Ameen Qudir

Published:
2017-11-16 18:13:51 BdST

"প্রথম বাচ্চা? : জ্বী, কিন্তু বাচ্চা নষ্ট করবো "



বাংলাদেশের বাইরের এক পত্রিকার সৌজন্যে পাওয়া এক ভুক্তভোগীর প্রতিকী মডেল ছবি

 

ডা. মিথিলা ফেরদৌস

________________________________


ইন্টার্ন শেষে ঢাকা আসলাম, উদ্দেশ্য উচ্চশিক্ষা আর বি সি এস এর প্রিপারেশান নেয়া।সেই উদ্দেশ্যে বিএসএমএমইউ এর লাইব্রেরি তে পড়তে যেতাম।কিন্তু বেকার ছিলাম।বাসা থেকে টাকা পাঠাতো তা দিয়ে চলতাম।ক্লিনিকে চাকরী খুব অপছন্দ ছিল।দুই জায়গায় চেষ্টা করেছিলাম।কন্টিনিউ করতে পারিনি।একজন পুরান ঢাকায় এক ঔষধের দোকানে বসতে বললেন।ভাবলাম বসেই দেখি।ডাক্তারি তো ভুলেই যাচ্ছি।

 

একটা ফার্মেসীতে সন্ধ্যায় বসা শুরু করলাম।বিচিত্র কারণ আমার রুগী ভাগ্য অনেক ভাল।প্রথম দিনই ৬ টা রুগী পেলাম।দোকানদারকে অবশ্য আগেই বলা ছিল।তবুও দোকানদারও অবাক বলে," এর আগে অনেকেই বসেছে কখনও এমন হয়নাই।"

আমার আটদিনের চেম্বার জীবনে,এভারেজ ১০ টা করে রুগী পেতাম।যা খুব অপ্রত্যাশিত ছিল।এর মধ্যে দুই তিনটা ঘটনা আমার খুব মনে পরে।
একদিন এক ১৪/১৫ বছরের কিশোর আসলো।পোষাক আশাকে স্পষ্ট দারিদ্র্যতার ছাপ।জিজ্ঞেস করলাম
: 'কি করো?'
: হোটেলে কাজ করি।(চেম্বারের পাশেই নামকরা সব বিরানির হোটেল)।
খুব মন খারাপ হলো। চিকিৎসা দিয়ে,যাবার সময় বললাম,
: শুনো ভিজিট টা ফেরত নিয়ে যাবা।
(দোকানদার ভিজিট নিয়ে রুগী ঢুকাতো)
ছেলে হুট করে পিছন ফিরে,চোখ মুখে দৃঢ়তা।
:আপা আমার ইনকাম কিন্তু ভাল।

বলেই বের হয়ে গেলো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।পরে দোকানদার যখন টাকা দিচ্ছিলো,দেখলাম ছেলে টাকা না নিয়েই চলে গেছে।ওই ছেলে পরে একটা রুগীও পাঠাইছিল।
আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ একটা ঘটনার মধ্যে এইটা একটা।একটা এত কম বয়সি প্রায় হতদরিদ্র ছেলের মধ্যে,আত্মপ্রত্যয় আর কৃতজ্ঞতা বোধ যা শিক্ষিত তথাকথিত ধনী ব্যাক্তিদের মধ্যে অনুপস্থিত।

একবার এক কমবয়সী মেয়ে আসলো।প্রেগন্যান্ট। সাথে স্বামী অনুপস্থিত।একটু অবাক হয়ে বললাম,
: প্রথম বাচ্চা?
:জ্বী।কিন্তু বাচ্চা নষ্ট করবো।
চমকায় উঠি।
:কেন?
:আমি বিবাহিত নই।
: বিয়ে করে ফেলবেন অসুবিধা কি?কিন্তু বাচ্চা কেন নষ্ট করবেন?(যুগের সাথে তাল মিলিয়েই পরামর্শ দেই)।

:বিয়ে করবেনা আমাকে কোনদিন সে।(চোখে অশ্রু টলটল করছে।)আমার মনটাও খারাপ হয়ে গেল।জিজ্ঞেস করলাম
: কেন?
:সে আগেই বিবাহিত ছিল।আমি জানতাম না।

আমি কি ডিসিশন দিবো বুঝে উঠতে পারিনা।আমি নিজেও তখন খুব একটা ম্যাচিউর না।
এরপর একদিন জানায় গেল,সে বাচ্চা নষ্ট করে ফেলেছে।বেশ খুশি সে।কি আর বলবো তাকে।অসহায় বাচ্চার অসহায় মা।

লাস্ট যে ঘটনা তাতেই আমি চেম্বার ছাড়তে বাধ্য হই।একদিন বেশ মাস্তান টাইপ কয়েকজন আসলো।
আমাকে তাদের বাসায় যেতে হবে,রুগি অসুস্থ চেম্বারে আসতে পারবেনা।
আমি বললাম,
:রোগিণী বেশি অসুস্থ হলে,হাসপাতালে নিয়ে যান।আর চলার মত হলে আমার কাছে আনুন।
তাদের ভাষ্যমতে,রুগী বেশি অসুস্থ না,কিন্তু সে চেম্বারেও আসবেনা।বেশি টাকা দিয়ে হলেও আমাকে যেতেই হবে।টাকা নিয়ে আমার জীবনে কোন মাথা ব্যাথা ছিল না।তাই আমি বলে দিলাম,
:আমি যেতে পারবোনা অন্য কাউকে দেখান।

এর মধ্যে দোকানদার এসেও আমাকে ফাপড় দিলো,তারা নাকি খুব প্রভাবশালী। এই প্রভাবশালী কথাটা আমার রক্তে আগুন ধরায়।আমি ব্যাগ গুছায় দোকানদারকে বললাম,
: আমি কাল থেকে আর আসবোনা।

আমার নিজের সন্মানবোধ,আমার নিজের সিকিউরিটি আমার নিজেকেই এনশিউর করতে হবে।
এরপর দোকানদার অনেক ফোন করেছিল,আর যাইনি।এই জগতে এসে কত মিশ্র মানুষ যে পেয়েছি।কাউকে মনে রেখেছি,শ্রদ্ধার সাথে,কাউকে ঘৃনার সাথে।

 

______________________________

 

Mithyla Ferdous's Profile Photo, Image may contain: 1 person, ocean, outdoor, water and closeup

 

 

ডা. মিথিলা ফেরদৌস। সুলেখ ক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়