Ameen Qudir

Published:
2018-01-05 18:48:23 BdST

পালা করে রাত জেগে এক মা’কে বাঁচালেন চিকিৎসকেরা


 

 

 


ডেস্ক রিপোর্ট

_____________________

রোগীকে বাঁচাতে পালা করে রাত জাগলেন চিকিত্সকেরা। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা এই মানবিক নজির দেখালেন বিশ্ববাসীকে।

বিরল রোগ— ‘ফন ভিলেব্রান্ট ফ্যাক্টর ডিজিজ টাইপ-টু’তে আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা ঈষিতা বিশ্বাস মণ্ডলের অস্ত্রোপচার করলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিত্সকেরা। মা এবং সন্তান, দুজনেই সুস্থ। সাম্প্রতিক অতীতে এই অতিবিরল রোগে আক্রান্ত কোনও মহিলার অস্ত্রোপচার করে সন্তানকে আলো দেখানোর ঘটনা মনে করতে পারেননি।

 

শহরের প্রবীণ চিকিত্সকদের বড় অংশই। ডাক্তারির ছাত্রদের পড়ানোর পাশাপাশি এই সাফল্যের কাহিনি আন্তর্জাতিক জার্নালে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আর বুধবার সন্তান কোলে বাড়ি যাওয়ার সময় ঈষিতা বলেন, ‘‘অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে জানতাম, না-ও ফিরতে পারি। মা হয়ে বাড়ি ফিরছি। আমার পাশে রাত জেগেছেন চিকিত্সকেরা! এমন হবে ভাবতেও পারিনি।’’ ঈষিতার বাবা বিমল আর মা ঝরণা তখন
অঝোরে কাঁদছেন।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ফন ভিলেব্রান্ট ফ্যাক্টর ডিজিজ টাইপ-টু’ অতিবিরল, জিনঘটিত রোগ। ‘টাইপ-টু’ আক্রান্তদের শরীরে কোথাও কেটে বা ছড়ে গিয়ে রক্তপাত শুরু হলে তা থামে না। চিকিত্সকদের একাংশের মতে, সন্তানের জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে রোগীর প্রাণ সংশয়ের সম্ভাবনা থাকে। ফিনল্যান্ডের চিকিত্সক এরিক অ্যাডলফ্ ফন ভিলেব্রান্ট এই রোগ চিহ্নিত করেছিলেন।

উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার বাসিন্দা ঈষিতা এই রোগে আক্রান্ত। তা ধরা পড়েছিল অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়। চলছিল চিকিত্সা। মাড়ি থেকে রক্তপাত শুরু হলে থামত না। বছর তিনেক আগে বিয়ে হয় তাঁর।

স্ত্রীরোগ বিভাগের অধ্যাপক তপন নস্করের তত্ত্বাবধানে ১৪ ডিসেম্বর ভর্তি করানো হয়েছিল ঈষিতাকে। স্ত্রীরোগ বিভাগ ছাড়াও ‘ইনস্টিটিউট অফ ইমিওনোহেমাটোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন’ (আইআইএইচবিটি) এবং হেমাটোলজি বিভাগ পরামর্শ করে চিকিত্সা শুরু করে। তবে মেডিক্যাল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়, ‘সিজার’ করা যাবে না। তাতে রক্তপাত হয়ে প্রাণসংশয় হতে পারে। তপন জানান, কোনওভাবে ‘নর্মাল ডেলিভারি’ করানো যাচ্ছিল না। তারমধ্যেই শুরু হয় রক্তক্ষরণ। তখন দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত হয়।


চিকিৎসকেরা জানান, রক্তের প্লাজমা থেকে ‘ক্রায়ো প্রেসিপিটেট’ (রক্ত জমাট বাঁধার একাধিক প্রোটিনের সমন্বয়) সংগ্রহ করে রেখে দেওয়া হয় মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। তারপর স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে রোগীকে দেওয়া হলে তা ‘ফ্যাক্টর-এইট’কে সক্রিয় করে রক্ত জমাট বাঁধার কাজ করে। প্রসঙ্গত, রক্তের উপাদানে জমাট বাঁধার যে ১৩টি ফ্যাক্টর রয়েছে, তার মধ্যে ‘ফ্যাক্টর-এইট’ প্লেটলেটের সঙ্গে মিশে গিয়ে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ২৩ ডিসেম্বর অস্ত্রোপচারের আগে ৬ ইউনিট, পরে এক সপ্তাহ ধরে মোট ৭৬ ইউনিট ‘ক্রায়ো প্রেসিপিটেট’ দেওয়া হয় ঈষিতাকে। সে মাত্রা ঠিক করে দেয় হেমাটোলজি বিভাগ।

 

তপন বলেন, ‘‘প্রথমে খুব চিন্তিত ছিলাম, ওঁকে বাঁচাতে পারব কি না। সকলে মিলে চেষ্টা করে সাফল্য পেয়েছি। ছাত্র এবং শিক্ষক জীবনে এমন রোগীকে চিকিত্সার অভিজ্ঞতা নেই।’’ হাসপাতালের অধ্যক্ষ তপন লাহিড়ীর কথায়, ‘‘আমার দীর্ঘ চিকিৎসক জীবনে এমন রোগীর দেখা পাইনি। মেডিক্যালে এমন ঘটনা এই প্রথম।’’


আইআইএইচবিটি’র চিকিত্সক প্রসূন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দারুণ কাজ। অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে সাফল্য এল।’’ এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন হেমাটোলজি বিভাগের সিদ্ধার্থ রায়ও। প্রবীণ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বৈদ্যনাথ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘অভিনন্দন। দেশে এমন রোগী হাতে গোনা। তবে আমার দীর্ঘ চিকিত্সক জীবনে এমন রোগীর সন্তান হতে দেখিনি।’’

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়