Ameen Qudir

Published:
2019-01-18 04:20:29 BdST

শোক এপিটাফকলেরায় সন্তান হারানো বাবার নির্দেশ এবং এক মানবসেবী এমবিবিএস ডাক্তার



ডেস্ক
___________________________

তিনি এলাকায় গরীবের ডাক্তার নামে খ্যাত ছিলেন। তার বাবাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি তিনি রেখেছিলেন। তার নিজের দুটি ভাই মারা যায় কলেরায়। দারিদ্রের কারণ তারা পায় নি সুচিকিৎসা। এমবিবিএস ডাক্তারের অভাবে সাধারণ চিকিৎসায় মারা যায় ভাই দুটি। তাদের পিতা স্বয়ং পল্লী চিকিৎসক হয়েও বাঁচাতে পারেন নি নিজের সন্তানদের। সেই আক্ষেপ ছিল জীবন ভর। আর তাই এমবিবিএস সন্তানের কাছে আদায় করেছিলেন পরম প্রতিশ্রুতি। কোন রোগী যেন পয়সার অভাবে তার দরোজা দিয়ে ফিরে না যায়। সে কথা রেখেই চলছিলেন সন্তানটি । কিন্তু মৃত্যু অমোঘ এখনও। তাই অকালে প্রয়ান ঘটে এই নবীন কল্যাণী ডাক্তারকে। তিনি সব রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা দিতেন।

এই মহান মানবসেবীর নাম ডা. দাশ রণবীর। একজন সাদামাটা মানুষ ছিলেন। সবসময়ই হাসি খুশিতে থাকতেন। যত বড় রোগ নিয়ে তার কাছে নিয়ে গেলে সে যে হাসি মুখে পরামর্শ লিখতেন। তাতেই যাদু ছিল। মানুষ আজরাইলের বা যমের দুয়ার থেকে বেঁচে আসতো। গরীব মানুষদের জন্য ছিলেন ঈশ্বরতুল্য। নিজের পকেটের টাকা দিয়ে ল্যাবের টেস্ট করিয়ে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতেন।

ডা. দাশ রনবীর ১৯৭৫ সালের ৫ জুলাই বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মধ্য বিল্বগ্রাম। বর্তমানে এ গ্রামটি দক্ষিণ বিল্বগ্রাম নামে সুপরিচিত। এ ছোট্ট গ্রামের ছোট একটা পরিবারে তৎকালীন সমাজের পল্লী চিকিৎসক ছিলেন ডা. কৃষ্ণকান্ত দাশ । তিনি ডা. দাশ রণবীরের পিতা।মাতা শান্তি রাণী দাশও বেঁচে নেই।

৫ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে ডা. দাশ রণবীর ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। বড় ভাই ও সেঝ ভাই তার জন্মের আগেই কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। বাকি ৪ বোন ও ৩ ভাইয়ের মধ্যে বড় বোন হলেন হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট আরতী রাণী দাস। মেঝ বোন অঞ্জলী রাণী দাস সরকারি চাকরি থেকে বর্তমানে অবসরে । বাকি দুই বোন শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। দ্বিতীয় ভাই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।

ডা. দাশ রণবীর মধ্য বিল্বগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষে ভর্তি হন গৌরনদী উপজেলার পালরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়ে ১৯৯০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।

১৯৯২ মালে ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর মেডিকেল পড়তে চলে যান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে পাস করে এসে ২৭ তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।

বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৮ সালে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার পদে যোগদান করেন তিনি। এর ২ বছর পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি লাভ করে তিনি গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন।

তিনি ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলা নিবাসী বাবু জগদীশ রায়ের কনিষ্ঠ কন্যা জয়িতা রায় তমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার কন্যা হৃদিতা বর্ণ দাস (৩১ মাস), হৃতিশা বর্ণ দাস (১১ মাস)।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়