Ameen Qudir

Published:
2019-01-19 23:05:25 BdST

বিশেষ কলামনিরোগ শরীর নিয়া ব্যবসা


 

লেখকের ছবি।



ডা. সাঈদ সুজন
_______________________________

 

আমাদের দেশে কিছু অতি চালাক ব্যবসায়ী টাইপের ফকির আছেন, যারা বাঙালিদের শারীরিক নরমাল কন্ডিশনকে রোগ সাজিয়ে ব্যবসা করছে। সেদিন একটা মেলায় দেখলাম এক লোক আংটি বিক্রী করছে । যেসব রোগের চিকিৎসা দেয় সেগুলো হলো- বাচ্চাদের বিছানায় হিসু করার চিকিৎসা , প্রস্রাব করার পর পুরুষের শরীর ঝাঁকি দেয় সেটার চিকিৎসা, ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর কাঁপার চিকিৎসা ও যৌন মিলনে টাইম স্বল্পতার চিকিৎসা ।

আমরা জানি একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর বাচ্চাদের ইউরিনারি ব্লাডারের কন্ট্রোল আসে। তার আগে পর্যন্ত বাচ্চা বিছানায় হিসু করবে সেটাই স্বাভাবিক। ঐ বয়সের পর যদি না পারে তাকে “ নকচারনাল এনুরেসিস” বলে। সেটার কারন হতে পারে- ডেভেলপমেন্টাল ডিলে, জেনেটিক্যাল অথবা প্রস্রাবে ইনফেকশন। এর জন্য কিছু বিহেভিয়ারাল চেঞ্জ ও মেডিকেশনেই পুরো ঠিক হয়ে যায়। ছোট বাচ্চার হিসুর জন্য কোমড় ভরে তাবিজ বেধে কোনো লাভ নাই।

প্রস্রাব করার পর পুরুষের শরীর ঝাঁকি দেয়, সেটা শরীরের একটা স্বাভাবিক কার্য। কারন আমরা জানি- পুরুষের প্রস্রাবের পুরুষাঙ্গের দুই কাজ। ইউরিনেশন ও জননাঙ্গ । তাই প্রস্রাবের রাস্তার মাঝে একটা গেট বা ইউরেথ্রাল ভাল্ভ থাকে । যখন প্রস্রাব শেষ হয় , তখন ঐ ভাল্ভ ক্লোজ হয় এবং ইউরেথ্রাল অবশিষ্ট ইউরিনকে বের করতে পুরো শরীরের একটা মিনিমাম খিঁচুনি ভাব হয় । প্রস্রাবের বেগ থাকলে সেইবার বেশী হয় এমন। যা আমাদের অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। একে “পোস্ট ইকচুরিশন কনভালশন” ও বলা হয়ে থাকে। যা শরীরেরর জন্য খুবি স্বাভাবিক মেকানিজম। একে যদি কেউ রোগ বলে তাবিজ ব্যবসা করে তাকে জোচ্চুরি ছাড়া কিছু বলা যায় না।

ঠান্ডা পানিতে নামলে শরীর কাঁপে । এটাও আমাদের শরীরের জন্য একটা প্রোটেক্টিভ উপায়। কারন হঠাত অতিরিক্ত ঠান্ডায় গেলে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা খুব দ্রুত কমে যায়। কিন্তু আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কন্ট্রোল হয় ব্রেইনের হাইপোথ্যালামাস দিয়ে। হাইপোথ্যালামাস তাপমাত্রা ব্যালেন্স করার জন্য শরীরের কিছু মেজানিজম চালু করে। তার মধ্যে একটা হলো – “শিভারিং বা ইনভলান্টারি মাসল কন্ট্রাকশন” । আমরা জানি মাসল কন্ট্রাকশনে যে এনার্জি তৈরি হয়, তা হিট বা তাপমাত্রায় রূপান্তরিত হয়। যা আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায় । সুতরাং অনেক ঠান্ডায় শরীর কাঁপা শরীরের নরমাল ফিজিওলজি।

সবচেয়ে মারাত্মক জোচ্চুরি করে যেই গোপন বিষয়টা নিয়ে সেটা হলো- ঠযৌন দূর্বলতার দোহাইঠ। কারন তারা আপনাকে এমন কিছু উদাহরণ দিবে, সেটা শুনার পর “আপনার নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে দূর্বল পুরুষ মনে হবে”। ঐ সব ব্যবসায়ী হকাররা প্রথমে আপনার ব্রেইন ওয়াশ করে নিবে , পরে পকেট কেটে নিবে। আমাদের দেশে যেহেতু উন্নত বিশ্বের মত সেক্স এডুকেশন সিস্টেম নাই, সুতরাং মানব শরীরের যৌন ধারনা আসে বন্ধুর গল্প, পর্ন মুভি ও কিছু বই ইন্টারনেট ঘেটে। এতে করে সব কিছুই মুভিকে স্ট্যান্ডার্ড মনে করে । মুভিতে নায়ক দুই ঘন্টা সক্ষম, কিন্তু বাস্তবে দুই মিনিট সক্ষম না। তার মানে এখানেই দূর্বলতা আছে ভেবেই ভিড়ে ঐ ভন্ডদের কাছে। আর ঐ ভন্ডরাও মানুষের মাইন্ড রিড করে ওখানেই আঘাত করে। দূর্বল প্রমাণ করেই ছাড়ে আপনাকে। “প্রিম্যাচুর ইজাকুলেশন” এর ভয় ৯৯% মানুষের মনে। তারা ভাবে মুভির দুই ঘন্টার এক মিনিট মানেই নিজে দূর্বল।

এমনকি বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন ইত্যাদি দোহাই ঠেলে দেয়। কিন্তু মেডিকেল সাইন্স বলে প্রিম্যাচুর ইজাকুলেশনের সংজ্ঞাও দিয়ে দিয়েছেন। আইসিডি-১০ অনুযায়ী – সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সের সময় ১৫ সেকেন্ডের কম হলে তাকে প্রিম্যাচুর বলে। তবে ইন্টারন্যাশনাল ইউরোলজি স্ট্যান্ডার্ড টাইম হলো ৪-৮ মিনিট । এই ভ্রান্ত ধারনার জন্য লাখো কোটি মানুষ ভুল চিকিৎসা নিচ্ছেন । অপ্রয়োজনে ডাক্তারের পিছনে দৌড়াচ্ছেন, অকারনে ডিপ্রেশনে আছেন, আংটি তাবিজের ব্যবসাকে রমরমা করে দিচ্ছেন ।

সুতরাং- সবাই নিজে সচেতন হতে ও আশে পাশের মানুষকে ভ্রান্ত ধারনা হতে মুক্তি পেতে সাহায্য করুন। ব্যাখ্যার প্রয়োজনে কিছু সেন্সরড শব্দ ব্যবহারের জন্য দুঃখিত। সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
__________________________

ডা. সাঈদ সুজন । সুলেখক।

 

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়