কেমন, দেশের মানুষগুলো কেমন, কতো লম্বা, তাদের চামড়ার রং টা কেমন - নীল নাকি গোলাপী ইত্যাদি।

> আরো গল্প করতে পারবেন, সেখানকার ডাক্তার নার্সদের হাত পা কয়টা, তারা কীভাবে কোলে নিয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়।

> বিদেশে গিয়ে ভাবখানাও এমন দেখাতে পারবেন যে ছোটখাটো যেকোন সমস্যাতে আপনি বিদেশী ডাক্তারই প্রেফার করেন। দেশের ডাক্তারদের ঠিক ভরসা পান না আপনি। আর বিদেশী ডাক্তাররা আপনার রোগ বোঝার জন্য দোভাষী ডেকে আনে কিংবা নিজে দুই দিনের ভেতর বাংলা শিখে ফেলছে। আপনাকে ঘিরে তাদের এলাহী আয়োজন।

> আমাদের দেশে প্রতিদিন ১৫০ আউটডোর রোগী দেখা নিচুকূলের ডাক্তারদের তুলনায় সারাদিন হাতে গোণা কয়েকটা রোগী দেখা বিদেশী ডাক্তাররা ৪ ঘন্টা ধরে আপনার কথা শুনেছে। আপনার রোগের পাশাপাশি আপনার দুসম্পর্কের শ্যালিকার মেয়ের শশুড়বাড়ির এক আত্নীয়ের ক্যান্সারের কথাও বিদেশী ডাক্তাররা মন দিয়ে শুনেছেন - এ গল্প করতে কার না ভালো লাগে বলুন।

কাচি দিয়ে ধরে দূর্বা ঘাস যেমন কাটা যায়, বড় গাছ কাটতে গেলে অনেক গুলো কোপ লাগে। কিছু রোগ আছে সামান্য ঔষধেই সেরে যায়। কিছু রোগে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা লাগে। কিন্তু আমাদের এতো ধৈর্য্য কোথায়? আমরা চাই নগদ রেজাল্ট। ১২ কোপের ১০ কোপ দেশের ডাক্তার দিয়ে দিলো, আর দুই কোপ বিদেশী ডাক্তার দেওয়াতেই রোগ সেরে গেলো - ব্যস, বিদেশী ডাক্তার হিট!!

ভালো মন্দ সব পেশাতেই থাকে। রোগীরও ভালো মন্দ থাকে। কিছু কিছু রোগীও কসাই হয়। এরপরও এদের চিকিৎসা আমাদের দেশের ডাক্তাররাই করে।

বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে দেশের অর্থনীতির যে উপকার কিছু রোগী করছেন, তাদের জন্য আমাদের শুভকামনা রইলো!!

শেষ কথাঃ
বিদেশী মলম - দুইবার লাগিয়ে একবার খেয়েও দেখতে পারেন... বিদেশী বলে কথা।
>>>
(আজ বাসে বসে দুই জন আরোহীর আলাপচারিতায় অনুপ্রাণিত হয়ে এই লেখা)

____________________________

ডা. রাজীব দে সরকার
প্রাক্তন চিকিৎসক, গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজবাড়ী

বিশেষ কর্মকর্তা, কো-অর্ডিনেশন সেল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা।

প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, রাজবাড়ী।

আহবায়ক, সুহৃদ সমাবেশ, গোয়ালন্দ উপজেলা।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়