Ameen Qudir

Published:
2018-08-13 17:06:00 BdST

ভালো থাকুন, ভালো রাখুন


 


সামিয়া কালাম
__________________________________

শরীর আর মন জুড়ে ক্লান্তি। সারাদিন আসেপাশের মানুষ গুলোর খেয়াল রাখতে রাখতে নিজের খেয়াল আর রাখা হয়না। ডাইনিং টেবিলের লাইট অফ করে ঘুমাতে যাবার আগে দেখা যায় এক কাপ দুধ, চায়না মোটিফের কাপ টায় অবহেলায় পড়ে আছে। হয়তো বাচ্চাটা খেতে ভুলে গেছে। এখন তো দাঁত ব্রাশ করে আইপ্যাড নিয়ে বিজি। আর ডাকা যাবেনা। তাই ফ্রিজে তুলে রাখতে হয়। একবারো ভাবা হয়না, আচ্ছা এই এক কাপ দুধ মাইক্রোওয়েভে গরম করে আমিই নাহয় খেয়ে নেই। কাল ফ্রেশ এক প্যাক্যেট দুধ বয়েল করে দেওয়া যাবে ওদের।
ঝড়-বৃষ্টি, পলিটিক্যাল ইশু, অসুস্থতা ইত্যাকার নানা কারনে গৃহ সহকারী বা গাড়ি চালক যেদিন ডে-অফ নেয়, সেদিনের গল্প গুলো আরো অন্য রকম। সেদিন স্ট্রেস আরো বেড়ে যায়। নাস্তা, টিফিন, অফিসের লাঞ্চ, বিকেলের খাবার এর মাঝে ছুটে যেয়ে স্কুল ডিউটি। রাস্তায় ট্রাফিকের ক্যাকাফনি কান সওয়া হয়ে গেলেও, সেটাও কিন্তু মনের মাঝে স্ট্রেস তৈরি করে।বাড়ি ফিরে পরের দিনের প্রস্তুতি। স্কুলের হোমটাস্ক রেডি করতে হেল্প করা। এলো মেলো হয়ে থাকা ঘর দোর, সেটাও কি মন কে বিক্ষিপ্ত করেনা?


এভাবে দৈনন্দিনের ছন্দে চলে গৃহিণীদের সকাল-বিকেল সন্ধ্যা। কেউ কেউ টিভি সিরিয়ালের মাঝে নিজেদেরকে খুঁজে পান। হারিয়ে যাওয়া ছোট বালার প্রেম অথবা হুট করে ভালো লাগা কাউকে মিলিয়ে নেন। সেই ভালো লাগা গুলো মনের গহ্বরেই রয়ে যায়। রুটিনের চাপে, সমাজের চাপে এবং বিবেকের চাপে কোন তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিকে আমরা অস্বীকার করে বাঁচার অভ্যাস করে নিয়েছি। কিন্তু সেটা কি উচিত। একটি বিবাহিত নারী বা পুরুষের কি বন্ধু থাকতে পারেনা? হ্যা, পারে হয়তো, কিন্তু সেটা খুব মার্জিনাল ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়। আর যত জেন্ডার ইশু এবনহ ইকুয়ালিটি নিয়ে তর্ক থাকুক না কেন সমাজে একটা চলতি প্রবাদ আছে, “ছেলেতে – মেয়েতে বন্ধুত্ব হয়না।” সমাজের কথা সমাজের মানুষের কাছেই রেখে দেই। আজকাল মনে হয় বোকারা পাল্টাতে চায় সমাজ, আর বুদ্ধিমানরা পালটায় নিজেকে।


টিভি আর সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি কারো কাছে আরো জরুরী হয়ে ওঠে কিটি পার্টি, সুক্ষ ভাবে জেগে ওঠা বলি রেখাকে সাবধানে ঢেকে দেয় কন্সিলার। হাতে সময় থাকলে পার্লার থেকে ছোট একটা মাসাজ আর হেয়ার স্পা। হেয়ার লাইন পাতলা হয়ে আসছে তো, সেদিকেও নজর দিতে হয়।
আমাদের এই সব আয়োজন, কেবল কি নিজের জন্য? মনে হয় না। এই আয়োজনের মূল দর্শক আমাদের পারিপার্শিক সমাজ ব্যাবস্থা। আমাদের বন্ধু মহল এবং ক্ষেত্র বিশেষে প্রতিযোগিতায় থাকা আত্মীয় পরিজন। কিন্তু এই প্রবনতাও মনের মাঝে স্ট্রেস তৈরি করে অসম্ভব রকমের। যেটা আমরা টের পাইনা।
হাজার হাজার বছর আগে, যখন মাতৃ তান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থা ছিল, সে সময়েও নারীদের স্ট্রেস ছিল। তারা পরিবারের খাদ্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সদা চিন্তিত থাকতো। পশু শিকার, চাষাবাদ এবং নিজের গোষ্ঠীর মাঝে দৃঢ়তা
প্রতিষ্ঠায় সদা তৎপর হতে হত। দেহে স্ট্রেস হরমোন জামার সুযোগ হতো না। কিন্তু এখন দিন পাল্টেছে। জীবন যাত্রায় ভিন্নতা এসেছে। আর তাই দেহের স্ট্রেস হরমোন গুলো দেহেই বাসা বেঁধে ফেলে। তার পর শুরু হয় নানা রকম অসুখ। মনের এবং শরীরের।
স্ট্রেস হরমোন বা এর নিয়ামক গুলো বেড়ে যাবার আগেই প্রকৃতিতে মাঝে নিজেকে নিয়ে যাই এক খণ্ড মনভূমির কাছে। হ্যা মনভূমিই বটে। এ শহরকে নির্লজ্জের মত উদাম করে ফেলা হচ্ছে বৃক্ষ তরু থেকে। যে যেখানে যেভাবে পারে কেবল এক চিলতে দালান, নয়তো দোকান ঘর। তবু কোনো সবুজের ছোঁয়া ছাড়া। তাই মনভূমির খোঁজ চলতে থাকে মনের ভিতরে।


পায়ে হাঁটার জুতো, হাতে জলের বোতল। খুব বেশি দরকারে যোগাযোগের জন্য সেল ফোন। এই তিনটা জিনিস যথেষ্ট। হাঁটুন, ধীরে লয়ে হেঁটে হেঁটে আকাশ টা দেখুন। গাছের আড়াল গলে চিরল পাতার ফাঁকে ফাঁকে রোদের ঝিলিক। কৃষ্ণকলির একটা গান আছে, “ বন্ধু চল আকাশ দেখি পুরোটা চোখ খুলে...”। বিরাট ইমারতের উপরের দিকে আপনার সাজানো ফ্ল্যাট বাড়ি, সেই বাড়ির ততোধিক সুন্দর ইন্টেরিয়ার। তিন লেয়ারের পর্দা। নিয়ন্ত্রিত আলোর ল্যাম্প শেড। আকাশ কি দেখা যায় সেখান থেকে? তাই আকাশ দেখুন। জোরে শ্বাস নিন। এর পর হাঁটার লয় বাড়িয়ে দিন। কপালে, নাকের ডগায়, ঘাড়ে ধীরে ধীরে ঘাম জমুক। আপনি ধীরে ধীরে ক্লান্ত হবেন। হাঁটা শেষে মিনিট দশেক রেস্টিং টাইম। আমি জুতো মোজা খুলে ঘাসে যেয়ে বসি। দেহের সাথে পৃথিবীর একটা কন্টাক্ট হয়। এই বসুন্ধরা আমাদের ধারণ করে রেখেছে। তার সাথে জোয়ার-ভাটা, চাঁদ-সূর্যের যদি যোগ থেকে থাকে , তাহলে আমার দেহের সাথেও এই বসুন্ধরার যোগ আছে। তাই কিছুক্ষণ কেবল মাটির কাছে, ঘাসের কাছে বসি। এর পর বাড়ি ফিরে আসি।
এভাবে রোজ সম্ভাব না হলেও সপ্তাহে অন্তত চার দিন। ঘন্টা খানেক নিজেকে সময় দিন। আপনার ক্লান্তি কেটে যাবে, হতাশা গুলো নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে হবেনা, আমি নিশ্চিত।
ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

________________________

সামিয়া কালাম
প্রোডিউসার এবং আর জে
সিটি এফ এম ৯৬.০

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়