Ameen Qudir
Published:2018-10-07 23:22:32 BdST
বিদ্যালয়গামী এক আতংকিত কিশোরীর উৎকন্ঠা
ডা.অসিত মজুমদার
_______________________________
প্রিয় ড্রাইভার আংকেল,
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।আমি আর পারছি না। অ্যাজমাটা তোমারই অবদান। এখন চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত নেবুলাইজার দিতে হয়। মেশিনটা দেখলেই আমার আতংক তৈরী হয়। কি যে কান্না আমার। মা দূরে থাকেন। বাবা একরকম জোর করেই আমার মঙ্গলের জন্যই আমাকে এত কষ্ট দেন। অথচ তোমরা গাড়ীগুলোকে দূষনমুক্ত রাখলে আমাকে এত কষ্ট করতে হয় না।
তোমরা আমার কষ্ট বুঝবে কবে !!!
বিদ্যালয়ে যাবার পথে তোমাদের প্রতিযোগিতা দেখলে আমার প্রতিযোগিতা করার ইচ্ছেটা নিমিষেই বিলীন হয়ে যায়। তোমাদের দেখলেই আমার চোখে মুখে আতংক এসে ভর করে।কতবার মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছি তার কোন হিসেব নেই। তোমরা এমন কেন? আমাদের পড়তে তোমরা একটু সহযোগিতা কর। তোমার মেয়েটা নিশ্চয়ই স্কুলে যায়!
প্রতিদিনই কেউ না কেউ মরছে। যেখানে সেখানে যাত্রী টেনে তোল। যাত্রী পাওয়ার জন্য তোমাদের অশুভ প্রতিযোগিতা আমাকে পাগল করে দেয়। আমি আর পারছি না। তোমাদের বেপরোয়া চলাচল যেন এক একটা মৃত্যুকূপ।
মানুষের মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু এমন মৃত্যু কি কেউ চায়? একবার ভেবে দেখ কতটুকু কষ্ট পেলে আমি পড়ালেখার সময় নষ্ট করে তোমার জন্য এই চিঠি লিখছি!
তুমি হয়তো বলবে আমার কোন দোষ নেই? আমি স্বীকার করছি। কিন্তু এও সত্য তোমরা ঠিকভাবে গাড়ী চালালে আমি এমনিতেই ঠিক হতে বাধ্য। বলতে পার আমি পরিস্থিতির শিকার। তুমি তো দেখই প্রায় রাস্তায়ই ফুটপাত ব্যবহারের যোগ্য নয়। আর ফুট ওভারব্রীজ? সিস্টেমের কারণে ওটায় আমি অভ্যস্ত হতে পারিনি ঠিকমত। তবে আমি আশা করছি তোমাদের বেপরোয়া চাল বন্ধ হলে আমি ঠিক হতে বাধ্য। প্রতিদিন জীবনবাজি রেখে স্কুলে যেতে হয়। প্লিজ, আমাকে পড়তে দাও। আমাকে বাঁচতে দাও। এ আমার আকুতি।
এবার দেখ দুর্ঘটনা সংক্রান্ত কিছু কথা। তথ্য উপাত্ত দিয়ে অনেক কিছু লিখতে পারতাম। সবই জান তুমি তবুও শুধু মূল কথাগুলো আরও একবার মনে করিয়ে দিলাম তোমাকে।
দেশে বাড়ছে পরিবহন দুর্ঘটনা। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। সড়ক, নৌ এবং রেলপথে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পাশাপাশি অনেকে হয়ে পড়েছে পঙ্গু। কিন্তু তারপরও থেমে নেই পরিবহন দুর্ঘটনা। চালকের অসচেতনতা, অজ্ঞতা কিংবা ফিটনেসহীন যানের কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যু এখন নিত্যদিনের ঘটনা।
★বেশি দুর্ঘটনার শিকার ২৬ থেকে
৩০ বছর বয়সীরা
★শহরের বাইরে এবং হাইওয়েতে বেশি দুর্ঘটনা
★হতাহতের দিক থেকে পুরুষরা এগিয়ে
★দুর্ঘটনায় এগিয়ে ঢাকা
★দেশের জেলাগুলোর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার হতাহতের দিক থেকে এগিয়ে আছে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা।
★মানে না আবহাওয়া সতর্কবার্তা
★দেশে যেসব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে তার বেশিরভাগই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা এবং দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দিক থেকে এগিয়ে আছে বাস।
★যাত্রীদের মধ্যেও যথেষ্ট সচেতনতার অভাব রয়েছে। বরিশালগামী সদরঘাটের এক যাত্রী বলেন, লঞ্চ ডুবলে পানিতে লাফিয়ে সাঁতার কেটে কূলে ওঠার চেষ্টা করব। তাছাড়া জীবন-মরণ সবই আল্লাহর হাতে। তিনি চাইলে বাঁচব না চাইলে মরব।
★ঝুঁকিপূর্ণ নৌযানের সংখ্যা বাড়ছে হাওরাঞ্চলে
★বেশিরভাগই পথচারীর সঙ্গে সংঘর্ষজনিত দুর্ঘটনা
★মানে না আবহাওয়া সতর্কবার্তা
প্রায় প্রতিবছর ঝড়ের কবলে পড়ে লঞ্চ বা ট্রলার ডুবে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। এর অন্যতম কারণ সঠিক সময়ে আবহাওয়াবার্তা না পৌঁছা এবং চালকদের বার্তা সম্পর্কে উদাসীনতা।
★লাইসেন্সহীন চালক চার লাখ, বৈধ নয় লাখ
সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে লাইসেন্সবিহীন পরিবহন চালকের সংখ্যা চার লাখের বেশি। বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা তিনগুণ।
★রেল ও নৌদুর্ঘটনার তুলনায় এগিয়ে আছে সড়ক দুর্ঘটনা।
তোমারই স্নেহের
একজন নবজাতক কিংবা একজন আতংকিত কিশোরী
______________________________
ডা.অসিত মজুমদার
MBBS, CCD (BIRDEM), Steno Diabetes Course (Denmark)
FCPS (Surgery, Part-2)
Senior Medical Officer
Bangladesh Institute of Health Sciences (BIHS) & Hospital
125/1 Darus Salam, Mirpur, Dhaka-1216
Cell: +88 01712 894 832
Email: [email protected]
আপনার মতামত দিন: