Ameen Qudir

Published:
2017-02-21 16:37:45 BdST

গভীর দুঃখ,ক্ষোভ, রাগ আর অভিমান আজ আমার সেই প্রিয় অক্ষর গুলোকে নিয়েই




 

ডা.শিরিন সাবিহা তন্বী
______________________________

খুব ছোটবেলাতে আমার কাছে একুশে ফেব্রুয়ারী মানেই ছিল "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী...."
আমি জানিনা এই গানে ,এই সুরে কি আছে,তবে এটুকু জানি শুনলেই গা কাঁটা দেয়া একটা অনুভূতি!সেই ছোট্ট বেলায় না বুঝে হত,,এখনো হয়!
এখন বুঝে হয়!এটাই জ্বালা!

ভাষার জন্য একটা জাতি ,,একটা সমগ্র বাঙ্গালী জাতি নিজের জন্য না,,নিজের সন্তান ও না,,নিজের দেশ ও তখন না,,শুধু বাঙ্গালী প্রজাতির পরবর্তী প্রজন্ম ও যেন এই ভাষায় কথা বলতে পারে, সেই জন্য বুকের সবটুকু রক্ত রাজপথে ঢেলে দিল???
যে জন্মদাত্রী মাকে ওরা মা বলে ডেকে মধুর সুখ পেয়েছে,,আমাদের জন্মদাত্রীকে আমরাও যেন ঐ "মা" ডাকে ডাকতে পারি তার জন্য রক্তের স্রোত বইয়ে দিয়েছে ভাষা শহীদরা।।মায়ের চোখের অশ্রুর স্রোতের ও পরোয়া করেনি।।


ছেলেবেলায় স্কুল থেকে প্রভাত ফেরীতে যেতে যেতে অনেক ভেবেছি এই দিনটিকে নিয়ে।আস্তে আস্তে বড় হয়েছি।রাতের পর রাত যখন পরীক্ষা শেষের ছুটি গুলো নির্ঘুম কাটিয়েছি রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প,,শরৎ,বঙ্কিম,বিভূতীভূষন সমগ্র,,হুমায়ুন আহমেদ এর রচনা কিংবা শীর্ষেন্দু,সমরেশ,সুনীল,বুদ্ধদেব,সুচিত্রা সমগ্র নিয়ে তখন বুঝেছি কেন উনারা চেয়েছেন বাংলা মুছে না যাক।বাংলা ভাষা ভাষার আসনে পৃথিবীতে রক্তের অলংকারে অলংকৃত হয়ে থাকুক।
কিছু কথা হৃদয়ের মনিকোঠায় এমন স্পর্শ দেয় এই ভাষায়,,মনে হয় অক্ষর গুলো ছুঁয়ে দেখি।।এমন মধুময় এই বাংলা।

 

একুশে ফেব্রুয়ারী!আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস!

গভীর দুঃখ,,ক্ষোভ,,রাগ আর অভিমান আজ আমার সেই প্রিয় অক্ষর গুলোকে নিয়েই।।আর তাও আবার এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ই জন্যে।।

আমার আজকের বিশ্লেষন আশা করি ফেসবুক ব্যবহারককারী সকলের ই জানা।ছোটবেলা লঞ্চের ওয়াশ রুমে যেতে ঘৃনা লাগত কুৎসিত কথা লেখা থাকত বলে।আমি গার্লস স্কুলের ছাত্রী।স্কুলে কখনও কোন অশ্লীল কথাও শুনিনি।লঞ্চের ঐটুকু আমাকে বেশ পীড়া দিত।এত খারাপ শব্দ বা কথা বাংলায় লিখে কি করে?
আমার বাংলার জন্য মায়া লাগত।।
আজ অনেক বেশী লাগে।।


কোন রাজনৈতিক পোষ্ট,, ব্যক্তিগত পাবলিক পোষ্ট বা পোষ্টের কমেন্টে বা অনলাইন নিউজের কমেন্টে বাংলার পশুরা যেন পশুবৃত্তিতে ঝাপিয়ে পড়ে।
এমন কোন নোংরা শব্দ এমন কোন নোংরা বাক্য নাই যে তারা ব্যক্তি দল মত নির্বিশেষে ব্যবহার না করবে।ফেসবুক প্রোফাইলে নিজের সম্পূর্ন পরিচয়ের পর তারা নিজ হাতে এগুলো লিখতে পারে - ওরা কতটা ঘৃন্য আমার ক্ষুদ্র মস্তিস্কের কল্পনায় ও তা ধারন অযোগ্য।


এই গেল অন্যায় এবং অন্যায় কারী।
অন্যায় যে করে অন্যায় যে সহে সমান অপরাধী।ওদের অন্যায় আমাদের অপরাধী করছে আমরা সহ্য করছি বলে।
এই মুক্তবাজার অর্থনিতীতে অশিক্ষিত,,মূর্খ,,অসভ্য,,বেয়াদব,,বর্বর,,লম্পট,,চরিত্রহীনদের হাতে মোবাইল ল্যাপটপ ট্যাব থাকবে।এরা এগুলো করবেই।
কিন্তু আমাদের করনীয় কি??

আর একটিবার আন্দোলন।ভাষা আন্দোলন।

আমরা তরুন।আমরা দেশপ্রেমিক।আমরা বাংলা ভাষা প্রেমিক।তাই ফেস বুকের পেজে পেজে আমার ভাষার,আমার বর্নমালার শব্দদের ধর্ষিত হতে দিব না ঐ কুলাঙ্গার ধর্ষকদের দ্বারা।
যে যেখানে কোন নোংরা শব্দ বা বাক্যের ব্যবহার দেখব সাথে সাথে স্পাম হিসেবে রিপোর্ট করব।বার্তা পাঠাব।

যারা অনলাইন এক্সপার্ট আছেন ওদের আই ডি ব্লক করার ব্যবস্থা নিন।আমাদের ইগনোরেন্স, আমাদের বাংলা ভাষার বুকে রক্ত ঝরাচ্ছে।
এটা বাহান্ন না।ওরাও বন্দুক হাতে সরকারী কর্তা না।ওরা সভ্যতা বিবর্জিত ঘৃন্য বখে যাওয়া শয়তান।আমরা আমাদের সচেতনতা আর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে ওদের প্রতিহত করব।
এবং ইনশল্লাহ আমাদের একটু চেষ্টাই এ ধরনের নোংরা ফেসবুকিং আর আমার বাংলার অপমান রোধ করবে।

 

তোমার মতামত যে কোন দল মতের পক্ষে বা বিপক্ষে হতে পারে।তা ব্যক্ত করার স্বাধীনতা তোমার আছে।তবে তা অবশ্যই অশ্লীল এবং কুরুচীপূর্ন ভাষায় না।কাউকে এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রীকেও যৌন হয়রানিমূলক গালি দিতে এবং লিখতে এদের হাত কাঁপে না।এটা কখনই সহনীয় ঘটনা না।

আর টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, সরকারী চাকুরীজীবীদের উপরে নিষেধাজ্ঞার পাহাড় না তুলে এদের উপর করুন।আইন করুন।বিচারের আওতায় আনুন।নজর দারী বাড়ান।
আমার বাংলা ভাষাকে বাঁচান।

আশা করি আজ থেকে যদি আমরা তরুনরা,প্রগতিশীলরা,ছাত্ররা,পেশাজীবীরা এই বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় হই,,২০১৮ সালের ভাষা দিবসে অনলাইনের এই রাজ্যে আমার বাংলায় লেখা আর একটিও নোংরা শব্দ বা বাক্য থাকবে না।আর সেটাই হবে আমাদের সফলতা।
সেটাই হবে সালাম,বরকত,রফিক,জব্বার,শফিউর সহ সকল বীর ভাষা শহীদদের প্রতি একটু খানি রক্তের ঋনশোধ।

___________________________

 

ডা.শিরিন সাবিহা তন্বী । দেশের জনপ্রিয় কলামিস্ট। প্রতিভাবান কথাশিল্পী। মেডিকেল অফিসার, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পেশাজীবী নেতা।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়