Ameen Qudir

Published:
2018-03-23 17:27:49 BdST

৪টি খাতে শ্রম দিয়ে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষকরা কোন খাতে বেতন পান?


 

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়ের সৌজন্যে পাওয়া সঙ্কলিত লেখা

______________________________________

বলতে পারবেন,
মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক-রা কোন খাতে বেতন পান? শুধুমাত্র ছাত্র পড়ানোর জন্য? না, আউটডোরে বেশ কয়েকশো পেশেন্ট, ইনডোরেও একশ পেশেন্ট দেখার জন্য? না কি দিনে বেশ কয়েকটা অপারেশন করার জন্য?

শুনেছি, মেডিক্যাল কলেজের প্রফেসরের বেতন আর জেনারেল কলেজের প্রফেসরের বেতন একই হারে দেওয়া হয়!

তবে, মেডিক্যাল কলেজের প্রফেসররা এত এত পেশেন্ট দেখেন, অপারেশন করেন, তার মূল্য তো অনেক। তাহলে ছাত্র পড়ানোর জন্য তাদের কোন আলাদা দক্ষিণা জোটে না তো!

জেনারেল কলেজের বিল্ডিং গুলো তো শুধুমাত্র ছাত্র পড়ানোর কাজেই ব্যবহার হয়, মেডিক্যাল কলেজে তো একটা-দুটো ক্লাসরুম ছাড়া, বিল্ডিং এর বাকী অংশ তো, প্রচুর প্রচুর মানুষের চিকিৎসারর কাজেই ব্যবহার হয়।

জেনারেল কলেজের বিভিন্ন ল্যাবরেটরি আছে, ছাত্রদের সঠিক জ্ঞানদানের জন্য। সেখানে বহুটাকা খরচা করে, মাইক্রোস্কোপ বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক পদার্থ কেনা হয়। সমাজের জন্য, ছাত্রদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য এত এত টাকা সরকার খরচ করে।
মেডিক্যাল কলেজের কোন যন্ত্রটা, বা কোন ল্যাবরেটরিটা, বা কোন রাসায়নিকটা সরকার শুধুমাত্র ছাত্র পড়াবার কাজে ব্যবহার করে?
সবই-তো কেনা হয়, রোগীদের রক্ত পরীক্ষা করবার জন্য, রোগীদের চিকিৎসা করবার জন্য। মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা ওই একই মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে, ওই একই স্লাইড ব্যবহার করে নিজেদের জ্ঞান বাড়ায়। সরকার এই বাবদ আলাদা কোন খরচা তো করে না!

মেডিক্যাল কলেজের সি.টি. স্ক্যান মেসিন, MRI মেসিন, ECG মেসিন.... যা কিছু যন্ত্রপাতি সবই তো আপনার আমার চিকিৎসার জন্য ব্যবহার হয়। সেখান থেকে ডাক্তারি ছাত্ররা শেখে।
ছাত্র পড়াবার জন্য আলাদা করে কিছু তো কেনা হয় না।
মেডিক্যাল কলেজে যতনা এই সব যন্ত্রপাতি আছে, তার চেয়ে ঢের বেশী আছে, IIT বা অন্য ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। তারা তো কোন পেশেন্টের জন্য, সেই সব যন্ত্র ব্যবহার করেনা।
কিন্তু, মেডিক্যাল কলেজের প্রতিটা যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়, পেশেন্টের চিকিৎসার জন্য। শুধুমাত্র পড়াশোনা করবার জন্য, ক'টি যন্ত্র কেনে সরকার?

এমনকি, মেডিক্যাল এর ক্যান্টিন গুলোতেও ভীড় জমায়, সাধারণ মানুষ, পেশেন্টের বাড়ীর আত্মীয়- স্বজনরা। জেনারেল কলেজের ক্যান্টিন গুলোতে শ'য়ে শ'য়ে এত মানুষের প্রবেশাধিকার আছে তো?

জেনারেল কলেজ গুলোর লাইব্রেরি গুলোর দিকে তাকান, সেখানে কত-শত গল্প উপন্যাসের বইয়ে ঠাসা। সেগুলো দরকার, তাই সরকার পয়সা খরচ করে কেনে। মেডিক্যাল কলেজের কলেজের লাইব্রেরী গুলোতে গিয়ে এই সব গল্প-কবিতার বই চেয়ে দেখবেন, কেমন হাস্যকর হয় ব্যাপারটা, বরং সেখানে শুধুমাত্র আপনার অসুখ কিভাবে ভালো করা যায় সেই সমস্ত বই-ই শুধুমাত্র রাখে। মেডিক্যাল ছাত্রদের গল্প-কবিতা-উপন্যাস পাঠের জন্য একটি বইও সেখানে পাওয়া যায় না।

একজন মেডিক্যাল ছাত্র, পাশ করার পর দুটি বছর লজ্জা জনক বেতনে যে হাড়-ভাঙা পরিশ্রম করে, এবং ধকল সহ্য করে, তার হিসাব রাখেন?

প্রায় প্রতিজন ডাক্তার, তার জীবনে যে পরিমাণ রোগ জীবাণু আক্রান্ত হন, তার হিসাব রাখেন?

এমন ডাক্তার খুঁজে পাওয়া দুস্কর, যে জীবনে টি.বি (Tuberculosis) আক্রান্ত হননি, HIV পেশেন্টের রক্ত টানতে গিয়ে সেই সূচ হাতে ফোঁটেনি, হেপাটাইটিস রুগীর অপারেশন করতে গিয়ে, ডাক্তারের নিজের হাত কাটেনি।

আরও কত বলব? শেষ হবে না।

শুধু মনে রাখুন, মেডিক্যাল কলেজের....

@ বিল্ডিং- রোগীদের চিকিৎসার কাজে লাগে
@ শিক্ষক - আলাদা করে নিয়োগ হয় না
@ ল্যাবরেটরি - রোগীদের জন্য
@ যন্ত্রপাতি - রোগীদের জন্য
@ কলেজের সামনের ফাঁকা জায়গা- রোগীর আত্মীয়দের জন্য
@ ক্যান্টিন- রোগীর আত্মীয়দের জন্য

মেডিক্যাল কলেজের প্রতিটা ইঞ্চি জমি রোগীদের জন্য, প্রতিজন শিক্ষক রোগীদের জন্য, ছাত্ররা রোগীদের জন্যই কাজ করে, ল্যাব, যন্ত্রপাতি রোগীদের জন্য।

একবার এক নন-মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে জানতে পারি, সেখানের হোস্টেলে বাইরেত কেউ ঢুকতে পারেনা। বাবা-মাও নয়। আর মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেল গুলোতে সবসময়, কারো কারো বাড়ীর আত্মীয়, দূর- সম্পর্কের আত্মীয়্রা আসেন, থাকেন, চিকিৎসা করান।

এরপর বুঝতে কষ্ট হয়, সরকার ডাক্তারি পড়ানোর জন্য, ছাত্রদের পিছনে আপনার ট্যাক্সের কতটাকা খরচা করে?
আদৌ সরকারের খরচ আছে কি? ডাক্তার উতপাদনে!
যদি থাকে, সেটা কি, অন্য স্ট্রীমের ছাত্রদের পিছনে খরচের চাইতে বেশী?

আপনার ট্যাক্সের যদি এতই মায়া হয়, যদি মনে হয়, আপনার টাক্সের টাকা সরকার বাজে কাজে (ডাক্তার উতপাদনে) ব্যয় করছে, আজ আপনি সুস্থ, পরশুদিন হঠাত অসুস্থ হলে, ট্যাক্সের হিসাব মেলাবেন, না সেই বাজে কাজে ব্যবহার করা -আপনার ট্যাক্সের টাকায় "উচ্ছন্নে" যাওয়া (আপনি তো তাই-ই ভাবেন) ডাক্তারবাবুর আছেই যেতে হবে না তো!

সরকার ডাক্তারি ছাত্রর পিছনে, আপনার ট্যাক্সের এক পয়সাও ব্যয় করেনা। সব কিছু ব্যবহার হয়, রোগীদের জন্য।

উল্টে পড়ানোর জন্য, তিন থেকে পাঁচ বছর বন্ড নিয়ে নেয়। চাকরী করতে বাধ্য করা হয়। নিরাপত্তা ছাড়া। বয়স হলে, চাকরি থাকে ইস্তফা দিতে চাইলে, তাও গ্রহন করেনা। অসুস্থ শরীরে ৬৫-৬৮-৭০ বছর পর্যন্ত চাকরি করতে বাধ্য করে।
ক্রীতদাস রাও ত এতটা পরাধীন নয়!

আপনার ট্যাক্সের হিসাবটা, এই আর্থিক বছরে বুঝেশুনে করবেন। *** সংকলিত ***।

___________________________

সংকলিত এই লেখাটি প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়ের সৌজন্যে পাওয়া।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়