Ameen Qudir

Published:
2018-08-04 16:43:57 BdST

'সবাই এখন সব কাজ স্কুলের বাচ্চাদের দিয়ে করিয়ে নেওয়ার ধান্দায় আছে'


 

 


ডা.গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
___________________________

সবাই এখন সব কাজ স্কুলের বাচ্চাদের দিয়ে করিয়ে নেওয়ার ধান্দায় আছে। কেউ বলতেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে যাও। কেউ বলতেছে নিজের বাপের আয়ের উৎস দেখ। কেউ বলতেছে সচিবালয়ে যাও।

সবাই মজা নিচ্ছেন। সব কাজ তাহলে বাচ্চাদের। তো এই দেশে সরকার, দুদক, মন্ত্রী, পুলিশ এদের কাজ কি? আপনিও তো একটা দায়িত্বে আছেন নাকি? আপনার কাজটা আপনি ঠিকমত করতেছেন তো?

বাচ্চাদের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে না। পুলিশ, মন্ত্রী, বাস ড্রাইভার কারো বিরুদ্ধে না। লক্ষ্য করবেন এদের দাবীতে মন্ত্রীর পদত্যাগও নাই। এরা কত ম্যাচিউর! এরা বিষয়টাকে পারসোনালি নেয়নাই। এদের অবস্থান সিস্টেমের বিরুদ্ধে। সেই সিস্টেম কে চালায়? আমি আপনি আমরাই তো। তাহলে আসেন লজ্জিত হই।

বাচ্চারা যে পুলিশের লাইসেন্স দেখতে চাইতেছে এটা কোন স্থায়ী ব্যবস্থা না। এটা প্রতীকী। এটা স্রেফ ম্যাসেজ।

অনেকের স্ট্যটাস পড়ি। স্ট্যটাস পড়লে প্রায় সময় মনের ভেতরটাও পড়া যায় কিন্তু। এই যেমন চলমান কিশোর বিদ্রোহে দেখতেছি কারো মনে অহেতুক ভয়, অস্বস্তি, অশান্তি। কারো ভেতরে আবার স্বপ্ন দোল খাইতেছে। স্ট্যাটাস পড়লেই বোঝা যায় কে সুবিধাভোগী আর কে সুবিধা প্রত্যাশী। সব কিন্তু একই মূদ্রার এইপিঠ ঐপিঠ। কেউ ক্ষমতায় আছে, কেউ ক্ষমতায় যাবার জন্য লোল ফেলতেছে আর চুল ছিড়তেছে।

মজা নেওয়া বন্ধ করেন। বাচ্চারা যেটা করেছে সেটা একটা ম্যাসেজ আমাদের জন্য। আমি আপনি অথর্ব, জরাগ্রস্ত, বৃদ্ধ, অচল এটাই হলো সেই ম্যাসেজ। আমাদের কারো দাম নাই এখন এদের কাছে। এমনকি ফেসবুক সেলিব্রেটি, মোটিভেশনাল স্পীকার, ইউটিউবার, অলরাউন্ডার ক্রিকেটার কারো দাম নাই।

বাচ্চারা কি করবে তা আমি, আপনি বলার কেউ না৷

আমরা বরং নিজেরা লাইনে আসি ভাই৷ বাচ্চারা দেশ ঠিক কইরা দিবে আর আমি আপনি আংগুল চুষব, মজা দেখবো সেটা তো হবেনা।
এরা তো অনন্তকাল রাস্তায় থাকবেনা, রোদে পুড়বেনা, বৃষ্টিতে ভিজবেনা। গত পাঁচদিনে যা হইছে তা যেমন গর্বের আবার আরেক অর্থে অতীব লজ্জার বিষয়। লজ্জাটা কিসের বুঝায়া বলতে হবে? গর্ব করতেছেন ভাল কথা। লজ্জাটাও ফিল কইরেন।

(কিন্তু করতেছেন না। বড়রা কি করছেন তাইলে শুনেন। শোনেন তাইলে আমরা বড়রা কি করছি। আন্দোলনের প্রথম দিনের সন্ধ্যা। তীব্র পরিবহন সংকট। গণপরিবহন নাই। পাঠাও রাইডাররা তাদের এপ বন্ধ কইরা দিছে। একশটাকার রাস্তা দুইশ টাকা। এই হইল বড়দের কাজ।)

এখন তাহলে আমাদের করনীয় কি? আমরা কি ফেসবুকে লেখা টেখা বন্ধ করে দিব? চুপ হয়ে যাব?

ইচ্ছা হইলে লিখবেন, না হইলে লিখবেন না। ফেসবুকে লিখলেই দেশ বদলায়ে যাবে এরকম না। আবার ফেসবুকে না লিখলে দেশ উন্নত হয়ে যাবে এরকমও না। ফেসবুকিং হলো জাস্ট একটা স্পেইস। কথা বলার জায়গা। এইটা আমাদের একটা অভ্যাসও বলতে পারেন। মোড়ের চায়ের দোকানের আড্ডার মত এখানে আমরা বিশ্ব রাজনীতি, সমাজনীতি, দর্শন নিয়ে ঝড় তুলি। এটা হইল আমাদের একটা প্র‍্যাক্টিস। ফেলনাও না, সিরিয়াসও না।

আসল হইল কাজ যেটার জন্য আপনি বেতন নেন।

সবাই যার যার কাজটা ঠিক ঠাক ভাবে করেন। তাহলেই হবে। এটাই হবে এই কিশোর মাসুমদের বিপ্লবের আসল বিজয়।

আপনি ডাক্তার - হৃদয় দিয়ে রোগী দেখেন। কমিশন খাইয়েননা। খালি পয়সার ধান্দা কইরেন না। সময় দিয়ে রোগী দেখেন।
আপনি পুলিশ - আপনার ডিপার্টমেন্টে ঘুষ দূর্নীতি বন্ধ করেন।
আপনি শিক্ষক - মন দিয়ে পড়ান। ছেলেমেয়েদের যত্ন নেন।

মোটকথা সবাই যার যার কাজটা ঠিক মত করেন। সবাই ভাল থাকবে।

এখন আবার মনে কইরেন না, আমি আপনাদের জ্ঞান দিলাম। জ্ঞান না, এগুলা আসলে আত্মকথন। সেল্ফ মোটিভেশন।
__________________________

ডা.গুলজার হোসেন উজ্জ্বল ।শিল্পী ।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়