Ameen Qudir

Published:
2019-02-05 10:35:25 BdST

১৭ কোটি লোকের জন্য ডাক্তার প্রয়োজন ১ লক্ষ ৭০ হাজার



ডাঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম
-------------------------------------------

সমাজে সংসারে শুধু নাই নাই নাই - আসলে কতটা দরকার তা কি আমরা জানি, Let's know it

WHO চান প্রতি ১ হাজার জন মানুষের জন্য ১ জন ডাঃ, তাহলে আমাদের ১৭ কোটি লোকের জন্য ডাঃ প্রয়োজন ১ লক্ষ ৭০ হাজার, আমাদের কি অদূর বা সুদুর ভবিষ্যতে একগুলো পদ তৈরী করার কোন পরিকল্পনা আছে, ভারত অবশ্য ২০২৪ সালের মধ্য অর্থাৎ তাদের ৭৫ তম প্রজাতন্ত্র দিবষের পূর্ব এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে অঙ্গীকারবদ্ধ

প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য ১ টি হাসপাতালে বেড থাকার কথা, আমাদের কতটা আছে বা আমরা কবে অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে পারব, আমাদের National Health Policy কি, যাতে সরকারি হাসপাতালে অসুস্থ রোগী ও কুকুর বিড়াল একসঙ্গে পাশাপাশি করিডরে বারান্দার ফ্লোরে শুতে না হয় (অত্যন্ত অমানবিক ও বেদনাদায়ক)

৪৫৫০ টি ইউনিয়নে প্রতিটিতে প্রায় ৪০ হাজার লোকের বাস হলে প্রতিটিতে ৪০ জন ডাক্তার থাকার কথা, বাস্তবতা এখনও ইউনিয়ন পরিষদে কোন ডাঃরের পোষ্ট হয়ত তৈরী করা সম্ভব হয় নি

তেমনি ৪৯২ টি উপজেলায় প্রতিটিতে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষের বাস হলে প্রতিটিতে ডাঃ প্রয়োজন ৩৪০ জন, আছে ক'জন আর পদ তৈরী করা গেছেই বা ক'জনের

একই ধারায় ৬৪ টি জেলার প্রতিটিতে ২৬ লক্ষ মানুষের জন্য ২ হাজার ৬ শত ডাঃ প্রয়োজন আর জেলা হাসপাতালগুলোতে বেড সংখ্যা প্রয়োজন কমপক্ষে ২৫০

ডাঃরের সংখ্যা এবং হাসপাতালে বেড সংখ্যা এ'হারে থাকলে রোগীকে যথেষ্ট পর্যাপ্ত সময় নিয়ে দেখা যাবে, আশা করা যায়, আম জনতার কোন অভাব অভিযোগ থাকবে না

এবার আসুন আমরা প্রতিটি ডিউটি আওয়ারে কতজন করে রোগী দেখব? প্রতি ১০ মিনিটে একজন করে হলে সাড়ে ৬ ঘন্টার ডিউটি আওয়ারে অনধিক ৩০ জন, কেননা, আমরা তো মানুষ, যন্ত্রমানব না, সকালে যাবার পর কলিগদের সাথে কুশল বিনিময়, ১১টার দিকে চা-সিঙ্গারা, দুপুরে নামাজ - এই ৩ দফায় ৩০ মিনিট করে রিক্রিয়েশন ব্রেক দেড় ঘন্টা হলে রোগী দেখার জন্য বরাদ্দ থাকে প্রতিদিন ৫ ঘন্টা

এখন প্রশ্ন হল, আমি বা আমরা ৩০ জন রোগী দেখলেই তো হবে না, দরজার ওপারে তো ৫০/৬০ জনের লাইন, এর সমাধান হল ডবল শিফ্ট সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২ঃ৩০ আর বিকেলের শিফ্ট দুপুর ২ঃ৩০ থেকে রাত্রি ৯ টা, এতে ডাক্তারদের প্রচুর কর্মসংস্থান বাড়বে, প্রায় দ্বিগুন, আলহামদুলিল্লাহ বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি নেই বললেই চলে, ফলে দিন রাতে আলো আঁধারের কোন অসুবিধে নেই

'৭১ সালে দেশ স্বাধীনের সময় জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি, এখন ১৭ কোটি, এই দ্বিগুনেরও বেশী জনসাধারণকে সেবা দেওয়া সম্ভব দুই শিফ্ট চালু করে এবং কোন রকম ইট পাথরের কাঠোমগত উন্নয়ন ছাড়াই, উপজেলা, জেলা সদর ও মেডিকেল কলেজগুলোর আউটডোর রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী পোষ্ট ও ঘরের সম্প্রসারণ হওয়াটা নৈতিক। পাক-বৃটিশ শাসনের পর কাঠামোগত সম্পসারণ অত্যন্ত ধীর গতিতে ছিল, যা বর্তমানে বেশ গতি পেয়েছে

জনসংখ্যা ঘনত্বে আমরা বিশ্বে ১২ তম এবং জনসংখ্যা অনুযায়ী বিশ্বে ৮ম। এই বিপুল পরিমান মানুষকে মান সপ্মন্ন চিকিৎসা দেওয়া ও সন্তুষ্ট করা অত্যন্ত দুরুহ। খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসা এই ৫ টি মৌলিক চাহিদার মধ্যে মানুষ শুধুমাত্র চিকিৎসা পাওয়াটা সংগত কারণেই বিনামূল্যে পাবার আশা করে, সংগত কারণে বলার অর্থ আমাদের মাথাপিছু বাৎসরিক আয় ১৭৫৪ মার্কিন ডলার অর্থাৎ মাসে ১২ হাজার টাকা মাত্র, যা বিশ্বে মাথা পিছু আয়ে ১৩৯ তম (দুঃখজনক), এই টাকা দিয়ে পুরো পরিবারের ৩ বেলা আহার যোগানো, বাসা ভাড়া, পোশাকের সংস্থান অত্যন্ত দূরুহ, তার উপর অসুখ বিসুখ হলে যেন গোদের উপর বিষ ফোঁড়া

দেশের ২৩% দরিদ্র ও ১২% অতি দরিদ্র অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ১ তৃতীয়াংশ (৩৫%) বিনা বা নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা দেবার দায়িত্ব আমরা উপেক্ষা করতে পারি না

যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণীর জন্ম হয় না। চিকিৎসকরা দেশের শীর্ষস্থানীয় মেধাবি, যেহেতু আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশ, মাঠ পর্যায়ে যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের নূন্যতম বেসিক মাসে ১ হাজার ডলার বা ৮৪ হাজার টাকা থেকে শুরু হওয়া দরকার, সরকার চিকিৎসকদের জন্য ডরমেটরি তৈরী করে অর্থের অপচয় নাও করতে পারেন, কেননা, সেগুলো রক্ষণা বেক্ষণ সংগত কারণেই সম্ভব হয় না, ১ হাজার টাকা বেসিক সেলারি হলে আমরা যে বাসা ভাড়া পাব, তা দিয়ে আশেপাশে অনেক মান সম্পন্ন বাসা বাড়ি পাওয়া সম্ভব, প্রয়োজনে পৃথক বেতন কাঠামো তৈরী করা যেতে পারে

SDG অনুযায়ী প্রতি হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য ৪.৪৫ জন ডাক্তার, সেবিকা ও প্রসুতিবিদ প্রয়োজন, সে হিসেবে দেশে শতাধিক যে মেডিকেল কলেজ আছে তারা আগামী ১০ বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় ১ হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য ১ জন ডাক্তার তৈরি করতে পারবে, ঘরে ঘরে ডাক্তার। তখন ভুয়া ডাক্তারের সংখ্যা এমনিতেই কমে যাবে, বাস্তবে দেশে এত ঔষধের দোকানও নাই, তবুও WHO এটাই চান, এখন দরকার এসব ডাক্তারদের মান সম্মতভাবে তৈরী করা, প্রকৃয়া শুরু যখন হয়েছে, সময়ের প্রয়োজনে সবই এক সময় ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু ১ লক্ষ ৭০ হাজার ডাক্তারের পাশাপাশি যে ৫ লক্ষ সেবিকা ও ধাতৃবিদ প্রয়োজন, তা আমরা কতটুকু এগুতে পারছি।

-----------------------------------------
ডাঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম
এম,বি,বি,এস (রাজঃ); এফ,সি,পি,এস (নিউরো-সার্জারি)
কনসালটেন্ট (নিউরো-সার্জারি)

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়