Ameen Qudir

Published:
2017-01-13 14:35:56 BdST

কোম্পানীর ভিজিট খাওয়ার অপবাদ কমবে: জনগনের ভোগান্তি বাড়বে




_________________________


কোন এক শীতকাল।কলেজ ক্যাফেটেরিয়ায় কলেজ চলাকালীন সময়ে কোন এক ঔষধ কোম্পানী পিঠা উৎসবের আয়োজন করল।খুব তিক্ত শোনালেও সত্য।সকালের নাস্তায় ইন্টার্ন ডাক্তারদের ও স্যার স্যার /ম্যাডাম ম্যাডাম করে যে কোম্পানী এম আর গন পিঠা খাবার প্রতিযোগিতা বসিয়ে দিয়েছেন,তারাই কলেজ প্রশাসন প্রধানদের মধ্যে দু তিন জনকে দাওয়াত ই দেন নাই - তারা ক্লিনিক্যাল সাবজেক্টের ডাক্তার নয় বলে!প্রেসক্রিপশন লিখেন না বলে।সকলে হাসিমুখেই মেনে নিয়েছে কয়েক গজের পার্থক্যে বসে কলেজের শিক্ষক গন চা বিস্কিটে নাস্তা করছে আর তাদের ছাত্র গন নব্য ইন্টার্ন ডক্টর গন ফূর্তি করে পিঠা খাচ্ছেন।আমি তো আমি!প্রতিবাদ করেছিলাম।বহু জনকে জানিয়েছিলেম এই ধরনের প্রোগ্রামে সব শিক্ষক উপস্থিত থাকতে হবে।কোম্পানী এরেঞ্জ করতে পারলে করবে।নইলে দরকার নেই।।কিন্তু এই ডিভাইটেশন/কেউ খাবে কেউ খাবে না/কেউ অনার পাবে কেউ পাবে না - এটা অনেক ডাক্তাররাই যে যুগ যুগ ধরে জিইয়ে রাখতে ভালবাসতেছেন!!

 

 

প্রশ্ন তুলবেন আমি যখন ইন্টার্ন ছিলাম?অট্টহাসি দিব।আমি তত্বাবধায়ক সরকারের সময় ইন্টার্নশীপ করেছি।হাসপাতালে কোম্পানী রিপ্রেজেনটিভ ঢোকা নিষিদ্ধ ছিল।এই লাইনটির মাঝেই সমাধান আছে।আমি এবং আমরা কোন পিকনিক/ট্যুর/পিঠা উৎসবে যাইনি।একেই হয়ত নিয়ত গুনে বরকত বলে!

 

 

ঔষধ কোম্পানী বৃটিশ বেনিয়ার ব্বংশধর।তাদের লাভের জন্য তারা দৃশ্যমান এমন অনেক কিছু এন্টারটেইন কিছু সংখ্যক ডাক্তারদের করে।পয়েন্ট সুড বি নোটেড!কিছু সংখ্যক।একটি শহরে কিংবা বিভাগে হাজার হাজার ডাক্তারের মাঝে কেবল হাতে গোনা কয়েকজন চিকিৎসক থাকেন যারা সীমাহীন প্রাকটিস জমাতে পারেন।আর এদের কে হেপী করার জন্য সব কোম্পানী আদা জল খেয়ে লাগেন।যেহেতু প্রমোটিং টা ওদের কাজের ই অংশ - ওরা এটাতে কোন রাখ ঢাক রাখে না।আর প্রাকটিশনার রাও এই আনন্দ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন।এদের প্রাকটিস আছে।ঔষধ কোম্পানী এদের ঘিরে থাকে।এদের টাকা আছে।রাজনীতিবিদ/ প্রশাসন এদের প্রোটেক্ট করে।অরক্ষিত,অসহায় এবং ওনাদের ভাল থাকার জেলাসীতে আক্রান্ত সমাজের রোষানলে পরে বাকী চিকিৎসক সমাজ।এদের জীবন ধারন করতে হয় স্রেফ কর্মজীবী মানুষের মত গায়ে খেটে।

 

 

একজন বন খেকো ওসমানের তোষক ভর্তি টাকা পেলে জনগন অন্য বন কর্মকর্তাদের আঘাত করে না।একজন ম্যাজিষ্ট্রেট ত্রিশ লক্ষ টাকা ঘুষ খেলে জনগন অন্য ম্যাজিষ্ট্রেটকে মারে না।একজন UNO ইলিশ চুরি করলেও জনগন সব UNO কে চোর বলে না।একজন SP ঘুষ খেয়ে পেট মোটা করলেও জনগন সব SP কে ঘুষখোর বলে না।

কিন্তু কিছু সিনিয়র কিংবা ভাল প্রাকটিশনার ডাক্তারদের স্বেচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভুলের প্রায়শ্চিত্ত সব চিকিৎসককে করতে হয়।
জেনেরিক নাম লেখার সিদ্ধান্ত ডাক্তারদের ললাট থেকে ঔষধ কোম্পানীর ভিজিট খাওয়া অপবাদ কমাবে।কিন্তু এর সাথে সাথে আরো বহু ব্যবস্থা - সম্পূর্ন ডিজিটাল ঔষধ সরবরাহ সিস্টেম,, নেয়া হবে না বলে এতে জনগনের ভোগান্তি বাড়বে বৈ কমবে না।।

 

 

জানি হাল ধরার কেউ নেই।তবু স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে হয় - সব বদনাম দুর্নাম অপবাদ ঘুচে এদেশের চিকিৎসকরা একটা সম্মানিত জীবন আর নিরাপদ কাজের পরিবেশ পাবে।আজ না হয় কাল।এক না একদিন পাবেই পাবে।।
___________________________________

ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী । দেশের জনপ্রিয় কলামিস্ট। মহৎপ্রতিভাবান কথাশিল্পী। মেডিকেল অফিসার, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়