Ameen Qudir

Published:
2017-01-09 15:56:11 BdST

এই ছবি দেখে শিক্ষককন্যা এক ডাক্তারের কান্না


ডা. অঞ্জলি সাহা

____________________________


এই ছবি কি কেবলি ছবি ! নাকি এই ছবি অামাদের যাপিত জীবনের এপিক তৈলচিত্র। ছবির এই ছাত্রসাহেব কে ! কাঁচুমাচু প্রধান শিক্ষক কে , তা জানার দরকার নেই। ছাত্রনবাবকে কিছু বলার নেই আমার।
তারা আমাদের যাপিত জীবনের নিত্য কঠিন বাস্তবতার সাধারণ অভিনয় করছেন মাত্র।


আমরা এভাবেই বেঁচে আছি। হেল্থ কমপ্লেক্সে যে ডাক্তার চিকিৎসা দেন, তিনিও এরকম মহাঅসম্মানের শিকার। ইন্টার্ন ডাক্তারদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশী দুর্ব্যবহার করা হয়। সংঘবদ্ধ রাজনীতিঅলা রোগরোগীরা তাদের মানুষ মনে করে না।

এভাবেই অসম্মান , বেইজ্জতি সহ্য করে আমাদের চলতে হয়। আর চলতে হয় শিক্ষককে।

 

আমি নিজে একজন প্রাইমারী স্কুল শিক্ষকের সন্তান। আমাদের পাঁচ ভাইবোনকে বাবা কিভাবে জীবনের কঠোর সংগ্রাম করে মানুষ করেছেন , সেকথা ভাবলে এখনও চোখে জল অাসে ভরে ।


কিভাবে একজন শিক্ষক সা্মান্য আয় দিয়ে তিন পুত্র , দুই কন্যাকে ডাক্তার, এমবিএ , প্রকৌশলী বানিয়েছেন কাউকে না ঠকিয়ে । কোন ছাত্রকে না ঠকিয়ে। সারা জীবন তিনি পড়ে থাকতেন তার স্কুল নিয়ে। আমরা ভাইবোনরা পড়ে থাকতাম বই নিয়ে।


বাবা বলতেন , মাগো বই হল ভগবান। মাগো বই হল মা সরস্বতী । মায়ের অসম্মান করিস না।
সেই বাবার আদেশ পালন করে ডাক্তার হয়েছি সরস্বতীর কৃপায়।
কিন্তু সেই বাবা যখন একদিন আমায় প্রশ্ন করেছিলেন, মা গো, ডাক্তারদের কেন পত্র পত্রিকায় কসাই লেখে। কসাই আর ডাক্তার তো এক নয়।

বাবার বিস্ময়ের প্রশ্ন আজও চোখের সামনে দেখতে পাই।

আজ অনলাইনে এই ছবি দেখে আমার চোখ কান্নায় ভরে এলো। এই ছবি দেখে আজ বুঝতে পারি , সমাজের কত অসম্মান , অমর্যাদার শিকার হয়ে একজন নিরীহ দরিদ্র আধাপেটা খাওয়া শিক্ষক তার সন্তানদের মানুষ করেন , হায়রে আমাদের জীবনযাপন।

আজ বাবাকেই বরং প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু বাবা, সেই শিক্ষককে অসম্মান করে যারা ! তারা ! তার বেলা! 
প্রশ্ন ভগবানের কাছেও, যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু , নিভাইছে তব আলো , তুমি তাদের ক্ষমা করিয়াছো , তুমি কি বেসেছো ভাল।

__________________________
ডা. অঞ্জলি সাহা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়