Ameen Qudir

Published:
2018-06-19 15:34:30 BdST

শহীদ বাবা কবি মাহতাবউদ্দিনকে নিয়ে ডা. রোকেয়া সুলতানার মর্মস্পর্শী লেখা


 



ডা. রোকেয়া সুলতানা
_________________

 

বাবা দিবস। কেন যে দিবসগুলি জানি না। তবে মনে পড়ে সুখ-দুঃখের শব্দগুলি ভাললাগা আর ভালবাসার অনুভূতিগুলি। আমি বোনদের মাঝে ছোট আর আদরেরতো বটেই। ক্লাস থ্রীতে যখন পড়ি, আমরা মাকে হারাই। বাবাই ছিলেন আমাদের মা এবং বাবা।
মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার বাবা রাজাকারদের সহযোগিতায় নিহত হন। সংগ্রামী এই মানুষটি সরকারি চাকুরীজীবি হলেও সাহসী ছিলেন, আপোস করেননি কখনোই উর্দূভাষার সাথে। চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালী জাতিসত্তা ও চেতনায় ছিলেন সোচ্চার- লেখনি ছিল পশ্চিমা প্রতিবাদী- সংস্কৃতি ছিল বাঙালী।

শহীদ  কবি মাহতাবউদ্দিন

কবিতা লিখে সোনার মেডেল পেয়েছিলেন সে সময়। নিজ ধর্ম পালনে ছিলেন যথেষ্ট অনুগত। আমাদের নিয়েই নামাজ আদায় করতেন পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় প্রবল বিশ্বাসী ছিলেন। বাবার লাইব্রেরী ছিল, অনেক বই ছিল তাতে যা মুক্তিযুদ্ধের সময় শেষ হয়ে যায়। সংগ্রহে ছিল ইসলামিক অনেক বই যেমন- বোখারী শরীফ, তসরিফে আশরাফী, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে ইসলাম, ইসলামিক দৃষ্টিতে নারী ইত্যাদি। এ ছাড়াও বাংলা তরজমাসহ কোরান শরীফ যা আমাদের প্রায়ই পড়তে বলতেন। এমনকি অন্য ধর্মকে জানবার জন্য শ্রীমদ্ভাগবত গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটকও ছিল। পড়তে বলতেন সবকিছু- নাটক, উপন্যাস, ভ্রমন কাহিনী, অনুবাদসহ সব।

মা হারা ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিয়ে ঘরে রাখবার চেষ্টা করতেন শুধু বই দিয়ে নয় লুডু, ক্যারাম, দাবা, ছোট্ট একটা টেবিল টেনিস ইত্যাদি অনেক কিছু যা লিখতে গেলে কষ্ট পাই। অনেক অনেক কষ্ট করেছেন আমাদের জন্য, এখন বুঝি।

বড্ড খারাপ লাগে। ইচ্ছে করে লিখতে অনেক কিছুই কিন্তু ভাল লাগে না। লাখো শহীদের মত আমার বাবার রক্তে এই স্বাধীনতা- এই লাল সবুজ পতাকা। আমরা বাবার মৃত মুখ দেখিনি। শুনেছি বেয়োনেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে শহীদ হয়েছেন। ঠাকুরগাঁও গণকবরে বাবার স্থান হয়েছে। ভালো না লাগা শব্দগুলি মনে করতে কষ্ট পাই।

তাই আর লেখা না বাড়িয়ে লাখো শহীদের সাথে আমার বাবার জন্য দোয়া চাই। দোয়া করবেন যেন দেশটা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিতেই পরিচালিত হয় অনন্তকাল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শেই।

বাবা আছেন বাংলার মানচিত্রে, বাবা আছেন বাংলার প্রতিটি স্মৃতিসৌধে, বাবা আছেন জাতীয় পতাকায়, বাবা আছেন দোয়েলের কন্ঠে, বাবা আছেন রাখালের বাঁশীর সুরে. বাবা আছেন পদ্মা-মেঘনা-যমুনায়, বাবা আছেন সাগর-গিরিতে, বাবা আছেন ভোরের নুতন রবিতে, বাবা আছেন “জয় বাংলা” ধ্বণিতে।
________________________

লেখক: মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সন্তান। সুলেখক। লোকসেবী চিকিৎসক। নিবেদিত প্রাণ পেশাজীবি নেতা। স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়