Ameen Qudir

Published:
2017-01-13 21:11:31 BdST

আবেশের মৃত্যুর বিচার চাই



 আবেশপ্রজন্মের ফেসবুক ছবি। 

 

 

কানন চট্টোপাধ্যায়
________________________

 

চারদিকে শোরগোল ।আবেশ কবে মারা গেছে ? লেখক অমিত চৌধুরীর ফ্ল্যাটে জন্মদিনের পার্টিতে ? শনিবারের ক্লাব পার্টি করে ফেরার পথে ? -------------- ভুল । আবেশ মারা গেছে সেদিন যেদিন ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে পড়া ১২ বা ১৩ বছরের বালক হওয়া সত্ত্বেও বাবা-মা তার হাতে একগুচ্ছ টাকা তুলে দিয়েছে বন্ধুদের সাথে পার্টি করার জন্য ।


আবেশ মারা গেছে সেদিনই যেদিন ক্লাস এইটে উঠতে না উঠতে হাতে পেয়ে গেছে দামী মোবাইল । আবেশ মারা গেছে সেদিন ই যেদিন টিউশনের নাম করে ক্লাব রেস্তোরাঁতে ঘুরে রাত করে বাড়ি ফিরলেও মা এর একগোছা প্রশ্নের সামনে পড়তে হয়নি ।


আবেশ মারা গেছে সেদিন ই যেদিন রাত জেগে বান্ধবীদের সাথে চ্যাট করার পরও মা তাকে জিজ্ঞাসা করেনি --- এত রাত জেগে কি করছিস ? শুয়ে পড়, সকালে স্কুল আছে । আবেশ মারা গেছে সেদিন ই যেদিন স্কুলের ক্লাস টিচার শুধু ইংরাজি র নম্বর দেখে মুগ্ধ হয়ে বলতে ভুলে গেছেন -- বাবা মানুষ হ । আবেশ মারা গেছে সেদিনই , যেদিন পাখি সব কলরব করে ওকে ঘুম ভাঙাতে ভুলে গেছে ।


আবেশরা বেঁচে ছিল কবে ? ওরা তো কবেই মরে গেছে । পাখির কুজন ওদের কানে ঢোকে না , ঠাকুরমার ঝুলির গল্প ওদের হেডফোন ভেদ করে ঢুকতে পারে না ।ওরা সূর্য কে উঠতে দেখেনি , পূর্ণিমার চাঁদ ওদের মনকে ভিজিয়ে দেয় না । জন্মদিনে ওরা নেমন্তন্ন পায় না, পার্টি করে । সে পার্টিতে মদ ঢেলে দেয় প্রগতিশীল পরিবারের স্বল্পবাস বান্ধবীরা । সে পার্টিতে মন দেওয়া নেওয়া চলে না , শরীর দেওয়া নেওয়া চলে । তাই নিয়ে মারামারিও হয় । ওসব না হলে সোসাইটিতে বাবা মায়ের মান পড়ে যায় ।

তাই যে ঠাকুরমার কোলে পিঠে বড় হয়ে ওঠা -- তিনি চিরতরে বিদায় নেওয়ার দুদিনের মধ্যেই আধুনিক বান্ধবীর ফ্ল্যাটে জন্মদিনের সেলিব্রেশন করতে বিবেক দংশন হয় না । আবেশদের সোসাইটিতে বাচ্চা ছেলে মেয়েদের একসাথে প্রকাশ্যে মদ খেতে দেখলেও পাড়ার জ্যেঠু কাকুরা বলেন না ---- এই তোরা কি করছিস? দাঁড়া এক্ষুনি বাড়িতে খবর দিচ্ছি ।


আবেশরা মারা যাচ্ছে , দিন দিন প্রতিদিন । আধুনিক সমাজ , পারিবারিক শিক্ষার অভাব , মা বাবার আপাত ব্যস্ততা ,স্কুলে নীতিশিক্ষার অভাব , সামাজিক নজরদারির অভাব ,তুচ্ছ বিষয়ে রাজনীতির অনুপ্রবেশ মেরে ফেলছে শত শত আবেশ কে । শরীরে বর্তমান থাকলেও জগতের কোন তাপ উত্তাপ ওদের স্পর্শ করে না ।

অশীতিপর ঠাকুমা কে ডাক্তার দেখাতে ওদের পাওয়া যাবে না , নিঃসন্তান পাড়াতুত জ্যেঠিমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে ওদের পাওয়া যাবে না , বাড়ির বাজার দোকান করে দেওয়াতে ওদের পাওয়া যাবে না । ওরা তো মৃতই ।


তাই তো বিচার চাওয়া মা'দের প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় জন্মদিনের পার্টিতে যাওয়া ছেলের হাতে আপনি ১৮০০ টাকা তুলে দিলেন ? একবার ও যদি জিজ্ঞাসা করতেন , কিসে লাগবে অতগুলো টাকা ! -------- ছেলেটা প্রানে বেঁচেও যেতে পারত!

___________________________

 


কানন চট্টোপাধ্যায় । কলকাতার জনপ্রিয় কথাশিল্পী।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়