Ameen Qudir

Published:
2017-01-04 17:56:14 BdST

পনের বছরের সাতকাহন


ডা. নিবেদিতা নার্গিস পান্না

______________________

আমার অ্যানেস্থেসিয়া ক্যারিয়ারের অধ্যায় নিয়ে লিখছি। লিখতে গিয়ে উঠে এসেছে কিছু মানুষের নাম।এই মানুষগুলোর সাথে আমার পরিচয় ২০০১ সালে। আমি ময়মন সিংহ থেকে এম ডি কোর্সে চান্স পেয়ে ঢাকা আসি। ইকবাল স্যার তখন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইন্সটিটিউট এর প্রভিসি আর আমাদের ডিপার্টমেন্টের হেড। স্যারের সঙ্গে দেখা করতে হলে সঙ্গে অন্য স্যারদের নিয়ে তবে সেই গ্লাস ডোর পার হয়ে ঢুকতে হয়। স্যার হিসেবে পেলাম আমার মেডিক্যালের অ্যানাটমির শিক্ষক নিজাম স্যারকে, মিলির বর আক্তার স্যারকে আর সম্পা আপার বর সিজান স্যারকে। ক্লাসে আমি খুব স্বতঃস্ফূর্ত বক্তা ছিলাম। সংকোচ খুব কম ছিল স্টুডেন্ট লাইফে। আমি খুব সহজেই এদের সঙ্গে মানিয়ে নিলাম।

পুস্প আর হাসিনা তখন বি এস এম এম ইউতে মেডিক্যাল অফিসার। দিপু আমার রিডিং পার্টনার। ঝিনটু, কামাল ভাই, শহীদ ভাই, সাজ্জাদ ভাই, রেজা ভাই সাবিনা এরা সব্বাই আমাদের সমসাময়িক সহপাঠী। ক্যারিয়ারের আদর্শ ইকবাল স্যার, খলিল স্যার, জাহাঙ্গীর স্যার আর গ্রাহাম আরথারস। ইংল্যান্ড এর এই শিক্ষক বছর বছর আসতেন আমাদের পড়াতে। ইংরেজি ভুলভাল বললে উৎসাহ দেবার জন্য বলতেন- “আমি ত একটা ভাষাই জানি আর তোমরা জানো দুই বা তাঁর বেশী। অতএব তোমরাই সেরা”

এই হাসপাতালের বি ব্লকের দশ তলায় লাইব্রেরীতে পড়তাম। ডিউটি ২ টায় শেষ করে রাত ১০ টা অব্দি পড়তাম। দিপু আর আমি পার্ট এ পাশ করলাম, এফ সিপিএস পার্ট ওয়ান এও পাশ জুটল। ধুপ করে এম ডি ছেড়ে দিল দিপু। আমি ১৭ তম বিসি এস এর সরকারী ডেপুটেশনে স্টুডেন্ট। আমি থিসিজ পার্ট শুরু করলাম। তখন রেজা ভাইয়ের সঙ্গে ডিসকাস করে করে পড়েছি।

খুব সহজ ছিল সেইসব দিন। আমি থিসিজ পার্টে এসে খুব অসুস্থ হলাম। প্রেগ্নান্সি কমপ্লিকেশন থেকে সেপটিসেমিয়া এবং ব্লাড ট্রান্স ফিউশন। দশদিন হাসপাতালে ভর্তি থেকে যখন কোর্সে ফিরলাম তখন আমি অন্য মানুষ। নিজের সঙ্গে লড়াই করে করে শেষ করলাম এফ সি পি এস আর থিসিজ। ইতিমধ্যে দীপু, শ্যামল, কামরুল ভাই, মাসুম ভাই, পুস্প আর হাসিনা জয়েন করেছে সিজান স্যারের সঙ্গে নতুন হাসপাতালে।

পাশ করার সঙ্গে সঙ্গে সিজান স্যারের ফোন পেয়েছিলাম। বাংলাদেশের প্রথম কর্পোরেট হাসপাতাল- অ্যাপোলো হাসপাতাল। দেশে বিদেশে এই চেইন হাসপাতালের খুব সুনাম। আর আমার পরিচিত অনেক কজন এখানে কাজ করছে। বি এস এম এম ইউ ছেড়ে, সরকারী চাকরী ছেড়ে ওরা এসেছে। অতএব আমিও ভেবেচিন্তে ২০০৫ সালের অক্টোবরে জয়েন করি এপোলো হাসপাতালে।

কামরুল ডটকম ছিলেন কম্পিউটার স্কিলনেসে সেরা সহকর্মী। শ্যামল ছিল ডাক্তারদের আইনী বিষয়ে সেরা পরামর্শদাতা। হাসিনা ছিল খুব ঠাণ্ডা মাথার চৌকশ কর্মী আর পুস্প ছিল হইচই, গানে আর খাওয়ায় সেরা। মাসুম ভাই ছিলেন রসিক এবং কেয়ারিং বড়ভাই। গিয়াস, ওয়াহিদ, লিটন, জাহিদ ছিল পারদর্শী এক একটি কর্মী। আমরা ডিউটিতে থাকলে খুব নিশ্চিন্ত থাকতেন স্যার।

আমাদের পড়াশুনার একটা অংশের গাঁথুনি ছিল খুব শক্ত। ক্লিনিকাল হাত আমাদের খুব ভাল, কেননা বিভিন্ন হাসপাতালে প্রচুর রুটিন এবং ইমারজেন্সি রোগী ডিল করেছি। কিন্তু কিছু শিক্ষা থিউরিতে সীমাবদ্ধ ছিল। এই হাসপাতালে ঢুকার প্রথম দিনেই আমি তিনটি ইনভেসিভ প্রসেডিওর করলাম প্রবল উৎসাহে। মনে আছে ওয়াহিদ ছিল সেদিন আমার সঙ্গে। দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা ডিউটি চার/ পাঁচদিন অন্তর অন্তর। একদিকে এনেস্থেসিয়াতে কাজ করি, অন্যদিকে সামাল দেই আই সি ইউ। কঠিন পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে স্কিলনেস বাড়ে তিন বছরের আই সি ইউ ডিউটিতে। ইন্ডিয়ান কনসালটেন্ট ভি কে গ্রোভার আর সিজান স্যার খুব উদারতায় আমাদের কাজ করতে দিতেন। অল্প কদিনেই আমরা হয়ে যাই হাসপাতালের সেরা ডিপার্টমেন্ট। সব কিছুতেই আমাদের দক্ষতার ছাপ। মনে আছে পাওয়ার স্যার বলতেন- পুরো হাসপাতাল কন্ট্রোল করছে এনেস্থেসিয়া বিভাগ। সেই সময় কাজের আনন্দ ছিল এক্কেবারে অন্যরকম।

প্রফুল বি পাওয়ার আমার দেখা সেরা পরিচালক। উনি নিজেও অ্যানেস্থেসিয়াতে ক্যারিয়ার করা মানুষ ছিলেন। উনার সঙ্গে সিজান স্যারের ছিল চমৎকার বোঝাপড়া। হাসপাতালের প্রতিটি আনাচে কানাচে তাঁর ছিল অবাধ বিচরন। আমরা তাঁর উদ্যোগে জে সি আই সনদ পাবার জন্য ক্লাস শুরু করি। সে যে কি উৎসবমুখর দুর্দান্ত শিক্ষা! ক্লাসে দেরি করে পৌঁছাবার শাস্তি হল- সকলকে গান গেয়ে শোনানো। অক্লান্ত পরিশ্রম আর একনিষ্ঠতায় আমরা জে সি আই এক্রিডেশন পাই। মনে আছে বিদেশি পরিদর্শক আমাকে বলেছিলেন- “আমার এন্ডস্কপি দরকার হলে আমি তোমার কাছে এসে সিডেশন নেব” ( চলবে)
_____________________________

লেখক ডা. নিবেদিতা নার্গিস পান্না

Consultant ,Sheikh Fazilatunnessa Mujib Memorial KPJ Specialised Hospital
Past: Apollo Hospitals Dhaka and Mymensing medical College, Dhaka Medical college

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়