Ameen Qudir

Published:
2018-10-02 22:41:19 BdST

কেন ব্রেস্ট ক্যান্সার? পুরুষেরাও ব্রেস্ট স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হলে চিকিৎসকের কাছে যান


লেখকের ছবি

 

ডা:নাহিদ ফারজানা
________________________________

ব্রেষ্ট ক্যান্সার বাংলাদেশে আগের চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে।আগে ৪০ এর কম বয়সি রুগী বিরল ছিলেন, আর আজ ১৭ বছরের বালিকাও এই রোগের করুণ শিকার হয়।২০-৩০ বছর বয়সের মাঝে আমরা ব্রেষ্ট ক্যান্সারের রুগী অনেক পাই।
কেন বাড়ছে ব্রেষ্ট ক্যান্সার?

১. প্রথমেই দায়ী করা যায় জন্মনিয়ন্ত্রণকারী পিল, ইনজেকশন, চামড়ার পিল ইত্যাদি কে। এগুলোর মাঝে থাকে ইষ্ট্রোজেন হরমোন যা ব্রেষ্ট ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
২. দেশে পাশ্চাত্যের খাবারের প্রচলন হওয়া... ফাস্টফুড, জাংক ফুড, কোল্ড ড্রিংক, বাইরের ভাজা-পোড়া(এগুলোতে খারাপ চর্বি প্রচুর পরিমাণে থাকে)।এছাড়া খাসীর মাংস, অতিরিক্ত গরুর মাংস(অর্থাৎ রেডমিট),বড় চিংড়ি,পাঙ্গাস মাছ,চিপ্স,প্যাকেট জ্যুস ইত্যাদিও ক্ষতিকর। রান্নায় তেল বেশি খাওয়া, পুরানো তেল ব্যবহার করা খুব খারাপ।
৩. মোটা মহিলাদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া।শরীরের মেদে ইষ্ট্রোজেন হরমোন এসট্রাডিওল নামে লুকিয়ে থাকে এবং সময়মত ছোবল মারে।
৪. বইপত্র অনুযায়ী, মাসিক অল্প বয়সে আরম্ভ হয়ে অনেক বয়স পর্যন্ত চললে, ১ম সন্তান বেশি বয়সে জন্মালে, সন্তান না থাকলে ব্রেষ্ট ক্যান্সারের চান্স বেড়ে যায়।।কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ রুগী-ই অনেক ছেলে-মেয়ের মা, অল্প বয়সে বিয়ে ও সন্তান হয়েছে।কাজেই এই থিওরি এখানে মেলেনা।
৫. আমার নিজের মনে হয়, অপুষ্টি আমাদের দেশে ব্রেষ্ট ক্যান্সারের জন্য একটা দায়ী ফ্যাক্টর হলেও হতে পারে।কারণ আমরা মহিলারা সুষম খাবার খুব কম খাই।চীনে একসময় খাদ্যনালীর ক্যান্সার বেশি হওয়ার কারণ ছিল অপুষ্টি।নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিৎ করার পরে সেখানে ক্যান্সারের হার অনেক কমে যায়।
৬. সিগারেট,বিড়ি, পানের সাথে সাদা তামাক,জর্দা,গুল ইত্যাদির ব্যবহার খুব বিপদজনক।
৭. মা-খালা-নানী-দাদী-ফুপু-কাজিনদের ব্রেষ্ট বা ওভারির ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে রিস্ক একটু বেড়ে যায়।
৮. বিড়ি/সিগারেট / মদ খাওয়া
৯. স্ট্রেসফুল লাইফ


ব্রেষ্ট ক্যান্সারের লক্ষণ:
১. সবচেয়ে বড় সমস্যা এই যে, সবাই ব্যথাকে গুরুত্ব দেন, ব্যথা হলে ছুটে আসেন।ব্যথা ছাড়া কোন চা
কা থাকলে তা নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা হয়না।অথচ ৯৫%মানুষের কাছে এই ক্যান্সার আসে ব্যথা বিহীন অবস্হায়।
২. ব্রেষ্টে চাকা অনুভূত হলে, তাতে ব্যথা থাকুক আর না থাকুক
৩. বগলে কোন চাকা অনুভূত হলে,
৪. নিপল(বোঁটা)থেকে আপনা আপনি কিছু বের হলে
৫. নিপল ভিতরে ঢুকতে শুরু করলে
৬. নিপল ও তার চারিপাশের কালো স্হানে ঘা দেখা দিলে

এগুলোর ১ টি লক্ষণ ও যদি দেখেন, সাথে সাথে ভাল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করবেন।তবে এই লক্ষণগুলো আরও অনেক কারণে হতে পারে।চিকিৎসক মূল কারণ খুঁজে বের করে চিকিৎসা দিবেন।

 

প্রাথমিক অবস্হায় চিকিৎসা করলে রুগী সম্পূর্ণ সুস্হ হয়ে যান। তাই...
১. সপ্তাহে ১ দিন নিজের ব্রেষ্ট ও বগল পরীক্ষা করুন,
২. পিরিওড শুরু হওয়ার ৭ দিন পরে একবার ব্রেষ্ট ওবগল চেক করুন
৩. ৬ মাসে ১ বার বিশেষজ্ঞকে দিয়ে চেক আপ করুন
৪. ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা বছরে ১ বার ম্যামোগ্রাম, ৪০ এর নিচে বয়স হলে বছরে ১ বার আলট্রাসনোগ্রাম করুন।
৫. ক্ষতিকর খাবার বাদ দিয়ে ভাত, রুটি,শাকসব্জি,ফল,দুধ,ডিম, অন্যান্য স্বাস্হ্যসম্মত খাবার পরিমাণ মতো খান।
৬. জন্মনিয়ন্ত্রনের জন্য স্বামী পদ্ধতি গ্রহণ করলে ভাল হয়।
৭. মেদমুক্ত থাকুন, যেসব কারণে এই রোগ হতে পারে, তা হতে দূরে থাকুন।

অক্টোবর মাস কর্কটরোগ (ক্যান্সার) বিষয়ক সচেতনতার মাস।
ব্রেষ্ট ক্যান্সার ৯৯.৫ ক্ষেত্রে
মহিলাদের হয় বটে, বাকি রইল
.৫%। যত ব্রেষ্ট ক্যান্সারের রুগি আছে,তার .৫% পুরুষ।

 

অনেক পুরুষের একটি বা দুইটি ব্রেষ্ট স্বাভাবিকের তুলনায় বড় হতে পারে। এমতাবস্থায়, ভাল সার্জারি বিশেষজ্ঞের শরনাপন্ন হতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যার নাম "গাইনিকোম্যাসিয়া" । ডাক্তার ইতিহাস শুনে,হাতে পরীক্ষা করে, ইনভেস্টিগেশনের মাধ্যমে নিশ্চিৎ করবেন এটা গাইনিকোম্যাসিয়া।তিনি রোগটির কারণ অাবিষ্কারের চেষ্টা করবেন,রুগিকে অভয় দিবেন যে এটা ক্যান্সার নয়, প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিবেন,নির্দিষ্ট সময় পরপর ফলো আপ করবেন। গাইনিকোম্যাশিয়া ক্ষতিবিহীন বটে,তবু ফলো অাপ দরকার।

পুরুষেরা সার্জনের সাথে যোগাযোগ করবেন-

১.ব্রেষ্ট ফোলা মনে হলে (ব্যথা থাক অার না থাক)
২.বগলে চাকা লাগলে
৩.বোঁটা হতে কিছু নির্গত হলে।

কোন বিষয় অবহেলা করবেন না। ভাল থাকুন।
_________________________

ডা:নাহিদ ফারজানা
২৫ তম ব্যাচ, এস,বি,এম,সি

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়