Ameen Qudir

Published:
2018-06-19 15:08:57 BdST

এই ছবিতে অামরা ডাক্তার ভাইবোন ও বাবা আছেন




মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
_____________________

জনাব আব্দুস সামাদ। আমার বাবা। সেই ষাটের দশকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড থেকে অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন।দূরদর্শী বাবা ব্যাংকিং সেক্টরের অমিত সম্ভাবনার অবারিত দিগন্তের কথা বিবেচনা করে নবীন ব্যাংকার হিসেবে নাম লেখান।এই সময় আমার মা সুফিয়া সামাদের সাথে জীবন বাঁধেন।মেধা ও সাধনায় সাফল্যের এক একটি সিঁড়ি পেরিয়ে শাখা প্রধান হলেন। মুক্তিযুদ্ধের দিনে ব্যাংকের ভল্টে রাখা চাবি আগলে রেখেছিলেন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ডামাডোলের সেই দিনে পুরো ব্যাংক তসরুপ করবার সহকর্মীদের প্রলোভন তীব্র আদর্শিক ভিত্তিভূমিতে দাঁড়িয়ে জয় করেন। বিনিময়ে তস্করেরা বাবার নতুন সংসারের সব কিছুই লুট করে,পুড়িয়ে দেয় । স্বাধীন দেশে বাবা নতুন করে নিঃস্ব হলেন।

২।আমার অ, আ,ক, খ - হাতেখড়ি হল বি এ বি এড মায়ের হাতে। উঁচু ক্লাশে উঠবার পর গণিত - ইংরেজিসহ কঠিন বিষয়গুলি সহজবোধ্য আর আনন্দদায়ক পাঠ্য হিসেবে বাবাই হাতে ধরে ধরে শিখিয়ে দেন।উচ্চ মাধ্যমিক নাগাদ ইংরেজি তাঁর কাছেই পড়েছি। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি পৃথিবীর বিশাল পাঠশালায় তিনিই পরিচয় করে তোলেন।সন্তানকে একাধারে বিজ্ঞানমনস্ক অথচ সাহিত্যসুহৃদ করবার জটিল কাজটি করেন নিপুন শিল্পীর দক্ষতায়।

২।স্কুল ফাইনাল দেয়ার সময় বাবা টাংগাইলের শাখা প্রধান ছিলেন।শহরের অন্যতম সুরম্য বাড়ি ছিল আমাদেরই। শহরের হাতে গোনা কটা গাড়ির একটি ছিল আমাদের। কিশোরমানসে আত্মসন্মান বোধ যেন অহংকারে পরিণত না হয় তার ক্ষেত্রও সচেতনভাবে তৈরী করেন।বন্ধু নির্বাচনে সবস্তরকেই সমানভাবে দেখেছেন ।

৩।মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আগামী দিনের পেশা নির্ধারণ আমার উপরই ছেড়ে দেন।চিকিৎসক হবার পর সেনাবাহিনী নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সামরিক পেশায় যোগ দিতে উৎসাহিত করেন।বলেন,সব চাকুরিই সন্মানের কিন্তু এই পেশায় সন্মানটাই আসল।সততা নিয়ে চলবার জন্য সেনাবাহিনী অন্যতম শ্রেষ্ঠ কর্মস্থল, এই বিশ্বাসে আজও তিনি আমাকে অনুপ্রাণিত করেন ।

৩।আমার ছোটবোন ডাঃ খুরশিদা সামাদ চিকিৎসকের খাতায় নাম লেখায়। বংগবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তণ অনুষ্ঠানে সম্ভবত তিনিই একমাত্র সৌভাগ্যবান পিতা যার পুত্র ও কন্যা দুজনই সংবর্ধিত হয় ।এই ছবিটি তখনই তোলা হয়।

৪।আমার অনুজ খুররম সামাদ, বুয়েট থেকে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক, পরে এম বি এ ডিগ্রি লাভ করে। সামিট পাওয়ারে তরুণ অথচ ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন ।তার এই পথচলাতেও বাবা বাতিঘর হিসেবে কাজ করেন।

৫।প্রায় তিনদশক আগে অগ্রবর্তী চিন্তায় বাবা পানির দামে ঢাকায় জমি কেনেন। আজ সবার সন্মিলিত প্রচেষ্টায় সেটি বহুতল ভবন হয়েছে। পুরো পরিবারকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়েছে।

৬। সন্তানের আবেগে নয়, চিকিৎসকের বজ্র দৃষ্টি দিয়ে দেখে বলছি বাবার চেহারায় বিগত তিনদশকে তেমন পরিবর্তন আসে নি। বাবার কখনও বড় অসুখ হতে দেখি নি। আজ বাবার বয়স ৭০ ছাড়িয়েছে। এখনও কর্পোরেট অফিস করেন।

৭।আব্বাকে প্রায়ই তাঁর বন্ধুরা জিজ্ঞেস করেন, তিনি কি সুখী। স্মিত হেসে আনন্দ আর গর্বভরা কন্ঠে বলেন,' সন্তানের সুখই, আমার সুখ! '

আজ বাবা দিবস ।তুমি আমার জীবনের রিয়েল হিরো । সুস্থতায় আর কর্মযজ্ঞে হাজার বছর বেঁচো বাবা । আই লাভ ইউ মাই ডিয়ার বাবা।

__________________________

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ।
আর্মড ফোরসেস ফুড এন্ড ড্রাগ ল্যাবরেটরির উপ অধিনায়কের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন।

এর আগে ছিলেন আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজএ ।
ওয়েস্টার্ন সাহারায় শান্তিরক্ষী হিসেবে সফলভাবে এক বছরের কাজ শেষে আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়