Ameen Qudir

Published:
2018-12-08 23:00:02 BdST

ডাক্তারজননী হেনা অপরাধী হলে ভিকারুননেসার হাজার হাজার ছাত্রী তাঁর মুক্তির জন্য কাঁদছে কেন!


 

 

ডা. সুমিতা সাহা
________________________

ডাক্তার জননী হাসনা হেনা অপরাধী হলে ভিকারুননেসার হাজার হাজার ছাত্রী তাঁর মুক্তির জন্য আজ মিছিল করছে কেন ! তাদের শিক্ষকের মুক্তির জন্য আন্দোলন করছে কেন ! শিক্ষিকার জন্য তারা চোখের পানি ফেলছে কেন ! একজন নির্দোষ শিক্ষককে এই অরিত্রীর মৃত্যুর শোকাবহ ঘটনায় বলি দেয়া কি ঠিক হল !

হাসনা হেনার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন রত বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রীরা জানান, হাসনা হেনা আপা একজন সদালাপী মিষ্টিভাষী শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে বর্তমান ও প্রাক্তন কোন ছাত্রীর অভিযোগ নেই। যে শিক্ষকরা খারাপ ব্যবহার করেন , তাদের তালিকায় তিনি নেই। তার হাতে শিক্ষা পেয়ে হাজারো ছাত্রী আজ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক , আমলা হিসেবে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত। তার নিজের সন্তানকেও তিনি সুশিক্ষা দিয়ে ডাক্তার বানিয়েছেন। অথচ এমনও অনেক কটুভাষী শিক্ষক আছেন , তাদের সন্তান বখে গেছে।

যে মিডিয়ার অতিরঞ্জিত আবেগের কারণে নির্দোষ হাসনা হেনা জেলে সেই মিডিয়ার পাতায় খবর ছোট করে হলেও প্রকাশ হচ্ছে: এবার শিক্ষক হাসনা হেনার জন্য রাস্তায় ভিকনুনের শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়,
শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ‘প্ররোচণার’ অভিযোগে করা মামলায় কারাগারে থাকা শিক্ষক হাসনা হেনার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একদল শিক্ষার্থী।

 

ছুটির দিন হলেও
শুক্রবার দুপুরে বেইলি রোডে স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে ‘ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রীবৃন্দ’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে হাজার হাজার ছাত্রী।

দুপুর ২টা থেকে প্র য় ৪ঘণ্টা ধরে চলা এই অবস্থান কর্মসূচিতে অভিভাবকরাও যোগ দেন।
আন্দোলনকারীদের ব্যানারে লেখা ছিল
‘নিরপরাধ হাসনা হেনা আপার নিঃশর্ত মুক্তিসহ সসম্মানে ফিরিয়ে আনার দাবিতে’ এই অবস্থান ।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী রোজ বলেন, “যে শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উনি কোনোভাবে অরিত্রীর ঘটনায় দায়ী নন। উনার নাম কোনোভাবেই ঘটনার সঙ্গে আসেনি। উনি পরিস্থিতির শিকার বলে আমরা মনে করছি।

রোজ বলেন, এই অবস্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরাও অরিত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় ‘সুষ্ঠু বিচার চায়। কিন্তু কোনো শিক্ষিকা যাতে অন্যায়ভাবে হয়রানির শিকার না হন আমরা সেটাও চাচ্ছি।

অভিযোগ ছিল, পরীক্ষার সময় অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পাওয়ার পর তার বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে ‘অপমান করেছিলেন’ অধ্যক্ষ। সে কারণে ওই কিশোরী আত্মহত্যা করেন। যদি তাই হয়, তবে হাসনা হেনার অপরাধ কি ! তিনি অপমান করেছেন বলে তো কেউ অভিযোগ করে নি।

স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, অরিত্রী রোববার বার্ষিক পরীক্ষায় মোবাইল ফোনে নকলসহ ধরা পড়েছিলেন।

হাসনা হেনা ছিলেন অরিত্রীর ক্লাস টিচার। সেটা কি তার দোষ! অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনার তার বাবা যে মামলা করেছিলেন সেখানে ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আখতারের সঙ্গে তাকে আসামি করা হয়।
কিন্তু মামলার বিবরণে তিনিও শ্রেনী শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন নি। শ্রেনী শিক্ষক হওয়া তো আত্মহত্যায় প্ররোচনার মত অপরাধ হতে পারে না। তাহলে কেউ তো আর শিক্ষক হতে চাইবে না।

 

 


হাসনা হেনাকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে শুক্রবার স্কুলের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা যেসব প্ল্যাকার্ড দেখায়, তাতে লেখা ছিল- ‘দোষীদের বিচার করতে গিয়ে নির্দোষের শাস্তি কেন?’, ‘অরিত্রী আমাদের বোন, শিক্ষক হাসনা হেনা আমাদের মা। নির্দোষের নিঃশর্ত মুক্তি চাই’, ‘শিক্ষকের হাতে হাতকড়া; একি আত্মহত্যার প্ররোচনা নয়?’

এ সময় ‘নির্দোষ মায়ের মুক্তি চাই, দিতে হবে’, ‘আমাদের মা হাসনা হেনা, তার স্থান জেলখানা না’সহ বিভিন্ন স্লোগানও দেয় তারা।

এই আন্দোলনের মধ্যে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হাসনা হেনার মুক্তির দাবিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে বিক্ষোভকারীরা।

এই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া এক শিক্ষক বলেন, আমরা নির্দোষ কলিগের মুক্তি মুক্তি চাই। শিক্ষার্থীরাও সেই অবস্থান থেকে তাদের এই শিক্ষকের মুক্তি চাইছে।

তিনি বলেন, শ্রেণিশিক্ষক হিসাবে কাউকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা হাসনা হেনার ছিল না। সেটা তিনি করেন নি। যে কাজ তার অধিকার ভুক্ত নয়, সে কাজের দায় তাকে কেমন করে চাপানো যায়।

একজন অভিভাবক বলেন, স্কুলে কিছুটা শাসন করা হয়, সেটা ছাত্র-ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখেই। সেজন্য ছাত্র-ছাত্রী আত্মহত্যার দিকে যাবে, সেটা বলা যায় না। সে কারণে স্কুল কতটা দায়ী, আর পারিবারিক দায় কতটা- সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে কিছু শিক্ষক স্কুলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন সেটা সত্য। তার জন্য হাসনা হেনা বলি কেন।

তার মেয়ে এই প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, হাসনা হেনা ম্যাডামকে আমরা অনেক ভালো হিসাবে জানি। কিন্তু কিছু শিক্ষক আছেন যারা অভিভাবককে অভিভাবকই মনে করেন না। তারা মনে করেন, তারাই সব। যে কেউ ক্ষমতায় থাকলে সে তার ক্ষমতা দেখাতে চায়।”

বিকাল ৫টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নিতে আসেন ভিকারুননিসার গভর্নিং বডিতে শিক্ষক প্রতিনিধি মুশতারি সুলতানা।

তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, “উনি আমাদের ম্যাডাম, আমরা জানি উনি কেমন। তোমরাও কী কারণে এসেছো আমরা জানি। তোমরা আন্দোলন থেকে সরে আসো।

তবে শিক্ষার্থীরা তার আশ্বাসে ক্ষান্ত না হয়ে শিক্ষক হাসনা হেনা মুক্তি পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

পরে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে দিনের কর্মসূচি শেষ করার ঘোষণ দিয়ে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইকরা বলেন , আমরা শনিবার সকাল ১১টা থেকে পুনরায় স্কুলের সামনে অবস্থান নেব। হাসনা হেনা ম্যাডাম মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবে আন্দোলন চলতে থাকবে।
___________________________


ডা. সুমিতা সাহা । প্রাক্তন শিক্ষার্থী , ভিকারুননেসা স্কুল এন্ড কলেজ।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়