Ameen Qudir

Published:
2018-02-20 01:39:50 BdST

রোগী জানাল: ভার্সিটিতে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে পারি নি: ৩ লাখ টাকা চায়




 

ডা. শাহরিয়ার ফারুক অনীক

______________________________

প্রতি সোমবারের মত আজও বিএসএমএমইউ বহি:বিভাগে রোগী দেখছি। কয়েকজন রোগী দেখার পর ১৮-১৯ বছর বয়সের দুজন ছেলে রুমে ঢুকলো। দেখেই বুঝা যায় ছেলে দুজন গ্রাম থেকে এসেছে।
জিজ্ঞাসা করলাম ‘কি অসুবিধা?’
বলল, ‘আংকেল, একটু সমস্যায় পড়ে এসেছি’।
।। কি সমস্যা? বলেন..
একজন বলতে শুরু করল -
আংকেল, আমার বাড়ি পাবনা জেলার এক গ্রামে, আর ওর বাড়ি সিরাজগন্জ এ (সাথের জনকে দেখিয়ে বলল), আমরা এবার এইচ,এস,সি পাশ করেছি। ভর্ত্তি পরীক্ষা দিয়েছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আর ময়মনসিংহের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়-এ। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ তে মেধা তালিকায় ৪৭৫ তম হয়েছি, আসন সংখ্যা ৫৫০।কিন্তু ভর্ত্তি হতে পারিনি।


।। কেন ভর্ত্তি হতে পারেননি?
।। আংকেল, ভর্ত্তির জন্য আগে কর্তৃপক্ষ বিষয় ঠিক করে দেয় তারপর ভর্ত্তি হতে হয় কিন্তু আমাকে ওরা বিষয় ঠিক করে দেয়নি।
।। কেন ঠিক করে দেয়নি?
।। আংকেল, তিন লাখ টাকা দিতে বলেছিল। আমার পরিবারের পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই আর ভর্ত্তি হতে পারিনি।
।। এত টাকা কেন দিতে বলেছে? ভর্ত্তি ফি তো এত টাকা হওয়ার কথা না!


।। আংকেল, এইটা ভর্ত্তি ফি না, এই টাকা দিতে হয় কর্তৃপক্ষ আর ছাত্র নেতাদের। মেধা তালিকায় যারা প্রথম পন্চাশ জনের ভিতরে থাকে তাদের টাকা লাগেনা, বাকিদের লাগে, না হলে ওয়েটিং লিস্ট থেকে যারা টাকা দেয় তাদের ভর্ত্তি করায়।
।। বলেন কি ! আগে তো এরকম কখনও শুনিনি।
।। আংকেল, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও ওয়েটিং এ ছিলাম। সেখানেও টাকা দিতে পারিনি বলে ভর্ত্তি হতে পারিনি।


অনেকটা বিষ্ময় নিয়ে তার সাথে আসা ছেলেটির দিকে তাকালাম। জানতে চাইলাম তার বন্ধু ঠিক বলছে কিনা। বলল -
।। জি আংকেল, ঠিক বলছে। আমিও ময়মনসিংহ ত্রিশালের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় ছিলাম। কিন্তু ‘ওরা’ আমার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চেয়েছিল। আর এজন্য আমিও ভর্ত্তি হতে পারিনি।

আমি আর আমার সহকর্মী ডা: মিলন অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। এই দেশের নাগরিক হওয়ার জন্য অথবা অজানা কোন কারনে ছেলেদুটোর সামনে নিজেকে ততক্ষণে খানিকটা অপরাধী মনে হতে লাগলো। কিছুটা বিব্রত হয়েই জিজ্ঞাসা করলাম-
।। আমি আপনাদের কি সাহায্য করতে পারি? বলেন......
।। আংকেল, এখন আমাদের আবার সামনের বছর পরীক্ষা দিতে হবে, আর এবার প্রথম পন্চাশ জনের ভিতর থাকতে হবে। আরও অনেক পড়শোনা করা দরকার। গতবার অনেক টাকা খরচ করে কোচিং করেছিলাম, এবার আর বাড়ি থেকে কোচিং এর জন্য টাকা দিতে পারবেনা। কিন্তু সমস্যা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও ভর্ত্তি হতে পারিনি - এই জন্য আর পড়তে ইচ্ছা করেনা, খুব হতাশা লাগে, খুব মন খারাপ লাগে। আমাদের এমন কোন ঔষধ লিখে দেন যেন একটু ভাল করে পড়ালেখা করতে পারি। ....
খানিকটা চাপা ক্ষোভ আর বিব্রত মনে মাথা নীচু করে রোগীর টিকেটে কিছু একটা লিখতে শুরু করলাম।......
আমি জানি ফেসবুকে আমার এই লেখায় কারও কোন উপকার হবেনা, কোন অনিয়ম পাল্টাবেনা। কিন্তু এই অনিয়মের কথা সবার সামনে নিয়ে এলে হয়তো এক সময় এর বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নেয়া হবে। আমার মতো একজন ভীতু- দুর্বল মানুষের কাছে এর চেয়ে বেশি আর কি আশা করা যায়....!

________________________________

 

Image may contain: Shahriar Faruque Anik, text

ডা. শাহরিয়ার ফারুক অনীক , সুলেখক। Directorate General of Health Services - DGHS Bangladeshএ কর্মরত। বর্তমানে বিএসএমএমইউতে উচ্চশিক্ষারত।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়